ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

আমিরাতে আটক বাংলাদেশিদের মুক্তির জন্য চিঠি দেবেন প্রধান উপদেষ্টা

আমিরাতে আটক বাংলাদেশিদের মুক্তির জন্য চিঠি দেবেন প্রধান উপদেষ্টা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভ করে আটক হওয়া বাংলাদেশের ২৪ নাগরিকের মুক্তির জন্য কূটনৈতিক ও আইনি প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। বন্দিদের সাধারণ ক্ষমা দিতে আবারও অনুরোধ জানিয়ে আমিরাতের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানকে চিঠি দেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। চিঠির খসড়া তৈরি করছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

গত বছর আমিরাতের আদালতে সাজাপ্রাপ্ত ৫৭ বাংলাদেশিকে সাধারণ ক্ষমা করতে আমিরাতের রাষ্ট্রপতিকে টেলিফোনে অনুরোধ জানান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ৫৭ বাংলাদেশিকে দুবাইয়ের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে আটক করা হয়। এরপর গত বছরের ২২ জুলাই তিনজনকে যাবজ্জীবন, একজনকে ১১ বছর এবং ৫৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আমিরাতের আদালত। তখন তাদের মুক্তির বিষয়ে আইনজীবী ওলোরা আফরিনকে নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ সরকার। এরপর ১১ আগস্ট পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানান, তাদের মুক্তির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা আমিরাতের উচ্চপর্যায়ে কথা বলবেন।

গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর আমিরাত সরকার ৫৭ বাংলাদেশিকে ক্ষমা ঘোষণা করে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভ করায় যে ৫৭ জন বাংলাদেশিকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার অনুরোধে তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে এসব প্রবাসীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন আমিরাতের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান।

তিনি তখন আরও জানান, গত ২৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টের। সেখানে বড় অংশজুড়ে ছিল ৫৭ জনের শাস্তি মওকুফের বিষয়টি। প্রধান উপদেষ্টা প্রেসিডেন্টকে প্রবাসী শ্রমিকদের ক্ষমা করে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট তার কথা রেখেছেন। প্রধান উপদেষ্টা গতকাল বৃহস্পতিবার সুখবরটি পান এবং জানিয়ে দেন। এরপর তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়। এই বছরের ৯ অক্টোবর প্রবাসী কল্যাণ বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানায়, এরই মধ্যে ১৮৮ জন বন্দি মুক্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন। অন্তর্বর্তী সরকার আশা করছে, খুব শিগগিরই বাকি ২৫ জনও দেশে ফিরতে পারবেন।

মন্ত্রণালয় জানায়, ‘আটক ব্যক্তিদের মুক্তির জন্য কূটনৈতিক ও আইনি পদক্ষেপ অব্যাহত রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা আশাবাদী, খুব দ্রুতই তারা দেশে ফিরতে পারবেন।’ প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের ২২ এপ্রিল আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাস অবশিষ্ট বন্দিদের মুক্তির জন্য কার্যক্রম শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি তালিকা পাঠিয়ে সহযোগিতা চাওয়া হয়।

এরপর গত মে মাসে আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ। বৈঠকে তিনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্যোগে আগে মুক্তি পাওয়া ১৮৮ জন বাংলাদেশির উদাহরণ টেনে বর্তমানে আটক ২৫ জনের মুক্তির আহ্বান জানান।

এরপরও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না হওয়ায় গত ১ জুলাই দূতাবাস থেকে নতুন নোট ভারবালের মাধ্যমে বন্দিদের বিষয়ে কনস্যুলার অ্যাকসেস চাওয়া হয়। একই সঙ্গে ৮ জুলাই আমিরাতের আইন সংস্থা হামদান আল কাবি ল ফার্মকে নিযুক্ত করা হয় বন্দিদের মুক্তির আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য। ল ফার্ম জানায়, আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে স্টেট সিকিউরিটি আইনে মামলা থাকায় মুক্তির প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ হলেও তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং অগ্রগতি বিষয়ে দূতাবাসকে নিয়মিত অবহিত করছে। এদিকে গত ৭ আগস্ট বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবুধাবিতে আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে বৈঠকে ২৫ জন বন্দির বিস্তারিত তালিকা ও সংশ্লিষ্ট নথি হস্তান্তর করেন।

বন্দিদের মুক্তি ত্বরান্বিত করতে গত ২১ সেপ্টেম্বর আমিরাতের ন্যায়বিচারমন্ত্রী আবদুল্লাহ বিন সুলতান বিন আওয়াদ আল নুয়াইমির কাছে একটি আনুষ্ঠানিক অনুরোধপত্র পাঠান প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২২ সেপ্টেম্বর আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২৫ জন বন্দির পাসপোর্ট কপি ও ভিসা নম্বর চেয়ে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে। দূতাবাস দ্রুততার সঙ্গে সবার তথ্য সংগ্রহ করে ৩০ সেপ্টেম্বর নোট ভারবাল আকারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, গত ২০ অক্টোবর সিদ্ধান্ত হয় একটি চিঠি প্রস্তুত করার। চিঠি দ্রুতই ড্রাফট করা হচ্ছে। শেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বিষয়টি সরাসরি তদারকি করছেন। ৫৭ বাংলাদেশিকে ক্ষমা করায় রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানকে ধন্যবাদ জানিয়ে গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চিঠি দেন। চিঠিতে ড. ইউনুস বলেন, সাজা বাতিল করার জন্য আপনার উদার সিদ্ধান্তে বিশেষ করে জড়িতদের পরিবার এবং বাংলাদেশের বৃহত্তর দেশবাসী, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আমাদের দেশের নাগরিকরা স্বস্তি পেয়েছে। আমরা সত্যিই আপনার সহানুভূতি গভীরভাবে স্পর্শ করেছি। আমরা সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইনের প্রতি আমাদের পূর্ণ সম্মান প্রকাশ করছি। আমাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ থেকে প্রস্থান করার আগে তাদের স্বাগতিক দেশগুলোর স্থানীয় আইন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ও শিক্ষিত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছি। চিঠিতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আপনার সদয় সিদ্ধান্তের জন্য আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। যা আমাদের জাতির মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্বের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করবে। আমরা আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করতে এবং আমাদের জনগণের পারস্পরিক সুবিধার জন্য এক সঙ্গে কাজ করার জন্য উন্মুখ। আমি সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণের জন্য আপনার সুস্বাস্থ্য, সুখ, দীর্ঘ জীবন এবং অব্যাহত শান্তি, অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধি কামনা করছি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত