করতোয়া নদীকে বাঁচাতে শুরু হয়েছে নদীসহ সংলগ্ন খালগুলোর খনন ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। এতে করে নদীর হারানো নাব্য ও গভীরতা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি নদীর পাড়ও হয়ে উঠছে আকর্ষণীয় ও পরিবেশবান্ধব। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়িত এ প্রকল্প নতুন করে প্রাণ দিচ্ছে করতোয়াকে। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করা, দুই তীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা এবং নাগরিকদের জন্য বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি করাই এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, করতোয়া নদীর বগুড়া অংশে মোট ২৮ কিলোমিটার পুনঃখনন করা হচ্ছে। এর মধ্যে শাজাহানপুর উপজেলার মাদলা থেকে সদর উপজেলার মাটিডালি পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার খনন কাজ এরইমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে নতুন করে ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে মাটিডালি থেকে নওদাপাড়া পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার খনন কাজ চলছে। খননের পাশাপাশি নদীর ডান তীরে ৭৩০ থেকে ৭৩৫ মিটার এলাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে স্ল্যাবিং ও ওয়াকওয়ে। এতে করে বগুড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়সহ আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও রক্ষা পাবে নদীভাঙনের হাত থেকে। প্রকল্পের আওতায় নদীর দুই তীরকে করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন। এরইমধ্যে ২১ ফুট প্রশস্ত ওয়াকওয়ে নির্মাণ শুরু হয়েছে, স্থাপন করা হচ্ছে ৫৯টি সোলার লাইট, যা সন্ধ্যা নামতেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে আলোকিত করবে এলাকাটি। বসার জন্য থাকবে ১৪টি রঙিন ছাতা ও বেঞ্চ, যাতে নাগরিকরা নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। পুরো এলাকাজুড়ে বসানো হচ্ছে রঙিন টাইলস, যা এলাকাটির নান্দনিকতাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক জানান, প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে এবং চলতি বছরের মধ্যেই শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ প্রকল্প শেষ হলে করতোয়া শুধু তার হারানো যৌবনই ফিরে পাবে না, বরং বদলে যাবে বগুড়া শহরের চিত্রও। তৈরি হবে নদীকেন্দ্রিক এক আধুনিক নগরায়ণ ব্যবস্থা। জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা বলেন, করতোয়া শুধু একটি নদী নয়, এটি বগুড়ার ইতিহাস ও সংস্কৃতির অংশ। করতোয়ার হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে নদীর পুনঃখননের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষা, জলাধার সংরক্ষণ এবং জনসাধারণের জন্য একটি সুস্থ বিনোদন পরিবেশ নিশ্চিতের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন সব সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে স্থানীয় কৃষকরাও উপকৃত হবে। খননের ফলে বাড়বে পানির ধারণক্ষমতা, সময়মতো সেচ সুবিধা পাওয়া যাবে কৃষিজমিতে। এছাড়া নদীর প্রাকৃতিক জলাধার ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে মাছ চাষ ও আহরণ সহজ হবে, যা অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করবে। প্রকল্পটি নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি নগর উন্নয়ন ও জীবনমান বৃদ্ধি করবে। করতোয়ার পাড়ঘেঁষে নির্মিত আধুনিক অবকাঠামো শহরের সৌন্দর্য ও পরিবেশে নতুন মাত্রা যোগ করবে। খনন ও উন্নয়নকাজ শেষ হলে করতোয়া নদী আবারও হয়ে উঠবে উত্তরবঙ্গের প্রাণ, যার চারপাশে গড়ে উঠবে আধুনিক বগুড়া নগরী।