
ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে দাবি করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম। একই সময়ে নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখছেন না বলে তৃতীয় মাত্রার সঞ্চালক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জিল্লুর রহমানের বক্তব্যেরও জবাব দিয়েছেন তিনি। গতকাল সোমবার সকালে নিজের ফেসবুক পোস্টে প্রেসসচিব শফিকুল আলম এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, জিল্লুর রহমান বলেছেন- তিনি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখছেন না। কিন্তু আমরা দেখি। বাংলাদেশ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের পথে রয়েছে। আমরা আশা করছি, নির্বাচন কমিশন খুব শিগগিরই তফসিল ঘোষণা করবে। প্রেসসচিব আরও বলেন, জিল্লুর বিগত কয়েক মাস ধরে একই মন্তব্য করে চলেছেন। কিন্তু আমরা প্রস্তুত নই-এমন দাবি করা বাস্তবতার অতিরঞ্জন। নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার সবসময়ই স্বচ্ছ থেকেছে। রেকর্ডসংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি নির্বাচনকালে নজিরবিহীন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। নতুন ডিসি-এসপি পোস্টিং সম্পন্ন হয়েছে, এগুলো নিয়ে কোনো প্রশ্নই ওঠেনি বা খুব কম উঠেছে। তিনি বলেন, নির্বাচনি প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে। বেশিরভাগ দল প্রার্থী ঘোষণা করেছে। সীমিত কিছু দলীয় অভ্যন্তরীণ ও আন্তঃদলীয় কোন্দল ছাড়া নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল আছে। জুলাই চার্টার গৃহীত হওয়ায় একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি হয়েছে। একই দিনে অনুষ্ঠিতব্য গণভোটের জন্যও দলগুলো প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, তাহলে কি জিল্লুর কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দাবি করছেন যে, ফেব্রুয়ারিতে কোনো নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই? আর কেন তিনি ইঙ্গিত করছেন যে আমরা ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ২০১৮ বা ২০২৪ সালের মতো পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছি? মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত একটি দলকে নির্বাচনের বাইরে রাখা মানে নির্বাচন ‘অবিশ্বাসযোগ্য’-এ দাবি আমরা মানি না, দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষও মানেন না। প্রেসসচিব আরও বলেন, আওয়ামী লীগকে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনার পক্ষে কেউ গুরুতরভাবে কথা বলছে না। দলের নেতাদের হাতে রক্ত লেগে আছে। কোনো সভ্য দেশই মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত এবং বহু নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে অভিযুক্ত একটি দলকে সহজে নির্বাচনে ফেরাতে পারে না।
তার ভাষায়, তাদের নেতৃত্ব এখনও রক্তের পিপাসায় উন্মত্ত। আমাদের আন্তর্জাতিক সহযোগীরাও মনে করেন- প্রকাশ্য ক্ষমাপ্রার্থনা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ছাড়া আওয়ামী লীগ আবার স্বাভাবিক রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না। সাম্প্রতিক ঘটনাও দেখিয়েছে- বাসে আগুন দেওয়া কিংবা ককটেল নিক্ষেপের মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড তারা এখনও রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। জিল্লুর রহমানের অবস্থান নিয়ে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি একের পর এক মনোলগ ভিডিও তৈরি করছেন, যার বহু অংশ গুজবকে প্রশ্রয় দেয়, তথ্য দেওয়ার বদলে বিভ্রান্তি ছড়ায়। তিনি নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ও গোলাম মাওলা রনির মতো ভুয়া তথ্যবাহকদেরও মঞ্চ করে দিয়েছেন। তিনি নিজেও ধীরে ধীরে সেই ভূমিকায় চলে যাচ্ছেন কি না-প্রশ্ন ওঠছে।
পোস্টের শেষাংশে প্রেসসচিব লেখেন, মানুষ নিজের বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেবে- তারা বোকা নয়। দুটি বিষয় আমি নিঃসংকোচে বলতে পারি : আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে পারবে না এবং অন্তর্বর্তী সরকার ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করবে, ইনশাআল্লাহ।