দুয়ারে কড়া নাড়ছে ২০২২ সাল। বছরের এই আগমন-প্রস্থানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে হাজারো প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির অনুভূতি। ইসলাম ফেলে আসা দিনগুলোর জন্য তওবা-অনুশোচনা এবং আগামীর জন্য কল্যাণ কামনার নির্দেশ দেয়। এ ছাড়াও নববর্ষের এ মুহূর্তকে সামনে রেখে বিশেষ কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। সেগুলো তুলে ধরা হলোÑ
মোহাসাবা বা আত্মবিচার : আত্মবিচার আত্মোন্নয়নের পূর্বশর্ত। আত্মবিচার ব্যতীত আখেরাতেও পার পাওয়া যাবে না। এরশাদ হচ্ছে, ‘হে ইমানদাররা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। আর লক্ষ্য করো, ভবিষ্যতের জন্য কী প্রেরণ করলে! আল্লাহকে ভয় করো। তিনি তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে জ্ঞাত।’ (সুরা হাশর : ১৮)। হজরত ওমর (রা.) বলেন, ‘তোমাদের কাছে হিসাব নেওয়ার আগে নিজেরাই নিজেদের হিসাব গ্রহণ করো। তোমাদের আমল ওজন করার আগে নিজেরাই নিজেদের আমলগলো ওজন করে নাও। বিচার দিবসে উপস্থাপিত হওয়ার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করো। সুসজ্জিত হও সেদিনের জন্য, যেদিন তোমাদের সামনে কিছুই অস্পষ্ট থাকবে না।’ (হিলইয়াতুল আউলিয়া : ১/৫২)।
সুন্দর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করা : মোমিনের পুরো জীবনই পরিচালিত হবে পরিকল্পনামাফিক। নিখুঁত সুন্দর পরিকল্পনা না করতে পারলে জীবনের এই স্বল্প সময়ে আখেরাতের অনন্ত জীবন সুন্দর করার পথ রচনা সম্ভব হবে না। রাসুলও (সা.) পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতেন। হিজরতের আগে তিনি হজরত আবু বকর (রা.) কে এ জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছিলেন। বর্তমানকে কাজে লাগিয়ে সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণের ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেন, ‘পাঁচটি বিষয়কে পাঁচটি বিষয় আসার আগে গনিমত মনে করো; বার্ধক্যের আগে যৌবনকে, অসুস্থতার আগে সুস্থতাকে, দারিদ্র্যের আগে সচ্ছলতাকে, কর্মব্যস্ততার আগে অবকাশকে এবং মৃত্যুর আগে জীবনকে।’ (সুনানে বায়হাকি : ১০২৪৮)।
বিগত দিনের শত্রুতা ভুলে যাওয়া : মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। জীবনে চলার পথে সুখের স্মৃতি যেমন জমা হয়, তেমনি ভারী হয় দুঃখের স্মৃতি। পৃথিবীতে সব মানুষ কাক্সিক্ষত আচরণ করে না। সে কারণে সমাজের অনেকের প্রতিই মনের মাঝে জমে থাকে রাগ-ক্ষোভ-বিদ্বেষ। ইসলাম মানুষকে অচাযিত ক্রোধ ও বিদ্বেষমুক্ত জীবনযাপনে গুরুত্বারোপ করে। আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ‘মোমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। তাই ভাইদের পারস্পরিক বিবাদগুলো মিটিয়ে দাও। আল্লাকে ভয় করো। তিনি তওবা কবুলকারী, দয়ালু।’ (সুরা হুজরাত : ১০)। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘তোমরা একে অপরের প্রতি হিংসা কোরো না। কেনাবেচার ক্ষেত্রে দালালি কোরো না। পরস্পর বিদ্বেষ রেখো না। একজন আরেকজনের ছিদ্রান্বেষণ কোরো না। নিজেরা ভাই ভাই হয়ে যাও।’ (মুসলিম : ২৫৬৩)।
গোনাহ থেকে তওবা করা : মানুষ মাত্রেই ভুল করে। গোনাহ আমাদের দ্বারা হয়েই যায়। তবে আল্লাহতায়ালার কাছে পছন্দনীয় সেই ব্যক্তি, যে গোনাহ করার সঙ্গে সঙ্গে তওবা করে ফেলে। আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা তওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা : ২২২)। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘গোনাহ থেকে তওবাকারী এমন নিষ্পাপ, যেন তার কোনো গোনাহ নেই।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৪২৫০)।