
মাঠ প্রশাসনের ভোটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা কোনো ব্যক্তি বা দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করলে তাকে প্রত্যাহার করে প্রচলিত আইনের আওতায় এনে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে নেবে জনপ্রশাসন। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান।
সিনিয়র সচিব বলেন, মাঠপ্রশাসন বলতে আমি যাদের বুঝি বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)- ওনারা নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত। এসিল্যান্ড (সহকারী কমিশনার-ভূমি) এবং অন্যান্য অফিসাররা ওই সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ডিউটি করে। এটা হলো ম্যাজিস্ট্রেসি ডিউটি। ‘আমাদের প্রধান উপদেষ্টা যেটা বলেছেন, গতকালকেও ওনার প্রেস সেক্রেটারি শক্তভাবে বলেছেন- নির্বাচন নিয়ে কোনো সংশয় নেই, এখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই।’
মোখলেস উর রহমান আরও বলেন, সিভিল সার্ভিসের গত তিনটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা, এখান থেকে তাদের জন্য শক্ত বার্তা, এখনো তাদের জন্য... রিটার্নিং অফিসার কারা হচ্ছে সেটা নির্ধারিত হবে তফসিল ঘোষণার পর। ওই সময় সরাসরি যে নির্দেশনা যাবে এর বাইরে, কোনো ডিসির কাজ করতে পারবে না বা করবে না। সকলেই দেশ প্রেমিক মানুষ, সবাই চায় একটা মডেল... আমরা গর্ববোধ করি এমন একটা নির্বাচন হোক।
লটারিতে ডিসি নিয়োগ নাকচ: সরকারের মাঠ প্রশাসনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন জেলা প্রশাসক (ডিসি)। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে লটারির মাধ্যমে পুলিশ সুপার (এসপি) নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও কোনোদিন লটারির মাধ্যমে সিভিল সার্ভিসে পদায়ন হয়নি বলে জানান জনপ্রশাসন সিনিয়র সচিব। ভোট সামনে রেখে মাঠ প্রশাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে লটারির মাধ্যমে নিয়োগের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, নির্বাচন সামনে রেখে লটারির মাধ্যমে এসপি পদে পদায়ন করা হবে। ডিসি নিয়োগ কীভাবে করা হবে- জানতে চাইলে মৃদু হেসে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, ?‘কখনো কোনোদিন লটারির মাধ্যমে সিভিল সার্ভিসে পদায়ন হয়নি। এখনো হচ্ছে না, হবে না। তিনি বলেন, ‘এখন হলো অভিযোগের বিপরীতে তাদের (ডিসি) প্রত্যাহার করা হচ্ছে, আমাদের ফিটলিস্ট আছে। মাঝে কিছু (নতুন ডিসি পদায়ন) হয়েছে সামনে আরও হবে। যেখানে স্ট্যাবল আছে... যেমন যুগ্মসচিব (ডিসি) অনেক আছেন, আমরা নির্বাচনের আগে যুগ্মসচিবদের তুলে আনব। সেই সব জায়গায় ডিসিদের রিপ্লেস করতে হবে। যারা ভালো করছেন, এই যে ক্রাইসিস...এক বছরে ডিসিরা প্রমাণ করেছেন, আপনারা সবাই একমত- জেলা প্রশাসন কীভাবে পুলিশের সাপোর্ট ছাড়া... মাঠ প্রশাসন বলতে সিভিল এবং পুলিশ এই দুটোকেই বোঝায়।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে যে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, হোমওয়ার্ক ভালো থাকলে যে দিনটাকে কেন্দ্র করে কাজটা করা হচ্ছে, সেই দিনটা ভালো হবে কোনো সমস্যা হবে না।’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে- নিয়োগ স্বচ্ছ করার জন্য লটারিতে তারা এসপি নিয়োগ দেবেন- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মোখলেস উর রহমান বলেন, ‘প্র্যাকটিস অনুযায়ী তফসিল ঘোষণার পরই আমরা তো নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলে যাই, তখন এ বদলিগুলো করবে নির্বাচন কমিশন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইউএনওদের বদলিটা করেন বিভাগীয় কমিশনার। নির্বাচনের সময় একটা বড় ধরনের রদবদল হয়। সেটা নির্বাচন কমিশন করবে। সেখানে কারও বলার কিছু থাকবে না, তদবির থাকবে না। যাকে যেখানে দেওয়া হবে, সেখানে সে যেতে বাধ্য।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব আরও বলেন, ‘ইউএনওরা হলো অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার। এরপর হলো ডিসি। ডিসি নিয়োগ করার জন্য আমাদের জনপ্রশাসন সংক্রান্ত সাত সদস্যের একটি কমিটি আছে। এছাড়া ডিসি সিলেকশন কমিটি আছে পাঁচ সদস্যের, ডিসি ফিট লিস্ট হয়। ফিট লিস্টের পর কমিটিতে সেটা তোলা হয়। সেখান থেকে দেখে ডিসি পোস্টিং হয়। সেটা প্রধান উপদেষ্টা অনুমোদন করেন। এরপর সেটা জনপ্রশাসনে আসে, আমরা প্রজ্ঞাপন জারি করে দেই। এটা জনপ্রশাসনের একক কাজ নয়। অনেকের ধারণা, এটার শুরু শেষ মনে হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে, তা নয়। আমরা প্রক্রিয়ার একটা অংশ।