ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, সমাজের প্রতিটি সদস্য যদি ধর্মচর্চা ও ধর্ম অনুশীলনে মনোযোগী হয় তাহলে অপরাধপ্রবণতা হ্রাস পাবে। ধর্মীয় মূল্যবোধ মানব চরিত্রকে উৎকর্ষের পূর্ণতায় অভিষিক্ত করে। গতকাল চট্টগ্রামের হাটহাজারী, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় তিনটি মডেল মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও দু’টি মসজিদ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইসলামিক ফাউন্ডেশন মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের অংশ হিসেবে সারা দেশে ৫৬৪টি মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করছে। এ মসজিদগুলো সে প্রকল্পের আওতায় নির্মিত হয়েছে। এ তিনটি মসজিদ নির্মাণে প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছে। ধর্ম উপদেষ্টা রাউজানের মডেল মসজিদ উদ্বোধন ও মসজিদে জুমার নামাজের আগে বয়ান করেন। উদ্বোধনী বয়ানে উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকার ১৩ কোটি টাকা ব্যয় করে এ মসজিদ নির্মাণ করে দিয়েছে। এখন মসজিদকে আবাদ রাখার দায়িত্ব এলাকাবাসীর। মসজিদভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করে সমাজের সকলকে নিয়মিত মসজিদমুখী হতে হবে। মসজিদকে সচল রাখতে হবে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে আদায় করতে হবে।’
কেননা, নামাজ সকলকে সকল প্রকার খারাপ কাজ থেকে মুক্ত রেখে মানুষের মধ্যে নৈতিকতাবোধ জাগ্রত করে, মূল্যবোধ সমুন্নত রাখে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকারের সঠিক পদক্ষেপের কারণে চলতি বছর হজ ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। দেশের বিমানবন্দরে কোনো হাজী যেমন হয়রানির সম্মুখীন হননি, তেমনি সৌদি আরবে গিয়েও কেউ বিড়ম্বনার শিকার হয়নি। কেউ হারিয়ে যায়নি বা বাংলাদেশি কোনো হাজী মারা যাননি। এছাড়া এবার স্বল্পমূল্যে কাবার কাছাকাছি স্থানে হাজীদের জন্য ঘরভাড়া নেওয়া হয়েছে। ফলে আমাদের খরচ কিছুটা কম হয়েছে এবং কিছু টাকা জমা রয়েছে। সকল হাজী দেশে আসা শেষ হলে জমাকৃত টাকা ফেরত দেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘টাকা মেরে খাওয়ার জন্য আমরা ক্ষমতায় বসিনি।’
উপদেষ্টা রাউজান মডেল মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। প্রথম দিনে মসজিদে খুতবা দেন ও জুমার নামাজে ইমামতি করেন হাটহাজারী বড় মাদ্রাসার প্রধান মুফতি মো: জসীম উদ্দিন। নামাজ শেষে অসংখ্যক মুসল্লির উপস্থিতিতে দেশ ও জাতির কল্যাণ এবং দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদ নির্মাণ করে দেওয়ায় বর্তমান সরকারের জন্য দোয়া করা হয়।
অনুষ্ঠানে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মু আ আউয়াল হাওলাদার, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আবদুস ছালাম খান ও প্রকল্প পরিচালক মো: শহীদুল আলম বক্তৃতা করেন। তিনতলা মসজিদ কমপ্লেক্সে ১ হাজার ২০০ মানুষের নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া মুর্দা গোসল দেওয়ার জায়গা, কার পার্কিং, ইমাম মুয়াজ্জিন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, এতিমখানা, ইসলামিক বই প্রদর্শন ও বিক্রয় কেন্দ্র, ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর অফিস, কিচেন ও ডাইনিং সুবিধা, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, গণশিক্ষা ব্যবস্থা, হজ বুকিং-এর ব্যবস্থা, ইসলামিক লাইব্রেরি, ইমাম শিক্ষক ও মুয়াজ্জিনের থাকার কক্ষ, গেস্ট রুম ও কনফারেন্স রুম, অটিজম কর্নার প্রভৃতি সুবিধা রয়েছে। এছাড়া এখানে মহিলাদের জন্য পৃথক নামাজের সুবিধাও রাখা হয়েছে।
সকালে উপদেষ্টা হাটহাজারী পৌরসভা এলাকার ফটিকা কডিয়ার দীঘিরপাড় এলাকায় হাটহাজারী উপজেলার মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ও মোনাজাতে অংশ নেন। এ অনুষ্ঠানে মোনাজাত পরিচালনা করেন হাটহাজারী মাদ্রাসার শায়খুল হাদিস আল্লামা শেখ আহমদ। উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রধান পরিচালক মাওলানা খলিল আহমদ কাসেমী, মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেহপুরী, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মু আ আউয়াল হাওলাদার, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আ ছালাম খান ও প্রকল্প পরিচালক মো: শহীদুল আলম প্রমুখ।
এরপর উপদেষ্টা বিকেলে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার গোডাউন এলাকায় নির্মিত মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেন। বাসস