ঢাকা শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে এগিয়ে থাকবে ইরান

যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে এগিয়ে থাকবে ইরান

মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে নতুন করে ছড়িয়ে পড়া যুদ্ধ পরিস্থিতি ক্রমেই অনিশ্চয়তার দিকে এগোচ্ছে। যদিও এখন পর্যন্ত কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ ঘোষণা করেনি, তবে আকাশপথে দখলদারি, ক্ষেপণাস্ত্র ও সাইবার হামলার প্রবণতা এবং পাল্টাপাল্টি হামলা পরিস্থিতিকে চরম উত্তেজনার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এই পরিস্থিতি কেবল সামরিক দিক থেকেই নয়-রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও মানবিক দিক থেকেও মূল্যায়নের দাবি রাখে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রযুক্তিগত দিক থেকে ইসরায়েল অনেক এগিয়ে থাকলেও ইরানের রয়েছে দীর্ঘমেয়াদে প্রতিরোধ গড়ার সক্ষমতা, যুদ্ধের অভিজ্ঞতা ও বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড। দোহা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মুহানাদ সেলুম বলেন, ইসরায়েল আকাশপথে নিয়ন্ত্রণ রাখলেও ইরানের আয়তন ৭০ গুণ বড় হওয়ায় তা কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। ইরানিদের রয়েছে আত্মরক্ষামূলক শক্তিশালী প্রতিরোধব্যবস্থা, যা ইসরায়েলকে দীর্ঘ সময় ধরে চাপে রাখতে পারে। সেলুম মনে করেন, দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে ইসরায়েল পিছিয়ে পড়বে, কারণ দেশটির অর্থনীতি ইতিমধ্যেই চাপে এবং নাগরিকদের বড় অংশ বাঙ্কারে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে।

অন্যদিকে, ইরান বহু বছর ধরে যুদ্ধোন্মুখ পরিস্থিতিতে অভ্যস্ত। ১৯৮০’র দশকের ইরান-ইরাক যুদ্ধের পর থেকে তারা নানা নিষেধাজ্ঞা, চাপ এবং সন্ত্রাসী হামলার মুখেও নিজেদের অর্থনীতি ও নিরাপত্তা ব্যাবস্থা টিকিয়ে রেখেছে। তাদের রয়েছে লেবানন, সিরিয়া ও ইয়েমেনসহ অঞ্চলজুড়ে সক্রিয় মিত্র মিলিশিয়ারা। এই কৌশলগত অবস্থান ইরানকে বড় সুবিধা দিচ্ছে।

তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোহরেহ খারাজমি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সক্ষমতা সম্পর্কে অবগত এবং ট্রাম্প নিজেও দ্বিধান্বিত-কখনো বলছেন হামলা করবেন, আবার কখনো তা প্রত্যাখ্যান করছেন। খারাজমি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণেরও বড় একটি অংশ যুদ্ধ চায় না, তারা কূটনৈতিক সমাধানে আগ্রহী। তাঁর মতে, চীন, রাশিয়া, পশ্চিমা দেশগুলো এবং আরব রাষ্ট্রগুলোর যদি আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা থাকে, তাহলে আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের পথ পাওয়া সম্ভব।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টের কূটনৈতিক উপদেষ্টা আনোয়ার গারগাশও একই ধরনের মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, চলমান সংঘাত উপসাগরীয় অঞ্চলের উন্নয়ন পরিকল্পনাকে বাধাগ্রস্ত করছে এবং উত্তেজনা প্রশমন এখন সময়ের সবচেয়ে জরুরি চাহিদা। তাঁর মতে, যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে তা শুধু ইসরায়েল-ইরান নয়, বরং গোটা অঞ্চলকেই ধ্বংসের পথে নিয়ে যেতে পারে। তিনি যুদ্ধ নয়, আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান।

সার্বিকভাবে পরিস্থিতি যত দীর্ঘ হবে, ততই ইরান কৌশলগতভাবে এগিয়ে থাকবে এবং ইসরায়েলের জন্য তা হয়ে উঠবে আরও বিপজ্জনক। শান্তিপূর্ণ সমাধানে না গেলে এই সংঘাত পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।

যুদ্ধ,ইরান,মধ্যপ্রাচ্যে,ইসরায়েল
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত