ঢাকা শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তিন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। স্বীকারোক্তি দেওয়া আসামিরা হলেন মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে রাহুল দাউদের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, ফয়সালের শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ ও বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পল্টন থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক রোকনুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, জবানবন্দি রেকর্ড শেষে আদালত আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

প্রধান আসামি ফয়সল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের বাবা-মা আদালতে অপরাধে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। তাদের এই স্বীকারোক্তির পর বিচারক উভয়কে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এর আগে গত ১৭ ডিসেম্বর ফয়সালের বাবা মো. হুমায়ুন কবির ও মা হাসি বেগম ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দুই দফায় মোট ৯ দিনের রিমান্ড শেষে বুধবার সন্ধ্যায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) আসামি সাহেদা পারভীন সামিয়া, ওয়াহিদ আহমেদ ও মারিয়া আক্তার লিমাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ আসামিদের জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন জানান। আবেদনে বলা হয়, আসামিরা মামলার ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আছেন মর্মে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের বক্তব্য বিজ্ঞ আদালতে প্রদান করতে ইচ্ছুক। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামিদের জবানবন্দি ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারা মোতাবেক লিপিবদ্ধ করা একান্ত প্রয়োজন। পরে আসামি সামিয়া ও ওয়াহিদ ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমিনুল ইসলাম জুনায়েদের আদালতে জবানবন্দি দেন। আসামি লিমা ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কামাল উদ্দীনের আদালতে জবানবন্দি দেন। এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর আদালত এই আসামিদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন। এরপর ২০ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় আরও চার দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন।

খুনিকে পালানোর ব্যবস্থা করেন যুবলীগের তাইজুল : ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি হত্যার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ও তার সহযোগী আলমগীর শেখকে ভারতে পালিয়ে যেতে সহায়তাকারী দুই ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। তাদের একজনকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি যুবলীগ নেতার ভগ্নিপতি আমিনুল ইসলাম। এ নিয়ে হাদি হত্যার ঘটনায় ১১ জনকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ ও র‍্যাব।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শহীদ ওসমান হাদিকে হত্যার ঘটনায় সরাসরি জড়িত এবং এর নেপথ্যের ব্যক্তিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে শুটার ফয়সাল ও তাকে বহনকারী মোটরসাইকেলচালক আলমগীরকে সীমান্ত পার করার ব্যবস্থা কে বা কারা করেছে, সে তথ্যও পাওয়া গেছে।

পুলিশ বলছে, এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মিরপুর এলাকার সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাইজুল ইসলাম চৌধুরী (বাপ্পী)। তাকে সহযোগিতা করেছেন তার ভগ্নিপতি আমিনুল ইসলাম।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ঢাকা উত্তর সিটির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর তাইজুল মিরপুর এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লার ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর ভারতে পালিয়ে যান। হাদি হত্যা মামলার আসামি বা গুলিবর্ষণকারী হিসেবে চিহ্নিত ফয়সাল ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও তার সহযোগী আলমগীর আদাবর থানা যুবলীগের কর্মী। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো. শফিকুল ইসলাম গত বুধবার বলেন, ফয়সাল ও আলমগীরকে পালাতে সহায়তার অভিযোগে আমিনুল ইসলামকে মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

প্রসঙ্গত, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। প্রধান আসামি ফয়সাল করিম বর্তমানে পলাতক নাকি দেশে আছেন সে বিষয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। মামলার নথিতে বলা হয়েছে, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে শরিফ ওসমান হাদির মাথায় গুলি করে দুর্বৃত্তরা। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৫ ডিসেম্বর ওসমান হাদিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর তার মৃত্যু হয়। ১৯ ডিসেম্বর হাদির মরদেহ দেশে আনা হয়। ২০ ডিসেম্বর লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণে বিশাল জানাজা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধি সৌধের পাশে শরিফ ওসমান হাদিকে দাফন করা হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত