‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়ের ভেতরে ফের আন্দোলনে নেমেছেন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গতকাল সোমবার সচিবালয়ের ভেতর বিক্ষোভ করেন তারা। বিক্ষোভ শেষে সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-মহাসচিব মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, মঙ্গলবার থেকে প্রতিটি মন্ত্রণালয় থেকে পৃথক পৃথক মিছিল নিয়ে কর্মচারীদের সমাবেশে আসার আহ্বান জানান।
এদিকে সচিবালয়ের ভেতরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের নামে ‘সরকারি কাজে বাধা না দেওয়ার’ আহ্বান জানিয়ে সোমবার সচিবালয়ে আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবির বিষয় নিয়ে গতকাল বৈঠকে বসে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি। বৈঠকের সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করা হবে উপদেষ্টা পরিষদের সভায়। সে পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের কোনো কর্মসূচি না দিয়ে অপেক্ষা করতে বলেন আইন উপদেষ্টা। তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারে অঙ্গীকার ছিল গুম-বিচারবহির্ভূত হত্যার বিচার করা। সেই লক্ষ্যে গুমবিষয়ক কমিশন গঠন করছে সরকার। আগামী এক মাসের মধ্যে গুম প্রতিরোধে আইন করা হবে।
এদিকে আইন উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, আইন উপদেষ্টা মন্তব্য করলেন যে, আইন পাশ হওয়ার সময় তিনি দেশের বাইরে ছিলেন। এমনভাবে মন্তব্য করলেন যে, আমি যদি থাকতাম এই আইন বাস্তবায়ন হত না। চেয়ারে বসে বড় বড় কথা বলেন, উল্টা পাল্টা কথা বলেন। দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করেন। আপনাদের উদ্দেশ্য কী? ফ্যাসিস্ট সরকার চলে যাওয়ার পর গত ১০ মাসে আমাদের মাঝে কোনো অনিয়ম খুঁজে পায়নি। তারও পরেও আমাদের মনে আগুন জ্বালানোর অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে? সেলিম বলেন, আমরা মাস্তান নই। রাজপথে গলাফাটানোর লোক আমরা নই। আমাদের কেন অশান্ত করলেন? আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার একদিনে ফ্যাসিস্ট হয়নি। এই সরকারের ভেতরেও ফ্যাসিস্ট আছে, আমরা কিন্তু চিনি। শুধু এসবি, এনএসআই, ডিজিএফআই চেনে, ব্যাপারটি এমন নয়। আমরাও কিন্তু চিনি। আপনাদের মন-মানসিকতা আমরা বুঝি।
কোরবানির ঈদ উদযাপিত হয়েছে ৭ জুন। ঈদের আগে ৫ জুন থেকে পরবর্তী ১৪ জুন পর্যন্ত টানা ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করে সরকার। ছুটির পর গতকাল রোববার কর্মদিবসে কর্মচারী আন্দোলনের নেতা সেলিম বলেন, গতকাল (সোমবার) কোনো কর্মসূচি নেই, শুধু কোলাকুলি।
সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে জারি করা অধ্যাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান বাদিউল কবীর বলেন, সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আচরণ খুবই পরিশীলিত এবং তারা খুবই আনুগত্যপরায়ণ। তাদের অহেতুক, অন্যায় ও নিবর্তনমূলক অধ্যাদেশের মাধ্যমে ক্ষেপিয়ে তোলার ব্যবস্থা করছেন। আপানারা কোনো টালবাহানা না করে এই আইন প্রত্যাহার করুন।
ঐক্য ফোরামের আরেক কো-চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন ক্যাডার সার্ভিস এর মধ্যেই আন্দোলনে নেমে গেছে। সরকার আমাদের সঙ্গে সাপলুডু খেলা খেলতেছে। আমরা মহার্ঘভাতা, পদবি পরিবর্তন, সচিবালয় ভাতা চেয়েছিলাম। এর উত্তরে আসল অভিন্ন নিয়োগবিধি। সেটা আমরা থামাইলাম। এরমাঝে আবার গোপনে গোপনে নিয়ে আসল কালো অধ্যাদেশ। এই মুহূর্তে এই ধরনের অধ্যাদেশের অধিকার তাদের নেই। আমরা ধিক্কার জানাই। যারা এর সঙ্গে যুক্ত ছিল আমরা তাদের ধিক্কার জানাই। এই সাপলুডুর খেলা বন্ধ করতে হবে।
ঐক্য ফোরামের এ নেতা বলেন, কারো সঙ্গে কথা না বলে এই কালো অধ্যাদেশ তারা গোপনে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পাস করিয়ে আনল। এই কাজের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল আমরা তাদের ধিক্কার জানাই। একইসঙ্গে ঘৃণাভরে এই সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ প্রত্যাখ্যান করেছি। সরকারকে এই সাপলুডু খেলা বন্ধ করতে হবে। আন্দোলন চলার মধ্যেই ২ জুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ‘বিশেষ সুবিধার’ ঘোষণা আসে।
সরকারি কর্মচারীদের মূল বেতনের ওপর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ‘বিশেষ সুবিধা’ দিয়ে পরের দিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করে। এই ‘বিশেষ সুবিধা’ প্রত্যাখ্যান করে নুরুল ইসলাম বলেন, বিশেষ সুবিধা ভাতার নামে একটা ফাঁকিবাজি ভাতা দিয়েছে সরকার। এটা বিশেষ সুবিধা নয়, এটা বিশেষ প্রতারণা। আমরা এই বিশেষ প্রতারণা মেনে নেব না। আমাদের কথায় গুরুত্ব না দিলে বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ ডাকতে বাধ্য হব। সমাবেশে সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-মহাসচিব নজরুল ইসলাম, নুরুজ্জামান, সোহেল রানা, হাসনাত, গোলাম রব্বানি, বিপুল উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ ভবনের নিচে মিছিল শেষে কর্মচারীরা মিছিল নিয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের দপ্তরে স্মারক লিপি দেন।