ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

দশমিনায় পানি কচুচাষে দিন ফিরছে চাষিদের

দশমিনায় পানি কচুচাষে দিন ফিরছে চাষিদের

একটা সময় ছিল পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বাসবাড়িয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ দাশপাড়া গ্রামে আউশ মৌসুমে চাষাবাদ হত না। বর্ষায় গ্রামজুড়ে পানির থইথই আর শুষ্ক মৌসুমে জমিতে ঝোপঝাড় ও আগাছা ফলে জমি প্রায় অনাবাদী পড়ে থাকত। স্থানীয় কৃষকরা যদি- বা চেষ্টা করতেন ধান চাষে, খরচ উঠে আসত না বিক্রির টাকা থেকে। ফলে হতাশাই ছিল তাদের একমাত্র সঙ্গী।

কিন্তু গত বছর গ্রামের কৃষক কাজী মোহাম্মাদ হোসেন প্রথমবারের মতো ১০ শতক জমিতে পানি কচুচাষ করে বদলে দিলেন ছবিটা। কম খরচে ভালো ফলন এবং বাজারে এর চাহিদার থাকায় লাভবান হয়ে তিনি দেখলেন নতুন আশা। এবার তিনি ৩০ শতক জমিতে পানি কচু চাষ করেছেন। এরই মধ্যে খরচ তোলা শেষ, এখন মুনাফার অপেক্ষায়।

গত ১ সপ্তাহেই আমি ৫০০-এর বেশি কচু বিক্রি করে প্রায় ১২ হাজার ৯৫০ টাকা পেয়েছি। খরচ উঠেছে, এখন যা আসবে তা লাভ, হাসিমুখে বললেন কাজী মোহাম্মাদ হোসেন। কাজী হোসেনের সফলতা দেখে একই ইউনিয়নের অনেক কৃষক ঝুঁকছেন পানি কচুচাষে। আগে যেখানে আবাদহীন জমি পড়ে থাকত, এখন সেখানে কচুর সবুজ সমারোহ। কৃষকরা বলছেন, ধান বা অন্যান্য ফসলের তুলনায় কচুচাষ সহজ, খরচও কম।

স্থানীয় এক কৃষক জানান, কচুচাষ করতে আলাদা কোনো রাসায়নিক সার দরকার হয় না। জমি একটু উঁচু বা নিচু যেখানেই হোক, পানি থাকলেই হয়। আর বাজারে সারা বছর এর চাহিদা থাকায় দামও ঠিকঠাক মেলে। পানি কচু শুধু কৃষকের আয় বাড়াচ্ছে না, ভোক্তার জন্যও তা স্বাস্থ্যকর বিকল্প হয়ে উঠছে। দাম সাশ্রয়ী হওয়ায় সাধারণ মানুষ সহজেই কিনতে পারছেন। বিশেষ করে গ্রামীণ নারীদের আয়রনের ঘাটতি পূরণে পানি কচুর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলরুবা ইয়াসমিন লিজা বলেন, আমাদের গ্রামের নারীদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি বেশি। পানি কচু, লতি ও গাডি খুব সহজলভ্য, আর এগুলো আয়রনের সমৃদ্ধ উৎস। নিয়মিত খেলে রক্তস্বল্পতা কমাতে সহায়তা করবে।

পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত বছর জেলায় প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে কচু আবাদ হয়েছিল। এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৫ হেক্টরে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, অনাবাদী জমিতে পানি কচুর সঠিক ব্যবহার সম্ভব হলে কৃষকের আয় যেমন বাড়বে, তেমনি বাজারে সাশ্রয়ী দামে পুষ্টিকর সবজি পাওয়া যাবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এইচ, এম, শামীম জানান, আমরা চাষীদের সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছি। জমি নির্বাচন, চারা রোপণ থেকে শুরু করে রোগবালাই ব্যবস্থাপনা পর্যন্ত আমাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কৃষকেরা বাণিজ্যিকভাবে সফল হলে আগামীতে আরও অনেক এলাকায় কচুচাষ বিস্তৃত হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানি কচু শুধু পুষ্টিগুণেই নয়, টেকসই কৃষিব্যবস্থার জন্যও সহায়ক হতে পারে। কারণ, অনাবাদী বা কম উৎপাদনশীল জমিকে চাষের আওতায় আনছে এই সবজি। এতে একদিকে কৃষকের আয় বাড়ছে, অন্যদিকে জমি ব্যবহারের দক্ষতাও বাড়ছে। যেখানে একসময় বৃষ্টির পানিতে ডুবে থাকা জমি বা আগাছায় ভরা পতিত মাঠ হতাশার কারণ ছিল, সেখানে এখন কচুর সবুজ ক্ষেত কৃষকের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে। পটুয়াখালীতে পানি কচুর বাণিজ্যিক চাষ ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আর এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে জেলার কৃষি অর্থনীতিতে যুক্ত হতে পারে নতুন এক অধ্যায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত