প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫
বই : মানবতার বাতিঘর
লেখক : খালিদ হাসান
প্রচ্ছদ : মুয়াজ বিন মাসউদ
প্রকাশক : অনামিকা প্রকাশনী
সংযোগ : ০১৭১৫ ০৪২ ৯০৪
ইতিহাসের ধূলিমলিন পাতায় খ্রিষ্টীয় পঞ্চম ও ষষ্ঠ শতাব্দী ছিল এক চরম অস্থিরতা ও নৈতিক অবক্ষয়ের কাল। তখন মরু আরবের বুকে রহমত হিসেবে জন্ম নেন বিশ্বনবী (সা.)। প্রতিষ্ঠা করেন এমন মানবিক সমাজ, যেখানে মানুষের মাঝে বিভাজনের কোনো অস্তিত্ব ছিল না; ধর্ম-বর্ণ বা লিঙ্গ পরিচয়ের কোনো বৈষম্য ছিল না; মানুষ ত্যাগ করেছিল একে অপরকে শোষণের মানসিকতা; সেখানে ক্ষুধা, দারিদ্র্য এবং মৌলিক চাহিদার অভাব বিলীন হয়েছিল। ফলে অর্থের অভাবে কেউ চিকিৎসা ও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত ছিল না। একে অপরের প্রতি ঘৃণা, হিংসা বা স্বার্থপরতা নয়; বরং দয়া এবং সহমর্মিতাই ছিল সম্পর্কের মূলভিত্তি। সেই সমাজ ছিল সাম্যের এক নিরাপদ আশ্রয়স্থল। মহানবী (সা.)-এর সেই অমর বিপ্লবী জীবনগাথা ও আদর্শ বিষয়ে তরুণ লেখক খালিদ হাসান রচনা করেছেন ‘মানবতার বাতিঘর’।
বইটির শুরুতেই লেখক আরবের অন্ধকার যুগের এক নিখুঁত চিত্র এঁকেছেন। তুলে ধরেছেন সে সময়ের আরবের করুণ অবস্থা।
যখন গরিবরা ছিল সমাজপতিদের কাছে ধূলিকণার মতো তুচ্ছ; এতিমের চোখে ছিল অসহায়ত্বের অশ্রু আর নারীরা ছিল নিছক ভোগের বস্তু। এমন এক গুমোট পরিস্থিতিতে নবীজি (সা.)-এর আগমনকে লেখক তুলনা করেছেন ‘প্রথম বৃষ্টির ছোঁয়া’র সঙ্গে; যা শুধু মৃত জমিনকেই সজীব করেনি, বরং পৃথিবীকে নবজীবনের স্পন্দনে ভরিয়ে তুলেছিল। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে লেখক দেখিয়েছেন, নবীজি (সা.) আমাদের জন্য কতটা ব্যাকুল ছিলেন! তিনি যেন আমাদেরকে আগুনের মুখ থেকে টেনে ধরছেন আর আমরা তার হাত থেকে ছুটে যেতে চাচ্ছি। বইটির এক অংশে উল্লেখ করা হয়েছে, কীভাবে তিনি আর্তমানবতার ‘মলিন মুখে প্রাপ্তির হাসি’ ফোটাতেন। বইয়ে মক্কা বিজয়ের ঐতিহাসিক মুহূর্তটি অত্যন্ত আবেগভরে চিত্রায়িত হয়েছে। যে শহরের অধিবাসীরা একদিন নবীজি (সা.)-কে মাতৃভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল, সেই অপরাধীদের সামনে দাঁড়িয়েও তিনি পরম মমতায় ঘোষণা করলেন, ‘আজ তোমাদের প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। যাও, তোমরা সবাই মুক্ত।’
সিরাত বর্ণনার পাশাপাশি লেখক বইটিতে চমৎকার কিছু কবিতার সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন। যেমন- আবুল হোসেন আজাদের একটি কবিতার উদ্ধৃতি- ‘তুমি রাসুল সত্যের মশাল জ্বেলে/ করলে যে দূর অন্ধকার’; যা পাঠককে এক স্বর্গীয় অনুভূতিতে সিক্ত করে।
লেখক দেখিয়েছেন কীভাবে নবীজি (সা.) বংশীয় দম্ভ চূর্ণ করে ঘোষণা করেছিলেন, ইসলামে শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি বংশ নয়, তাকওয়া। আনাস (রা.)-এর দশ বছরের সেবার উদাহরণ দিয়ে লেখক নবীজি (সা.)-এর অসীম ধৈর্য ও কোমলতা ফুটিয়ে তুলেছেন, যেখানে নবীজি (সা.) তাকে কখনও কোনো কাজে ধমক দেননি। পালকপুত্র জায়েদের প্রতি নবীজি (সা.)-এর ভালোবাসা এবং সাহাবিদের প্রতি তার পিতৃসুলভ দরদের হৃদয়স্পর্শী চিত্রগুলোও বইয়ের পাতায় পাতায় জীবন্ত হয়ে উঠেছে। ৩২ পৃষ্ঠার এ বইয়ে প্রতিটি ঘটনার শেষে নির্ভরযোগ্য সূত্র যুক্ত করা হয়েছে, যা বইটির গ্রহণযোগ্যতা বহুগুণ বাড়িয়েছে। বইটির নাম ও বিষয়বস্তু অত্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ।
যারা সিরাতচর্চার পাশাপাশি মনের শক্তি ও ইতিবাচক চিন্তা বাড়াতে চান, তাদের জন্য এটি অনন্য পথনির্দেশক।