ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

গাজা যুদ্ধকে গণহত্যা বলুন, ভলকার টুর্ককে জাতিসংঘ কর্মীরা

গাজা যুদ্ধকে গণহত্যা বলুন, ভলকার টুর্ককে জাতিসংঘ কর্মীরা

গাজার যুদ্ধকে ‘চলমান গণহত্যা’ বলে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের কাছে চিঠি দিয়েছেন এর কর্মীরা। মানবাধিকার হাইকমিশনারের কার্যালয়ের প্রধান ভলকার টুর্কের কাছে গতকাল বুধবার সংস্থাটির কয়েকশ কর্মীর স্বাক্ষর সম্বলিত ওই চিঠি পাঠানো হয়। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

গাজায় সংঘটিত আইন লঙ্ঘনের ব্যাপকতা, মাত্রা ও প্রকৃতির প্রমাণাদি তুলে ধরে ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রায় দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের ক্ষেত্রে গণহত্যার আইনি সংজ্ঞার প্রতিটি আলামত খুঁজে পাওয়া গেছে।

গাজা সংকটে প্রকাশ্যে স্পষ্ট অবস্থান নিতে টুর্কের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, গণহত্যার নিন্দা করা জাতিসংঘ মানবাধিকার দফতরের একটি আইনি ও নৈতিক দায়িত্ব। চলমান গণহত্যার নিন্দা না করা জাতিসংঘের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং মানবাধিকার ব্যবস্থাকেই দুর্বল করে দেবে। ১৯৯৪ সালের রুয়ান্ডা গণহত্যা থামাতে জাতিসংঘের ‘নৈতিক ব্যর্থতার’ কথাও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। রুয়ান্ডা সংকটে অন্তত ১০ লাখের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত জেনেভাভিত্তিক সংস্থাটি বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার রক্ষা ও উন্নয়নে কাজ করার দায়িত্বে রয়েছে। টুর্কের প্রতি লেখা চিঠি বিশ্বব্যাপী তার কার্যালয়ের প্রায় দুহাজার কর্মীর মধ্যে এক-চতুর্থাংশের সমর্থন পেয়েছে।

এদিকে, টুর্কের প্রতি জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের পূর্ণ ও নিঃশর্ত সমর্থন রয়েছে উল্লেখ করে সংস্থাটির মুখপাত্র স্টেফানি ডুজারিক বলেছেন, কোনও ঘটনাকে গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করার অধিকার কেবল কোনও আইনি কর্তৃপক্ষের রয়েছে।

জাতিসংঘ কর্মীদের চিঠি সম্পর্কে ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জাতিসংঘের কর্মীদের চিঠি ইসরায়েল বিদ্বেষ, মিথ্যা, ভিত্তিহীন হলেও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তারা প্রতিক্রিয়া দেখাবে না।

বরাবরই গাজায় গণহত্যা চালানোর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েল দাবি করেছে, তাদের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। গত ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অনুপ্রবেশ করে অন্তত এক হাজার ২০০ মানুষ হত্যা এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করার অভিযোগ রয়েছে হামাসের বিরুদ্ধে। এর প্রতিক্রিয়ায় গাজায় সামরিক আগ্রাসন শুরু করে ইসরায়েল।

গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত বলি হয়েছেন ৬৩ হাজার মানুষ। বৈশ্বিক ক্ষুধা পর্যবেক্ষণ সংস্থার তথ্য বলছে, গাজার একটি অংশ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো কিছু মানবাধিকার সংস্থা ইতোমধ্যেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনেছে। জাতিসংঘের স্বাধীন বিশেষজ্ঞ ফ্রান্সেসকা আলবানেসেও এই শব্দ ব্যবহার করেছেন, তবে জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও তা করেনি। জাতিসংঘ কর্মকর্তারা অতীতে বলেছেন যে গণহত্যা হয়েছে কিনা তা নির্ধারণের দায়িত্ব আন্তর্জাতিক আদালতের।

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ২০২৩ সালে গণহত্যার মামলা দায়ের করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে বহু বছর লাগতে পারে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত