
পৃথিবীর সকল অশান্তি দূর করে শান্তি-সমৃদ্ধি কামনায় যিশুর আগমনী দিনটি উদযাপন করেন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বড়দিন পালিত হয়। দিনের শুরুতে প্রার্থনা, শুভেচ্ছা বার্তা বিনিময়, কেক-পিঠা তৈরি ও খাওয়া দাওয়ার মাধ্যমে উৎসব উদযাপন করা হয়। রাজধানীর অভিজাত হোটেল-রেস্তোরাঁতেও বড়দিনের বিশেষ আয়োজন ছিল। আয়োজনে প্রার্থনা; আলো দিয়ে সাজানো হয় ক্রিসমাস ট্রি। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কোনো কোনো জায়গায় শিশুদের জন্য উপহারের ঝুলি নিয়ে হাজির থাকে সাদা চুলদাড়ির বুড়ো সান্তাক্লজ। এছাড়া কোনো কোনো শপিংমলও সাজানো হয় বড়দিন উপলক্ষে।
কাকরাইলের ‘সেন্ট মেরীস ক্যাথিড্রাল’ ছাড়াও তেজগাঁওয়ে ‘হলি রোজারি’, তেজগাঁওয়ের জপমালা রাণী গির্জা, ইস্কাটনের সেন্ট থমাস চার্চসহ রাজধানীর বিভিন্ন চার্চ সাজে বড়দিনের সাজে। আলোকসজ্জা ছাড়াও রাখা হয় ক্রিসমাস ট্রি। চার্চে বানানো হয় যিশু খ্রিষ্ট্রের জন্মের সময়ের প্রতীকী গোশালা। উৎসবের আবহ তৈরি হয় চার্চ সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতেও। কাকরাইলে ‘সেন্ট মেরীস ক্যাথিড্রাল’ শীতের সকালে নানা বয়সের মানুষ আসেন প্রার্থনায় অংশ নিতে। এই চার্চের ফাদার আলবার্ট রোজারিও বলেন, ‘জীবন প্রেমময় হয়ে উঠুক এবং পূর্ণ হোক ভালোবাসায়।’ প্রার্থনায় তিনি বলেন, ‘হে প্রভু আপনি সারা বিশ্বে শান্তি ফিরিয়ে দিন। আপনার ফিরে আসার অপেক্ষায় হে প্রভু। দুই হাজার বছরের বেশি সময় আগে ২৫ ডিসেম্বর ইসরাইলের বেথেলহেম শহরে কোনো এক গোশালায় কুমারী মাতা মেরির গর্ভে জন্ম নেন যিশু। তার জন্মকাহিনীকেই এ উৎসবের মূল ভিত্তি ধরা হয়।
খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার ও মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালনা করার জন্য ঈশ্বর যিশুকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। কাকরাইলে ‘সেন্ট মেরীস ক্যাথিড্রাল’ এ শীতের সকালে প্রার্থনায় অংশ নিতে আসার সবার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘পালিত হচ্ছে যিশুর জন্মদিন। সবার প্রতি সবার ভালোবাসাই বড়দিন।’ এবারের বড়দিন কেমন উদযাপন করছেন জানতে চাইলে আলবার্ট রোজারিও বলেন, ‘আমরা শুভ বড়দিন পালন করছি, অনেক উৎসবমূখর পরিবেশে, অনেক মানুষের উপস্থিতিতে। আজকের (বৃহস্পতিবার) দিনে আমাদের কেউ ঘরে থাকে না। সবাই গির্জায় আসে। পরে সবার সাথে কুশলবিনিময় করে, আর্শিবাদ গ্রহণ করেন।’ তিনি আরও বলেন, এবারের বড়দিন একটু বেশিই আনন্দের, কারণ জুবলী বর্ষের বড় দিন যিশুর ২০২৫তম জন্ম জয়ন্তী। যদিও আমাদের মধ্যে একটু দুর্শিন্তা, উদ্বেগের বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ছিল, কিন্তু আপনারা দেখেছেন, খবরও দেখেছেন আমরা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবাই খুব নিরাপদে নির্বিঘ্নে, আনন্দে বড়দিন উদযাপন করে যাচ্ছি।’
‘সেন্ট মেরীস ক্যাথিড্রাল’ এর ফাদার কিউবার বলেন, ‘আমাদের সব ধর্মে সৎ মানুষও আছে ভালো মানুষও আছে, আবার খারাপ মানুষও আছে, আবার দুষ্ট মানুষ আছে, এইটা নিয়ে জগত। কিন্তু এর মধ্যে আমাদের কাছে অবতার স্বর্গ থেকে যে কোন ধর্মে আমরা যেন সুন্দর পথে চলি, শান্তির পথে চলি, যেন সত্যি মানুষের সেবা করতে পারি, উপকার করতে পারি। সেজন্য আজকের (বৃহস্পতিবার) দিনে আমরা আপনাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, এটা আমাদের একটা সার্বজনীন একতা এবং শান্তিপূর্ণ একটা সম্পর্ক। এটা যেন আমরা সর্বদাই বজায় রাখতে পারি এবং আমরা নৈতিক জীবনে আরো সুন্দর জীবন যাপন করতে পারি।’
ময়মনসিংহ থেকে আসা সুকৃতি বলেন, ‘মানবজাতির কাছে যেন আমাদের যিশুর জন্মদিনের বারতা পৌঁছায়। সবাইকেই শুভেচ্ছা।’ গোলাপবাগ আসা পার্বতী রুরাম বলেন, ‘যিশুর জন্মদিনে সবার মনে আনন্দ ও ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়ুক, সবাইকে বড়দিনের শুভেচ্ছা, ‘শুভ বড়দিন।’ গির্জায় আসা সিলভী টিগিটি বলেন, ‘যিশুর আশীর্বাদে আনন্দ ও সুখে ভরে উঠুক সবার জীবন। অন্ধকার দূর করে নতুন আশার আলো নিয়ে আসুক। বড়দিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।’
নাটোর : নাটোরের বনপাড়াসহ জেলার ১৪টি খ্রিষ্টান ধর্মপল্লীতে উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হয়েছে বড়দিন। বৃহস্পতিবার খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা দিনটিকে উদযাপন উপলক্ষে নানা আয়োজন করে। বড়দিন উপলক্ষে গির্জা ও ধর্মপল্লীর বাড়ি-ঘর সাজানো হয় বর্ণিল সাজে। আল্পনা অংকন করে গির্জা ও বাড়ির প্রাঙ্গণ। সাজানো হয় ক্রিসমাস ট্রি এবং ক্রিসমাস স্টার। এছাড়া পিঠাণ্ডপুলির আয়োজন ও কীর্তনসহ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। গির্জা প্রাঙ্গণে বড়দিনের কেক কাটেন জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন এবং পুলিশ সুপার মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আরিফ হোসেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ঝিনাইদহ : জেলায় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন নানা আয়োজনে উদযাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে যীশু খ্রীস্টের জীবন ও তার মানবকল্যানমূলক আদর্শ তুলে ধরে আলোচনা করেন রেভা মাইকেল তাপস দাস।
শেরপুর : বর্ণাঢ্য আয়োজনে শেরপুরে ১৮টি গির্জায় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিন একসাথে যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও শান্তির বাণী প্রচারের মধ্য দিয়ে বড়দিনের আয়োজন করা হয়। বড়দিন পালন উপলক্ষে শেরপুর সদরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার খ্রিস্টান পল্লীতে আলোকসজ্জা ও সাজসজ্জায় আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
মাগুরায় প্রার্থনা ও সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে বড়দিন উদযাপন : প্রার্থনা, শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে মাগুরায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিন উদযাপিত হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন গির্জায় ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, প্রার্থনা ও কীর্তনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হয়। বড়দিন উপলক্ষে মাগুরার প্রতিটি গির্জা বর্ণিল সাজে সাজানো হয়। রঙিন আলোয় সাজানো হয় ক্রিসমাস ট্রি। সকাল থেকেই গির্জাগুলোতে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
প্রসঙ্গত, বড়দিন সরকারি ছুটির দিন। বড়দিন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের তাদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসবে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।