ঢাকা শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫, ৭ ভাদ্র ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

শিশুদের প্রিয়জন

মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ
শিশুদের প্রিয়জন

রাসুল (সা.) শিশুদের খুব আদর করতেন। অন্যদের তুলনায় নিষ্পাপ শিশুরা তাঁর কাছে খুব প্রিয় ছিল। জীবনের কঠিন মুহূর্তেও তিনি তাদের কথা মনে রাখতেন। সর্বদা আদর-স্নেহের চাদরে তাদের জড়িয়ে রাখতেন। উবাদা ইবনে সামেত (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি শিশুদের স্নেহ করে না এবং বড়দের সম্মান করে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (মুসনাদে আহমদ : ২২৬৫৪)।

ক্রীড়া-কৌতুক : রাসুল (সা.) হৃদয়ের সবটুকু আবেগ-ভালোবাসা দিয়ে শিশুদের খুশি রাখার ও আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করতেন। শিশুদের সঙ্গ পেলে তিনি তাদের সঙ্গে ক্রীড়া-কৌতুকে মেতে উঠতেন। তাদের খেলাধুলা, ছোটাছুটি, দৌড়াদৌড়ি ও হৈ-চৈ রাসুল (সা.)-কে বড্ডো আনন্দ দিত। মন খারাপের সময় ক্রীড়া-কৌতুকের মাধ্যমে তিনি তাদের মন ভালো ও প্রশান্ত করার চেষ্টা করতেন। আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) আমাদের বাড়ি আসতেন। আমার ছোট ভাইয়ের (যার উপনাম ছিল আবু উমায়ের) একটি বুলবুলি পাখি ছিল। সে পাখিটি নিয়ে খেলা করত। একসময় পাখিটি মারা যায়। এরপর একদিন রাসুল (সা.) আমাদের বাড়ি এসে দেখেন, আবু উমায়ের মন খারাপ করে আছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘তার কী হয়েছে?’ তারা বলল, ‘তার বুলবুলি পাখিটি মারা গেছে।’ তিনি ছন্দ মিলিয়ে বললেন, ‘হে আবু উমায়ের! কী করেছে তোমার নুগায়ের?’ (সুনানে আবি দাউদ : ৪৯৭১)। রাসুল (সা.) এ কথা বলে তাকে আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করেন।

চুমু দেওয়া : আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একবার রাসুল (সা.) তাঁর নাতি হাসানকে চুমু খেলেন। সেখানে আকরা ইবনে হাসিব (রা.) বসা ছিলেন। হাসানকে চুমু খাওয়া দেখে তিনি বললেন, ‘আমি দশ সন্তানের জনক। আমি তাদের কাউকে এখনও পর্যন্ত চুমু খাইনি।’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘যে দয়া করে না, তার প্রতিও দয়া করা হয় না।’ (বোখারি : ৫৬৫১)। অন্য এক হাদিসে এসেছে, আয়েশা (রা.) বলেন, এক গ্রাম্য ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এলো। রাসুল (সা.) তাকে বললেন, ‘তোমরা কি তোমাদের শিশুদের চুমু খাও?’ সে বলল, ‘না, আমরা তাদের চুমু দিই না।’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘তোমাদের অন্তরে যদি দয়া-মায়া না থাকে, তাহলে আমার কী করার আছে?’ (বোখারি : ৫৬৫২)।

দোয়া করা : ইসলামে সালাম একটি দোয়া ও ইবাদত। ছোটরা বড়দের সালাম দেবে এবং বড়রাও দীক্ষার জন্য ছোটদের সালাম দেবে, এটাই ইসলামের শিক্ষা। আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) যখন আনসারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যেতেন, তখন তাদের শিশুদের সালাম দিতেন। তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে তাদের জন্য দোয়া করতেন।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান : ৪৫১)।

প্রাধান্য দেওয়া : রাসুল (সা.) সবসময় শিশুদের অধিকারের বিষয়ে সতর্ক ও সচেতন ছিলেন। অন্যদের তুলনায় তাদের বিষয়টি বেশি প্রাধান্য দিতেন। সাহল ইবনে সাদ (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুল (সা.)-এর কাছে একটি পানির পেয়ালা আনা হলো। তিনি তা থেকে পান করলেন। তাঁর ডানদিকে একজন বালক ছিল, সে ছিল লোকদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়স্ক। বয়োজ্যেষ্ঠরা তার বাঁ-দিকে ছিল। রাসুল (সা.) বললেন, ‘হে বালক! তুমি কি আমাকে জ্যেষ্ঠদের এটা দিতে অনুমতি দেবে?’ সে বলল, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ (সা.)! আমি আপনার উচ্ছিষ্টের ব্যাপারে নিজের ওপর কাউকে প্রাধান্য দিতে চাই না।’ এরপর তিনি তাকেই সেটা দিলেন। (বোখারি : ২৩৬৬)।

ভালোবাসার মূল্যায়ন : শিশুদের প্রতি রাসুল (সা.)-এর অগাধ ভালোবাসার কারণে শিশুরাও তাঁকে গভীরভাবে ভালোবাসত। আবদুল্লাহ ইবনে জাফর (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) যখন কোনো সফর শেষে বাড়ি ফিরতেন, তখন শিশুরা তার আগমনের পথে দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনা জানাত। একবার তিনি তার সফর থেকে এসে আমাকে তাঁর বাহনের সামনে বসালেন। এরপর হাসান ও হুসাইন (রা.)-কে বাহনের পেছনে বসালেন। তারপর আমাদের নিয়ে তিনি মদিনায় প্রবেশ করলেন।’ (মুসলিম : ৬৪২১)।

কল্যাণে করণীয় : শিশুরা সাধারণত দুষ্টু ও চঞ্চল প্রকৃতির হয়। অবুঝমনা এ শিশুদের খামখেয়ালিপনা কর্মকাণ্ডে অন্যরা রাগান্বিত হলেও রাসুল (সা.) কখনও বিরক্তবোধ করতেন না। নামাজরত অবস্থায় তারা তাঁর সঙ্গে খেলা করত। তাদের সঙ্গে তাঁর বন্ধুসুলভ ও প্রীতিপূর্ণ আচরণ দেখে অন্যরা অবাক হতো। শিশুরা দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। কোমলমাখা শাসন তাদের অবশ্যই প্রাপ্য।

তাদের সুষ্ঠু বিনোদন ও খেলাধুলার সুন্দর সুযোগ করে দিতে হবে। তারা কোথায় যাচ্ছে, কী করছে, কাদের সঙ্গে মিশছে, কাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করছে, এসব বিষয়ে সজাগ ও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। সবসময় তাদের কল্যাণ কামনা করে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে। রাগ-অনুরাগের বশীভূত হয়ে তাদের জন্য বদ দোয়া করা যাবে না। কেননা, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা নিজেদের জন্য বদ দোয়া করো না। সন্তানদের জন্য বদ দোয়া করো না। সম্পদের প্রতি বদ দোয়া করো না। এমন হতে পারে, আল্লাহর কাছে দোয়া কবুল হওয়ার সময় তোমরা বদ দোয়া করলে, আর আল্লাহ তা কবুল করে নিলেন।’ (মুসলিম : ৩০০৯)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত