
চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ প্রকল্পে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধমূলক অসদাচরণের অভিযোগে সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলার অপর তিন আসামি হলেন— সেতু বিভাগের সাবেক সচিব ও নির্বাহী পরিচালক (অবসরপ্রাপ্ত) খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী (অবসরপ্রাপ্ত) কবির আহমদ এবং সাবেক পরিচালক ও যুগ্ম সচিব আলীম উদ্দিন আহমেদ। অন্যদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ইব্রাহিম মিয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতির অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, তার পরিবার ও স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের ১২০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের আদেশ দিয়েছেন আদালত। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা তানজির আহমেদ।
সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন। দুদকের অনুসন্ধান অনুযায়ী, এ প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় তিনটি কাজ— পরিষেবা এলাকা, পর্যবেক্ষণ সফটওয়্যার এবং একটি ট্যাগ বোট প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার ফলে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫৮৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা। বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ উপেক্ষা করেই এসব কাজ প্রকল্পে যুক্ত করা হয়। দুদক জানায়, প্রকল্পের মাধ্যমে যানবাহন চলাচলের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, বাস্তবে তার খুব কম অংশই পূরণ হয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জুলাই (২০২৫) পর্যন্ত সময়ে কর্ণফুলী টানেল দিয়ে চলাচল করেছে মাত্র ২৪ লাখ ৫৫ হাজার ৮৭৯টি যানবাহন— যা সম্ভাব্যতার ১৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
এ সময়ে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা, অথচ রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় হয়েছে ২০৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে সরকারের প্রায় ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে। মামলায় উল্লেখ করা হয়, প্রকল্পে যুক্ত করা তিনটি কাজ— পরিষেবা এলাকা, পর্যবেক্ষণ সফটওয়্যার এবং ট্যাগ বোট— প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল না এবং এসব বিষয়ে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের কোনো সুপারিশ ছিল না।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী: অন্যদিকে সাইফুজ্জামান চৌধুরীরসহ তার আত্মীয় স্বজনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে। ফ্রিজ করা ১১৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রয়েছে ৪৩ কোটি ৯৪ লাখ ৫৪ হাজার ৪৭০ টাকা এবং ৬টি ডলার অ্যাকাউন্টে রয়েছে ২৪ হাজার ৭৯০ ডলার। দুদকের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমানের আবেদনে জানানো হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক, সিআইডি এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ৯ সদস্যের একটি টিম কাজ করছে। এরই মধ্যে ৩৯টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে, পরবর্তীতে বিএফআইইউ’র মাধ্যমে আরও হিসাবের তথ্য পাওয়া গেছে। আবেদনে আরও বলা হয়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জড়িত থাকার সত্যতা মিলেছে। এ অবস্থায় তদন্ত চলাকালে এসব ব্যাংক হিসাব আদালতের মাধ্যমে ফ্রিজ করা জরুরি হয়ে পড়ে।