
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলার ঘটনায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরসহ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে কনস্যুলেট কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় পুলিশ, মেয়র অফিস এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের আঞ্চলিক অফিসে পাঠানো চিঠিতে দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
কনস্যুলেটের দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত রোববার ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’-এর প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে কনস্যুলেটে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীসহ প্রবাসী কমিউনিটির প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। কনস্যুলেটের অনুরোধে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ আগে থেকেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, বিকাল ৫টা থেকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা কনস্যুলেট প্রাঙ্গণের সামনে জড়ো হয়ে সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন এবং অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে তারা অতিথিদের প্রবেশে বাধা দেয়, ধাওয়া করে এবং ডিম নিক্ষেপের মতো অপকৌশল ব্যবহার করে। এ সময় কনস্যুলেট ভবনের একটি কাচের দরজায় আঘাত করলে তাতে বড় ফাটল সৃষ্টি হয়।
তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং কয়েকজনকে আটক করে। কনস্যুলেট কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলের ছবি ও ভিডিও প্রমাণ হিসেবে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। পুলিশ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, প্রধান অতিথির জীবনহানি ও তাকে হেনস্তা করার উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের দলীয় পতাকাসহ কতিপয় ব্যক্তি মধ্যরাত পর্যন্ত কনস্যুলেটের সামনে অবস্থান করেন। তবে পুলিশের কড়া নিরাপত্তার কারণে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। প্রধান অতিথি নির্বিঘ্নে তার গাড়িতে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেন এবং প্রাণবন্ত মতবিনিময়, অতিথিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় এবং রাতের খাবার শেষে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া তার গন্তব্যে পৌঁছান। প্রধান অতিথি চলে যাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কনস্যুলেট জেনারেল সবাইকে এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো বিভিন্ন অপতথ্য ও প্রোপাগান্ডায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। তারা নিশ্চিত করেছেন, দুষ্কৃতকারীরা প্রধান অতিথির ধারেকাছে পৌঁছাতে পারেনি।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিসে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এ ঘটনায় দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল মঙ্গলবার দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এনসিপি জানায়, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ করছে— যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিসে জুলাই অভ্যুত্থানের নেতা এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর হামলার চেষ্টা করেছে গণহত্যাকারী ও ফ্যাসিবাদী সংগঠন আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাকর্মীরা। একইসাথে কনস্যুলেট অফিসে ভাঙচুর চালিয়ে তারা একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর সরাসরি সহিংস আক্রমণ করেছে।
এতে বলা হয়, জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগ আবারও তাদের ফ্যাসিবাদী, সন্ত্রাসী ও মাফিয়া চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। তারা শুধু জুলাই গণহত্যাকে অস্বীকার করেই ক্ষান্ত হয়নি, বরং তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে আন্তর্জাতিক পরিসরেও জারি রেখেছে। এনসিপি এই ন্যাক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং কনস্যুলেট অফিসে হামলার ঘটনায় দ্রুত তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ সকল আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি টকশো, সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা গণহত্যা ও জুলাই গণহত্যাকে স্বাভাবিকীকরণের যে অপপ্রয়াস চলছে, কনস্যুলেট হামলা, কলকাতায় আওয়ামী লীগ কার্যালয় স্থাপন ও বিভিন্ন ফোরামে অভ্যুত্থানকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে উপস্থাপন— সবই আওয়ামী সন্ত্রাসের ধারাবাহিকতা ও বৃহত্তর চক্রান্তের অংশ বলে আমরা মনে করি।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ঘটনার প্রায় ২৪ ঘণ্টা অতিক্রান্ত হলেও এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এই বিষয়ে কোনো রাষ্ট্রীয় প্রতিবাদ কিংবা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। আমরা এই বিষয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকারের সুস্পষ্ট অবস্থান ও পদক্ষেপ দেখতে চাই।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগের সহিংস কার্যক্রমের পরিপ্রেক্ষিতে এটিকে একটি ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। এছাড়া এই হামলার বিষয়ে তথ্য ও প্রমাণ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করতে অভ্যুত্থানের শক্তি প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এনসিপি।