
রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হলো খতমে নবুওয়াত মহাসম্মেলন। এতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে লাখো তৌহিদি জনতা সমবেত হন। দেশি-বিদেশি শীর্ষ আলেম ও রাজনীতিকরা এতে বক্তব্য দেন। এই মহাসম্মেলনে প্রধান দাবিই ছিল কাদিয়ানিদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করা। এই দাবি বাস্তবায়নে মহাসম্মেলন থেকে চার দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া ছয় দফা ঘোষণা পাঠ করে শোনানো হয়। আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফ্ফুজে খতমে নবুওয়াতের মহাসচিব ও সম্মিলিত খতমে নবুওয়াত পরিষদের সদস্য সচিব মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী চার দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
সম্মেলনে ঘোষিত কর্মসূচিগুলো হলো- ১. আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সর্বস্তরের আলেমণ্ডউলামা এবং তৌহিদি জনতার অংশগ্রহণে দেশব্যাপী গণস্বাক্ষর কর্মসূচি চলবে। ২. মে ও জুন মাসজুড়ে দেশের প্রতিটি জেলায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। তিন. জুলাই ২০২৬ থেকে নভেম্বর ২০২৬ পর্যন্ত পাঁচ মাসে সারাদেশে পর্যায়ক্রমে প্রতিটি বিভাগে খতমে নবুওয়াত বিভাগীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। চার. উপরোক্ত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরও যদি কাদিয়ানিদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা না করা হয়, তবে ডিসেম্বর ২০২৬-এ দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরামদের নিয়ে জাতীয় উলামা-মাশায়েখ সম্মেলন আহ্বান করা হবে। সেখানে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান মহিউদ্দিন রব্বানী।
ছয় দফা ঘোষণা- ইসলামের মৌলিক আকিদা ‘খতমে নবুওয়াত’ সংরক্ষণ এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে কাদিয়ানিদের ‘সংখ্যালঘু অমুসলিম’ ঘোষণার দাবি জানিয়ে দেশ-বিদেশের শীর্ষস্থানীয় উলামা-মাশায়েখের উপস্থিতিতে মহাসম্মেলন থেকে সর্বসম্মতভাবে ছয় দফা দাবি সংবলিত একটি ঘোষণাপত্র পেশ করা হয়। খতমে নবুওয়াত পরিষদের মাওলানা মাহফুজুল হক এই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ইসলাম ধর্মের মৌলিক আকিদা ‘খতমে নবুওয়াত’কে অস্বীকার করার কারণে কাদিয়ানিরা মুসলিম উম্মাহর সর্বসম্মতিক্রমে ইসলাম বহির্ভূত কাফের বা অমুসলিম। তাই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম নাগরিকের ধর্মীয় স্বাতন্ত্র ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং দেশের অভ্যন্তরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখতে অবিলম্বে এই ঘোষণা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে।
ঘোষণাপত্রে আহমদিয়া মুসলিম জামাত নামে পরিচিত কাদিয়ানিদের জন্য ধর্মীয় আচার-আচরণ সংক্রান্ত ছয়টি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয় : ১. অমুসলিম ঘোষণা : আহমদিয়া মুসলিম জামাত নামধারী তথাকথিত কাদিয়ানি সম্প্রদায় ইসলামের দৃষ্টিতে কাফের সংখ্যালঘু অমুসলিম। তারা ‘আহমদিয়া মুসলিম জামাত’ নামে নিজেদের পরিচয় দিতে পারবে না এবং সব ক্ষেত্রে ‘কাদিয়ানি সম্প্রদায়’ নামে পরিচিত হবে। ২. ইসলামি পরিভাষা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা : কাদিয়ানিরা তাদের ধর্মকে ইসলাম আখ্যায়িত করতে পারবে না এবং কালিমা, নামাজ, রোজা, যাকাত, আজান, ঈদ, কোরবানি ইত্যাদি কোনো ইসলামি পরিভাষা ব্যবহার করতে পারবে না। ৩. উপাসনালয় ও নিদর্শন : কাদিয়ানিরা তাদের উপাসনালয়কে মসজিদ নামকরণ করতে পারবে না। সেটি ‘কাদিয়ানী উপাসনালয়’ হিসেবে পরিচিত হবে। এছাড়া সাহাবি, উম্মুল মুমিনিন-এর মতো কোনো ইসলামি বিশেষ নিদর্শন তারা ব্যবহার করতে পারবে না। ৪. বিবাহ সম্পূর্ণ হারাম : কাদিয়ানিদের সঙ্গে মুসলমানের বিবাহ ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরূপে হারাম। পরিচয় গোপন করে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ৫. জানাজা ও উত্তরাধিকার : কাদিয়ানিদের জানাজা পড়া যাবে না এবং কবরস্থানে তাদের লাশ দাফন করা যাবে না। কাদিয়ানি ও অমুসলমানের মধ্যে কোনো উত্তরাধিকারের বিধান প্রযোজ্য হবে না। ৬. প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা : কাদিয়ানিরা ইসলাম প্রচারের নামে কোরআনের বিকৃত অনুবাদ কিংবা কোনো বই, পুস্তিকা, লিফলেট ইত্যাদি ছাপতে বা প্রচার করতে পারবে না।
ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকের ধর্ম ইসলামের সুরক্ষা, কাদিয়ানিদের সংখ্যালঘু অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখার স্বার্থে অবিলম্বে উপরোক্ত ঘোষণা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে।