
পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এআইজিপি) শামসুদ্দোহা খন্দকারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকার নবাবগঞ্জে পানালিয়া ওয়ান্ডেরালা গ্রিনপার্কে তাঁর বাড়ির সামনে ১২ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে গতকাল রোববার বেলা ১১টায় তাঁকে আটক করা হয়। পরে চেক জালিয়াতির মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ তথ্য নিশ্চিত করে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আনিসুজ্জামান বলেন, সাবেক এই অতিরিক্ত আইজিপির বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতির দুটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। সেই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
নবাবগঞ্জ থানা সূত্রে জানায়, শামসুদ্দোহা খন্দকার নবাবগঞ্জের পানালিয়ায় তাঁর নিজ বাড়িতে ছিলেন। গত শনিবার তিনি মদ পান করে বাসার কাজের লোকজনকে হুমকি-ধমকি দেন। রাত ১১টায় বাসার এক নারী গৃহকর্মী জাতীয় জরুরি নম্বর ৯৯৯-এ কল দিয়ে পুলিশকে বিষয়টি জানান। নবাবগঞ্জ থানা-পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় শামসুদ্দোহাকে মদ্যপ অবস্থায় পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন পুলিশের এক সদস্য। তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যদের দেখেও বাসার গৃহকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছিলেন শামসুদ্দোহা। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে নবাবগঞ্জ থানার ওসি মমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ রাতভর সেখানে অবস্থান করে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি শামসুদ্দোহার বাসার কাজের চার নারী গৃহকর্মীসহ কয়েকজনকে বেতন না দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন। নিজের লাইসেন্সকৃত অস্ত্র দিয়ে তাঁদের গুলি করার হুমকি দেন। পরে পুলিশ দেখে তিনি তাঁর কক্ষের দরজা আটকে ভেতরে অবস্থান করেন। দীর্ঘ সময় পুলিশ সদস্যরা তাঁর কক্ষের দরজা খোলার অপেক্ষায় থাকেন। গভীর রাত থেকেই পুলিশের একাধিক টিম তাঁকে গ্রেপ্তারে কাজ করতে থাকে। এ সময় শামসুদ্দোহার অস্বাভাবিক আচরণে পুলিশ সদস্যরা অনেকটা বিব্রত হন। পরে আজ বেলা ১১টার দিকে তাঁকে আটক করা হয়। সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তার লাইসেন্সকৃত পিস্তলটি নবাবগঞ্জ থানা পুলিশ জব্দ করেছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রোববার সকাল সাড়ে ছয়টায় পানালিয়া ওয়ান্ডেরালা গ্রিন পার্কের সামনে পুলিশের তিনটি গাড়ি। পার্কের প্রবেশ দরজা ভেতর থেকে আটকানো। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর পুলিশের এক সদস্য বের হন। তিনি এই প্রতিবেদকের পরিচয় জেনে দরজা খুলে দিলে ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)সহ কয়েকজন উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামসুদ্দোহার বাসার উঠানে অপেক্ষা করছেন। আশপাশের প্রবেশপথে পুলিশ সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছেন। পুলিশের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার শয়নকক্ষের সামনে দরজায় নক করছেন। কোনো সাড়া দিচ্ছেন না শামসুদ্দোহা।
সকাল সাড়ে ৯টায় খন্দকার শামসুদ্দোহা ঘুম থেকে ওঠেন। এ সময় ওসি তাঁকে বের হতে অনুরোধ করেন। পরে তিনি প্রস্তুতি নিয়ে সাড়ে ১০টায় বের হন। পরে হেঁটেই গেটের সামনে গিয়ে পুলিশের গাড়িতে ওঠেন। বেলা ১১টার দিকে তাঁকে আটক করে পুলিশের তিনটি গাড়ি ঢাকার দিকে রওনা দেয়। পরে তাঁকে দুপুর ১২টার দিকে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় কিছু সময়ের জন্য নেওয়া হয়। সেখানে তিনি কিছু সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ সেরে নেন। এরপর বেলা সোয়া একটায় তাঁকে আদালতে নেওয়ার জন্য কেরানীগঞ্জ থেকে রওনা দেয় পুলিশ।
১৯৮৬ সালে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন শামসুদ্দোহা। ২০১১ সালে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে পদোন্নতি পান। তাঁকে ২০১১ সালে প্রেষণে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় সরকার। দায়িত্ব পাওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ ওঠে। এরপর ২০১৫ সালে তাঁকে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ২০১৬ সালের ৩ মার্চ তিনি পুলিশ বাহিনী থেকে অবসরে যান।
শামসুদ্দোহা ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগও রয়েছে। ২০১৮ সালে পুলিশ কর্মকর্তা শামসুদ্দোহা ও তাঁর স্ত্রীর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, শামসুদ্দোহার স্ত্রীর অ্যাকাউন্টেই অপরাধলব্ধ আয় প্রায় ৪১ কোটি টাকা। শামসুদ্দোহার বিরুদ্ধে ২১ কোটি ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকার অপরাধলব্ধ আয়ের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়। এ ছাড়া ২ কোটি ৮৭ লাখ ৩ হাজার ৩৮৩ টাকার তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়।