
টাঙ্গাইলের মধুপুরের লাল মাটিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে কাসাভা (শিমলাই আলু)। যুগ যুগ ধরে কাসাভা চাষ করে যাচ্ছে স্থানীয়রা। এই কাসাভা, শিমুল বা শিমলাই আলু নামে সমাধিক পরিচিত। এক সময় গ্রামের মানুষরা ক্ষুধা নিবারণের জন্য এ আলু প্রচুর খেত। সুস্বাদু থাকায় পেট ভরে খেত স্থানীয়রা। জমির আইল, বাড়ির আশপাশের পতিত জমিতে, আনারস বাগানের আইলে, বাড়ির আশপাশে প্রায় বাড়িতেই সেকালে মধুপুর উপজেলার বৃহত্তর অরণখোলা, আউশনারা ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণে চাষ করা হতো। ধীরে ধীরে বাণিজ্যিকভাবে আনারস, কলাসহ অন্যান্য ফসল চাষের ফলে শিমুল আলুর চাষ অনেকটা ভাটা পড়েছিল। এখন বিদেশে এ আলুর বেশ চাহিদা হওয়ায় শিমুল আলু বা কাসাভা চাষে কৃষকরা বেশি আগ্রহী।
কৃষি অফিসের সূত্রমতে, এ অর্থ বছরে প্রায় ৫৩ হেক্টর জমিতে কাসাভার আবাদ হয়েছে। যার উৎপাদন সম্ভাবনা প্রায় ২০ মে.টন ।
জানাযায়, মধুপুরে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে শিমুল আলু (কাসাভা)। ইংরেজি নাম মনিহট ইসোলেন্টা ইহা বহুবর্ষজীবী গুল্ম শ্রোণির গাছ। কাণ্ড গিটযুক্ত, আগা ছড়ানো, পাতা যৌগিক, গড়ন শিমুল পাতার মতো, করতলাকৃতি, লালচে রঙের দীর্ঘ বৃন্তের মাথায় লম্বাটে ছয় থেকে সাতটি পাতা থাকে। কাসাভা গাছের শিকড় জাত এক ধরনের আলু। জন্মে মাটির নিচে। নানাভাবে ও পদ্ধতিতে এ আলু খাওয়া যায়। কাসাভা স্থানভেদে প্রচলিত বিভিন্ন নাম রয়েছে। তবে স্থানীয়ভারে কেউ কেউ শিমুল আলু, শিমলাই আলুও বলে থাকেন।
কাসাভার পুষ্টিগুণ বহুগুণে গুণান্বিত, যা গমের আটার চেয়ে পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। এই আটা থেকে রুটি ছাড়াও অনেক প্রকার সুস্বাদু খাবার তৈরি করা যায়। কাসাভা ভিটামিনের দিক দিয়েও শীর্ষে। কাসাভার খাদ্যমানের মধ্যে প্রোটিন আছে ১০ শাতাংশেরও বেশি। আ্যমেইনো অ্যাসিড ও কার্বোহাইড্রেট আছে যথাক্রমে ১০ ও ৩০ শতাংশ। আরও আছে ফ্রকটোজ ও গ্লকোজ। খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম কাসাভা আলুতে রয়েছে ৩৭ গ্রাম শর্করা, ১.২ গ্রাম আমিষ, ০.৩ গ্রাম চর্বি, ৩৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৭ লি. গ্রাম আয়রন, ০.০৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন এ, ৩৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি এবং ১৪৬ ক্যালরি খাদ্য শক্তি। বেরিবাইদ গ্রামের কাসাভা চাষি নশেন হাগিদক জানান, তার বাড়ির পাশে নয়াপাড়ায় ৩ বিঘা জমিতে কাসাভা লাগিয়েছে। নাগ্রা জাতের কাসাভার বীজ তার নিজেরই ছিল। ১৯৮২ সাল থেকে তার পরিবার চাষ শুরু করে। প্রতিবছরই কম-বেশি চাষ করে থাকেন। অন্যান্য বছর খেত থেকেই ১২শ’ টাকা মণ বিক্রি করেছেন। তিন বিঘা জমিতে এ বছর ৪০-৫০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। তার ধারনা ২০০ মণ ফলন পাবেন বলে তিনি আশা করছেন।
মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রকিব আল রানা জানান, গড় অঞ্চলের মাটি আবহাওয়া কৃষি ফসলের জন্য উপযোগী, বন্যার পানিতে ক্ষতির আশঙ্কা নেই। সহজেই পানি ওঠে না। মাটির উর্বরতার কারণে সহজেই যে কোনো ধরনের কৃষি ফসল চাষ করা হয়। আনারস কলাসহ অন্যান্য ফসলের মতো কাসাভাও চাষ হয়। ফলন ভালো হয়। দামও ভালো পেয়ে থাকে। কৃষি বিভাগ থেকে তারা কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা করে থাকেন ।