
গাজীপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ অভিযানে তাহরিমা জান্নাত ওরফে সুরভী (২১) নামের এক তরুণীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে টঙ্গীর গোপালপুর টেকপাড়া এলাকায় নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাহরিমা ওই এলাকার সেলিম মিয়ার মেয়ে। তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় ছিলেন। ফেসবুকে তিনি নিজেকে ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে পরিচয় দেন। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও অপহরণের একাধিক অভিযোগ আছে। জাতীয় ছাত্রশক্তির গাজীপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক বশির আহমেদ (অপু) বলেন, ‘তাহরিমা জান্নাত সুরভী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। বিভিন্ন আন্দোলনে সব সময় তিনি আমাদের সঙ্গে সক্রিয় থেকেছেন। আমি তাকে চিনি। তবে তিনি আমাদের কোনো কমিটিতে নেই।’
বশির আহমেদ আরও বলেন, ‘কোনো মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার হয়ে থাকলে, এটা নিয়ে আপত্তি নেই। তবে সরকারসংশ্লিষ্ট কারও বিষয়ে কথা বলার জন্য আটক হয়ে থাকলে, সেটা দুঃখজনক।’
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানায় করা একটি মামলায় তাহরিমা জান্নাত পরোয়ানাভুক্ত আসামি। মামলাটি করেছেন নাইমুর রহমান (দুর্জয়) নামের এক সাংবাদিক। তার অভিযোগ, অর্থ আদায়ের উদ্দেশ্যে অপহরণ ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্ল্যাকমেলিং কার্যক্রমে তাহরিমা জড়িত। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ও সেনাবাহিনীর প্রধানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার অভিযোগ আছে। বৃহস্পতিবার সকালে কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাহরিমা জান্নাতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
তারেক রহমানকে সমর্থন জানিয়ে এনসিপি ছাড়লেন কেন্দ্রীয় নেতা : জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ছেড়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব মীর আরশাদুল হক। একইসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সমর্থন জানান তিনি।
মীর আরশাদুল হক এনসিপিতে কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিবের পাশাপাশি নির্বাহী কাউন্সিলের সদস্য, মিডিয়া সেল ও শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য, পরিবেশ সেলের প্রধান এবং চট্টগ্রাম মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করছিলেন। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম- ১৬ আসনে দলটির মনোনয়নও পেয়েছিলেন তিনি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) সাবেক সহসভাপতি।
ছাত্রজীবনে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার পাশাপাশি বিভিন্ন আন্দোলন-প্রতিবাদেও যুক্ত ছিলেন মীর আরশাদুল হক। এর ধারাবাহিকতায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর তিনি প্রথমে জাতীয় নাগরিক কমিটিতে যুক্ত হন। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণরা এনসিপি গঠন করলে তাতেও যোগ দেন তিনি। ১৭ বছর পর লন্ডন থেকে তারেক রহমানের ফেরার দিন বৃহস্পতিবার সকালে এক ফেসবুক পোস্টে এনসিপি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন মীর আরশাদুল। ‘একটি বিশেষ ঘোষণা’ শিরোনামে লেখা পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আমি এই মুহূর্তে এনসিপি থেকে পদত্যাগ করলাম। চট্টগ্রাম-১৬ সংসদীয় আসনে (বাঁশখালী) এনসিপির হয়ে আমি নির্বাচন করছি না। আজকে একটি বিশেষ দিনে এই ঘোষণাটি দিচ্ছি, যেদিন দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসন শেষে দেশে ফিরলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান। সুস্বাগতম।’
এনসিপি নিয়ে হতাশার কথা জানিয়ে তিনি লেখেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এনসিপির যাত্রা শুরু হয়েছিল। কিন্তু এনসিপির প্রতিষ্ঠা থেকে এখন পর্যন্ত গত ১০ মাসের অভিজ্ঞতায় আমার কাছে প্রতীয়মান হয়েছে যে এই দল ও দলের নেতারা সে প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। যে স্বপ্ন ও সম্ভাবনা দেখে এনসিপিতে যোগ দিয়েছিলাম, তার কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। দল ও বড় অংশের নেতারা ভুল পথে আছেন বলেই মনে করি আমি। এই ভুল পথে আমি চলতে পারি না। এই মুহূর্ত থেকে এনসিপির সঙ্গে আমার কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই। তবে ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকবে। তাদের প্রতি শুভকামনা রইল।’
গণতন্ত্রে উত্তরণ এবং বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন আরশাদুল। তিনি লিখেছেন, ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমার কাছে মনে হচ্ছে, তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি ও জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করার কোনো বিকল্প নেই। জুলাই অভ্যুত্থান ও পরবর্তী সময়ে তারেক রহমানের বিভিন্ন কার্যক্রম ও বক্তব্য পর্যালোচনা করে আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, এই মুহূর্তে সবাইকে ধারণ করে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা ও সক্ষমতা তিনিই রাখেন।’ ‘যখন অন্যান্য দল ধর্ম ও পপুলিজমকে প্রধান এজেন্ডা করে নির্বাচনি বৈতরণী পার হতে চাচ্ছে, তখন তারেক রহমান স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশসহ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে একটি ক্লিয়ার ভিশন জাতির সামনে উপস্থাপন করছেন। আগামী দিনে জনগণের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ, সংস্কৃতি, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন খাতভিত্তিক সুনির্দিষ্ট ও বাস্তবসম্মত সমাধানের কথাও তিনি বলছেন। এই স্মার্ট অ্যাপ্রোচ আমাকে আকৃষ্ট করেছে’ লিখেছেন আরশাদুল হক।
এই নেতা আরও লেখেন, ‘তরুণদের উচিত হবে পপুলিজম বা কোনো হুজুগে প্রভাবিত না হয়ে দেশের সামগ্রিক স্বার্থ, ভবিষ্যত ও কল্যাণের কথা বিবেচনা করে তারেক রহমানের জনকল্যাণমূলক ভিশন বাস্তবায়নে সহযোগিতা ও সমর্থন জানানো। আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে রাখলাম।’
মীর আরশাদুলের পদত্যাগের বিষয়ে এনসিপির কোনো প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। তবে দলটির একটি সূত্র জানায়, এনসিপি নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সমঝোতার আলোচনায় রয়েছে। এ বিষয়ে দলের একটি অংশের সমর্থন থাকলেও অন্য অংশ মানছে না। জামায়াতের সঙ্গে যেতে যারা রাজি নন, তাদেরই একজন মীর আরশাদুল হক। যোগাযোগ করা হলে মীর আরশাদুল হক বলেন, ‘এনসিপি সামগ্রিকভাবে ভুল পথে চলে গেছে। তারা তরুণদের নতুন দল হয়ে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে। এই দলে থেকে আগামী দিনের অনিশ্চয়তা ও কঠিন সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারব না বলে আমার মনে হয়েছে।