
পুরনো ল্যাপটপ, কম্পিউটার আমদানি করা নিষেধ। এরপরও পুরনো ল্যাপটপ দেদারসে দেশে আসছে। হাতে হাতে, লাগেজে, কন্টেইনারে করে এসব ল্যাপটপ দেশে ঢুকছে। এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান সেন্টার ও আশপাশের এলাকার বাজার, মিরপুরের শাহ আলী মার্কেট ইত্যাদি বাজার ঘুরে তা চলে যাচ্ছে ক্রেতাদের ঘরে।
নিষিদ্ধ হওয়ার পরও সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর হয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে পুরনো ল্যাপটপ ও কম্পিউটার। এর বিশাল বড় বাজার গড়ে উঠেছে খোদ রাজধানীতে। বর্তমানে প্রতি মাসে ১০ হাজারের বেশি পুরনো ল্যাপটপ বিক্রি হচ্ছে, চার বছর আগেও যার পরিমাণ মাসে ছিল দুই হাজারের মতো। বর্তমানে নতুন ল্যাপটপ বিক্রির পরিমাণ মাসে ছয় থেকে সাত হাজার বলে জানা গেছে। আমদানি নিষিদ্ধ এসব পুরনো পণ্য দেশে আসাকে খাত সংশ্লিষ্টরা অশনি সংকেত হিসেবে দেখছেন। তারা শঙ্কিত, বাংলাদেশ কি পুরনো প্রযুক্তি পণ্যের ডাম্পিং স্টেশন হতে যাচ্ছে? কারণ প্রতিটি প্রযুক্তি পণ্যের একটি মেয়াদ থাকে। পুরনো পণ্যের তো মেয়াদ থাকে না। ফলে এসব পণ্য দেশ ও শিল্পের জন্য ক্ষতিকর।
রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের নবম তলা ঘুরে দেখা গেলো প্রায় সব দোকানই পুরনো ল্যাপটপের। ল্যাপটপগুলোর বেশিরভাগেরই আগমন মধ্যপ্রাচ্যের শহর দুবাই থেকে। এছাড়া সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকেও দেশে আসছে পুরনো, ব্যবহৃত ল্যাপটপ। ব্যবহৃত হলেও এসব ল্যাপটপ দেখতে প্রায় নতুনের মতো।
দোকানগুলোতে বেশি চোখে পড়ল এইচপি, লেনোভো ডেল ব্র্যান্ডের বিভিন্ন মডেলের ল্যাপটপ। অন্যান্য ব্র্যান্ডের ল্যাপটপও বিভিন্ন তাকে সাজানো আছে। তবে সেগুলো সংখ্যায় কম। ম্যাকবুকেরও দেখা মিললো কিছু কিছু দোকানে। এসব ল্যাপটপ সরাসরি দেশে না এসে ভিন্ন পথে আসছে। ফলে সরকার এসব ট্যাক্স, ভ্যাট থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পুরোনো ল্যাপটপের এই বাজারে বর্তমানে সপ্তম ও অষ্টম জেনারেশনের প্রসেসরের চালান বেশি। তবে চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ জেনারেশনের প্রসেসরের ল্যাপটপের চাহিদা বেশি। বাজার ঘুরে জানা গেল আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগের ল্যাপটপও বাজারে বিক্রি হচ্ছে। যেগুলো ইওএল (অ্যান্ড অব লাইফ) মর্যাদা পেয়ে গেছে। লাইফ টাইম শেষ হলেও এসব ল্যাপটপ চলে তবে, সেগুলো থেকে কার্বণ নিঃসরণের ঝুঁকি রয়েছে। পুরনো ব্যাটারি, চিপ স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়। অথচ এসব কেউ বিবেচনায় নিচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ রয়েছে। এই মার্কেটের বিক্রেতারা শুধু পুরনো ল্যাপটপ বিক্রিই করেন না, বরং বিভিন্ন স্তরে ওয়ারেন্টিও দিয়ে থাকে। এরমধ্যে ল্যাপটপ বিক্রির পর দোকানভেদে ১৫ দিন থেকে এক মাস পর্যন্ত রিপ্লেসমেন্ট ওয়ারেন্টি দেওয়া হয়। আর দেওয়া হয় এক বছর পর্যন্ত সার্ভিস ওয়ারেন্টি। এই সার্ভিস ওয়ারেন্টি থাকাকালে ল্যাপটপে কোনো সমস্যা হলে সেটা তারা বিনামূল্যে মেরামত করে দেবে এমন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন ক্রেতাদের। তবে কোনো যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করতে হলে সে খরচ ক্রেতাকে বহন করতে হবে। নাম ও পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে এক বিক্রেতা জানালেন, একটি ল্যাপটপ বিক্রির সময় আসলে সেটাতে অদৌ বড় কোনো সমস্যা আছে কি না তা সম্পূর্ণ বোঝা যায় না ক্রেতা যতই দেখে বুঝে কিনুক না কেন। তবে কেনার ১০-১৫ দিনের মধ্যে ধারণা করা যায় কেনা ল্যাপটপে কোনো সমস্যা আছে কি না। পুরোনো হওয়ায় ক্রেতাদের আস্থায় নিতে বিক্রেতারা মূলত এসব ওয়ারেন্টি দিচ্ছেন। শুধু মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারই নয়, এলিফ্যান্ট রোডের আশপাশের অনেক মার্কেটেই রয়েছে পুরোনো ল্যাপটপ বিক্রির দোকান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রযুক্তি পণ্যের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সভাপতি সুব্রত সরকার বলেন, পুরনো ল্যাপটপ অনেক আগে থেকে বিক্রি হয়। এখনও হচ্ছে। পুরোনো ল্যাপটপ আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য বলা হলে বিসিএস সভাপতি বলেন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা না হলে পুরনো ল্যাপটপ বিক্রি বন্ধ করা যাবে না। বাজারে বর্তমানে ৫০ হাজার টাকার নিচে কোনো ল্যাপটপ পাওয়া যায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটা ল্যাপটপ যদি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে কেনা যেত তাহলে পুরনো ল্যাপটপের বাজারটা বড় হতো না। ২০১৯ সালে বিসিএস সভাপতির (সে সময় তিনি ছিলেন মাল্টিপ্ল্যান কম্পিউটার সিটি সেন্টারের মহাসচিব) কাছে পুরোনো ল্যাপটপের বাজারের বিষয়ে জানতে চাইলে তখন তিনি বলেছিলেন, মার্কেটে পুরোনো ল্যাপটপ বিক্রি আমরা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছি। চার বছর পেরিয়ে গেছে বাজার, বিক্রি তো বন্ধ হয়নি, বরং আরও বড় হয়েছে।