
টাঙ্গাইলের বৃহত্তম লালমাটি বেষ্ঠিত পাহাড়ি জনপদ মধুপুর গড়াঞ্চল। এ অঞ্চলের মাটির উর্বরতা শক্তি ফসল চাষের উপযোগী হওয়ার কারণে কৃষকরা অনায়াসে সহজেই বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করতে পারেন। একসময় এ পাহাড়ি জনপদে আনারসের চাষই বেশি হত। সময়ের বিবর্তনে মানুষের চাহিদা বাড়ায় তারা একই জমিতে আনারসের পাশাপশি কচু, আদা, হলুদ, পেঁপে, মরিচ, কলাসহ নানা ফসল চাষ হচ্ছে। গড় অঞ্চলের মাটি উঁচু থাকার কারণে অনেকটা বন্যা মুক্ত। বৃষ্টি হলে কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতা দেখা দিলেও অতি দ্রুত সময়ের মধ্যেই পানি নিষ্কাশিত হয়ে পার্শ্ববর্তী বাইদে (নিচুজমি) নেমে যায়। ফলে ফসল হানির শংকা অনেকটাই কম।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভুটিয়া, টেলকি, গায়ড়া, সাইনামারি, গোবুদিয়া, মাগন্তিনগর, জাঙ্গালিয়া, বেরিবাইদ, গেচুয়া, গাছাবাড়ী, চাপাইদ, কুড়াগাছা, আমলীতলা, অরণখোলাসহ বিভিন্ন গ্রামে আনারসের সঙ্গে সাথী ফসলের সবুজ বৈচিত্র্যে ভরা আনারসের বাগানে কচু, আদা, হলুদ, পেঁপে, মরিচ, কলাসহ নানা ফসল শোভা পাচ্ছে। সাথী ফসলগুলোও যেন পুরো মাঠজুড়ে সবুজে আচ্ছাদিত।
গড় অঞ্চলের কৃষকরা জানান, তাদের এলাকায় বনের সামাজিক বনায়নের প্লট বরাদ্দ নিয়ে ওই জমিতে বন বিভাগ নানা জাতের বনজ (কাঠজাত) গাছ রোপণ করে। ওইসব বনজ গাছ বেড়ে উঠতে দুই-তিন বছর সময় লাগে। আর এসময় ওইসব বনজ গাছের ফাকা জায়গায় আনারস, কচু, আদা, হলুদ, পেঁপে, মরিচ, কলাসহ বিভিন্ন সাথী ফসল সহজেই চাষ করা যায়।
হাগুড়াকুড়ি গ্রামের কৃষক আবুল কালাম জানান, এবছর ৩৫ বিঘা জমিতে আনারসের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে কলা, হলুদ, আদা ও পেঁপে চাষ করেছেন। ৪০ লাখ টাকার পেঁপে, ৩৫ লাখ টাকার আনারস বিক্রি করেছেন। এছাড়া ৭ লাখ টাকার কলা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।
গাছাবাড়ি গ্রামের আব্দুল হক জানান, তিনি এবছর ৩২ বিঘা জমিতে আনারস চাষ করেছেন, সাথী ফসল হিসেবে টপলেডি জাতের পেঁপে চাষ করেছেন। পেঁপে পরিপক্ব হয়ে গেছে। শুধু পেঁপেই বিক্রি করেছেন প্রায় কোটি টাকার। আগামী বছর আনারস পরিপক্ব হলে আনারস বিক্রি করেও অনকে টাকা লাভ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
মাগন্তিনগর গ্রামের কৃৃষক সাইদুর রহমান জানান, এবছর ১৫ বিঘা জমিতে একসঙ্গে একই জমিতে আনারসের সঙ্গে কচু, কলা চাষ করেছেন। সাথী ফসলে পাবেন বাড়তি লাভ। আদা-হলুদে সংসারের চাহিদা মিটেও বিক্রি করে কয়েক লাখ টাকা আয়ের আশা করেন।
মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রকিব আল রানা জানা, মধুপুরে ভূপ্রকৃতি কৃষি ফসলের জন্য বিশেষ উপযোগী। গড় অঞ্চলের লাল মাটি বন্যা মুক্ত। এখানে সাথী ফসল চাষে কৃষকরা সফলতা পাচ্ছেন। আনারসসহ বিভিন্ন ফসলের বাগানে সাথী ফসল হিসেবে আদা, কচু, হলুদ, কলা, পেঁপেসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ হয়ে থাকে।