ঢাকা শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ভোগান্তিতে খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষ

শীতে কাঁপছে সারাদেশ

* উত্তরাঞ্চলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ * চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা * কুয়াশায় ঢাকায় নামতে না পেরে পাঁচ ফ্লাইট গেল কলকাতা
শীতে কাঁপছে সারাদেশ

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে। পৌষের শুরুতেই উত্তুরে হাওয়া, কুয়াশা এবং ঠান্ডা বাতাসে কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে প্রায় সারা দেশে। যদিও আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এখনও কোথাও শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে না, তবু কমে যাওয়া তাপমাত্রার কারণে সবচেয়ে বেশি কষ্ট ভোগ করছেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। গত বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ঢাকাসহ সব জেলায় তাপমাত্রা কমতে শুরু করে। নদীর অববাহিকা এবং উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা দেখা গেছে। অনেক জায়গায় সূর্যের দেখা মিলেছে দেরিতে। শীতের আকস্মিক তীব্রতায় স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিনি বলেন, শৈত্যপ্রবাহের জন্য টানা দুই দিন বা তার বেশি সময় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রা থাকতে হয়। আপাতত দেশের কোথাও সেই পরিস্থিতি নেই। তবে উত্তুরে হাওয়ার কারণে শীতের অনুভূতি বেশি হচ্ছে।

আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাঝারি থেকে ঘনকুয়াশা পড়তে পারে। রাতের তাপমাত্রা আরও ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমারও আশঙ্কা রয়েছে। দিনের বেলায় আবহাওয়া মূলত শুষ্ক থাকবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১২০ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বর্তমানে উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের একটি বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। একই সময়ে মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, যার বর্ধিতাংশ উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। এ পরিস্থিতির প্রভাবেই দেশের উত্তরাঞ্চল ও নদী অববাহিকায় কুয়াশা ও শীতের অনুভূতি বাড়ছে।

উত্তরাঞ্চলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ : দেশের উত্তরাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। সারা দেশে তাপমাত্রা কমতে থাকায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। গত কয়েকদিনের ঘনকুয়াশা আর হাড়কাঁপানো শীতে উত্তরবঙ্গের দরিদ্র ও অসহায় মানুষেরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, দুধকুমার, গঙ্গাধর ও ধরলা নদীর তীরবর্তী চর এলাকার মানুষ বেশি ভোগান্তিতে রয়েছেন। শীতবস্ত্রের অভাব ও আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিন অনুযায়ী, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও নীলফামারী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি আরও কিছুদিন চলতে পারে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় পাওয়া আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী, ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া রাজশাহীতে ১০.৪, রংপুরে ১১.২, ময়মনসিংহে ১১.৫, দিনাজপুরে ১১.৫, সৈয়দপুরে ১১.৪, তেঁতুলিয়ায় ১১.০, কুড়িগ্রামে ১১.৪ এবং চুয়াডাঙ্গায় ৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ জামিনুর রহমান জানান, জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গতকাল ছিল ৯ ডিগ্রি। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল প্রায় ৯৫ শতাংশ।

কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ব্রহ্মপুত্র ঘাটের মাঝি শাহ আলম জানান, ঘনকুয়াশার কারণে নৌকা চালানো বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। গত দু’দিন ধরে তার কোনো আয়-রোজগার নেই। তিনি আরও বলেন, সরকারি ও বেসরকারিভাবে কিছু শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও চরের অনেক মানুষের কাছে তা এখনও পৌঁছায়নি। তীব্র শীতে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন তারা।

চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড : তীব্র শীতে কাঁপতে শুরু করেছে চুয়াডাঙ্গা। ঘন কুয়াশা, কনকনে ঠান্ডা ও হিমেল বাতাসে জেলাজুড়ে থমকে গেছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। শীতের দাপটে মানুষজনের চলাচল কমে গেছে। গতকাল শুক্রবার সকালে চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। যা চলতি শীত মৌসুমে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আবহাওয়া অফিস জানায়, সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ডের সময় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল প্রায় ৯৫ শতাংশ। একই সঙ্গে জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। এর প্রভাবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন দিনমজুর, ভ্যানচালক, হকার ও নিম্ন আয়ের মানুষ। শীত উপেক্ষা করেই জীবিকার তাগিদে তাদের বের হতে হচ্ছে ঘর থেকে।

শীতের তীব্রতায় শহর ও গ্রাম- উভয় এলাকাতেই স্থবিরতা নেমে এসেছে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না। দুপুরের দিকে সূর্যের দেখা মিললেও ঠান্ডা বাতাসের কারণে স্বস্তি মিলছে না।

শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চুয়াডাঙ্গায় বেড়েছে শীতজনিত রোগের প্রকোপ। সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতিদিন বাড়ছে রোগীর চাপ। শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ায়। সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

একজন হোটেল ব্যবসায়ী বলেন, ‘ভোরে কাজ শুরু করতে হয়। কিন্তু ঠান্ডা পানিতে হাত দিলে সহ্য করা যায় না। তারপরও সংসারের জন্য কাজ থামানো যায় না।’

একজন চা-দোকানি জানান, ‘শীতে মানুষ কম বের হচ্ছে। তাই এখন আগের মতো ভোরে দোকান খুলছি না।’

কুয়াশায় ঢাকায় নামতে না পেরে ৫ ফ্লাইট গেল কলকাতা : ঘনকুয়াশার কারণে মধ্যরাত থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আকাশ ঝাঁপসা ছিল। স্পষ্টভাবে রানওয়ে না দেখতে পেরে পাঁচটি ফ্লাইট কলকাতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়ে অবতরণ করেছে। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাত ১টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত এসব ফ্লাইট কলকাতা বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দর সূত্র জানায়, রাত ১টা থেকে ফ্লাইট চলাচল ব্যাহত হয়। এ সময় কুয়েত থেকে ঢাকাগামী কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট, জাজিরা এয়ারওয়েজের দুইটি ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট ঢাকায় নামতে না পেরে কলকাতায় চলে যায়। এছাড়া, রাত সাড়ে ৩টার দিকে দাম্মাম থেকে ঢাকাগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটিও অবতরণে ব্যর্থ হয়ে চলে যায় কলকাতা। একই কারণে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের দুবাই থেকে ঢাকাগামী, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কুয়ালালামপুর, গুয়াঞ্জু, এয়ার অ্যারাবিয়ার শারজাহ এবং সালাম এয়ারের মাস্কাট থেকে আগত ফ্লাইটগুলো নির্ধারিত সময়ের ২ ঘণ্টা থেকে ৪ ঘণ্টা বিলম্বে অবতরণ করেছে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এসএম রাগীব সামাদ বলেন, কুয়েত থেকে আগত কুয়েত এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট ডাইভার্ট করে কলকাতা পাঠানো হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত সারাদেশের সম্ভাব্য পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, আজ সকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাঝারি থেকে ঘনকুয়াশা সৃষ্টি হতে পারে, যা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এতে সড়ক যোগাযোগের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একইসঙ্গে কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে অনেক এলাকায় দৃশ্যমানতা কমে যেতে পারে এবং শীতের অনুভূতিও বাড়তে পারে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত