কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে আছে লস অ্যাঞ্জেলেস। পরিস্থিতি সামাল দিতে ন্যাশনাল গার্ড এবং মেরিন কর্প মোতায়েন করে আগুনে যেন উল্টো ঘি ঢেলে দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার দাবি, লস অ্যাঞ্জেলেসকে বিক্ষোভকারীদের সহিংসতা থেকে মুক্ত করতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। তবে স্থানীয়রা প্রেসিডেন্টের উদ্যোগকে ভদ্রভাবে প্রত্যাখ্যান করছেন।
লস অ্যাঞ্জেলেসের সাম্প্রতিক অস্থিরতায় লিটল টোকিও এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এলাকাটির দোকান ও রেস্তোরাঁগুলোতে ইংরেজির পাশাপাশি অহরহ জাপানি বাক্যের ফুলঝুড়িও শোনা যায়। সেখানকার অন্তত একডজন মানুষের সঙ্গে কথা বলেছে রয়টার্সের প্রতিনিধি। তাদের সবারই বিশ্বাস, সেনা মোতায়েন করায় বিক্ষোভের তেজ বরং বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা সুলিয়েতি হাভিলি বলেছেন, ন্যাশনাল গার্ড ও মেরিনদের পাঠিয়ে প্রেসিডেন্ট কেবল পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করেছেন। এতে বিক্ষোভকারীরা উল্টো আরও ক্ষেপে গেছে। আমাদের কমিউনিটি রক্ষায় তারা কোনো কাজেই আসছে না। ২৫ বছর বয়সি হাভিলি আরেক স্থানীয় বাসিন্দা নলবের্তো আগুইলারের সঙ্গে একটি পোকেমন ক্লাব পরিচালনা করেন। প্রায় ছয় হাজার সদস্যের এই সংঘ নিয়মিতই লিটল টোকিওতে খেলার আয়োজন করে থাকে। ৪২ বছর বয়সি আগুইলার বলেছেন, হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করায় সহিংসতা বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপে বিক্ষোভকারীদের কুৎসিততম রূপটি প্রকাশ পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, সেনা মোতায়েন করে লস অ্যাঞ্জেলেসের সাধারণ মানুষ ও স্থানীয় নেতাদের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করেছেন ট্রাম্প। অভিবাসন কর্মীদের অভিযানের কারণে এমনিতেই ক্ষুব্ধ ছিলেন অনেকে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সর্বশেষ পদক্ষেপে সেই ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে।
তিনি অভিযোগ করেন, অভিবাসন কর্মকর্তারা আইন মান্যকারী অভিবাসীদেরও হেনস্তা করেছেন। তবে ট্রাম্প প্রশাসন বরাবরই দাবি করে আসছে, যথাযথ নথি ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী এবং অপরাধীদেরই তারা কেবল আটক করছে। নির্বাহী আদেশ ব্যবহার করে সেনা মোতায়েন করায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের গভর্নর গ্যাভিন নিউসোম এবং লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের মেয়র ক্যারেন ব্যাজ। নিউসোম বলেছেন, বিক্ষোভ দমাতে সেনা মোতায়েন করে বারুদে বরং আগুনের ফুলকি ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে গণতন্ত্রের ওপর আঘাত করা হয়েছে বলেও সতর্ক করেন তিনি। মেয়র ব্যাজ অভিযোগ করেছেন, সেনা মোতায়েন করে ইচ্ছাকৃতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন ট্রাম্প। তাদের অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন বরং উল্টো স্থানীয় প্রশাসনের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।