
কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদের দান বাক্সে এবার ৩ মাস ২৭ দিনে ১৩টি দান বাক্স খুলে পাওয়া গেছে ১১ কোটি ৭৮ লাখ ৪৮ হাজার ৫৩৮ টাকা। এছাড়াও রয়েছে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার ও বিদেশি মুদ্রা। দানের এইসব অর্থ মসজিদের স্থানে আন্তর্জাতিক মানের ইসলামী কমপ্লেক্স বানানোসহ জেলার দরিদ্র-অসহায় রুগীদের চিকিৎসাকাজে ব্যয় হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
গতকাল শনিবার মসজিদের লোহার দানবাক্স খুলতেই দেখা যায় শুধু টাকা আর টাকা। এসব টাকা বস্তায় ভরে নেওয়া হয় ওই মসজিদেরই দোতলায়। পরে, আইনশৃঙ্খলা বাহীনির কড়া নিরাপত্তায় মসজিদের মেঝেতে বসে টাকা গুণেন প্রায় ৪০০ মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষক ও শতাধিক ব্যাংক কর্মকর্তা। তিন থেকে চারমাস পরপরই এমন দৃশ্যের দেখা মিলে কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদে। এবার ৩ মাস ২৭ দিন পর গতকাল শনিবার সকালে মসজিদের ১৩টি দানবাক্স খুলে বের করা হয় ৩৫ বস্তা টাকা। এছাড়াও রয়েছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা, রূপা ও স্বর্ণালংকার।
এর আগে চলতি বছরের ৩০ আগস্ট এ মসজিদের দান বাক্সে ৪ মাস ১৭ দিনে পাওয়া গিয়েছিল ৩২ বস্তা টাকা। দিন শেষে গণনা করে যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ১২ কোটি ৯ লাখ ৩৭ হাজার ২২০ টাকা। এছাড়াও পাওয়া যায় বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ-রূপার অলংকার ও বৈদেশিক মুদ্রা। এ মসজিদে সঠিক নিয়তে মানত করলে রোগ-বালাই দূর হওয়াসহ বিভিন্ন মনোবাসনা পূর্ণ হয়। এমন বিশ্বাস থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সব ধর্মের মানুষ প্রতিনিয়ত মানতের নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার, বৈদেশিক মুদ্রা, গরু, ছাগল, হাস, মুরগীসহ বিভিন্ন সামগ্রী দান করে থাকেন। এছাড়াও দেশ ও দেশের বাহির থেকে মসজিদের ওয়েবসাইটে অনলাইনে টাকা দান করে থাকেন মানতকারীরা।
চট্টগ্রামের চকরিয়া থেকে পাগলা মসজিদে আসা জাফর আলী বলেন, এ মসজিদের নাম অনেক শুনেছি। এখানে দান করলে নাকি মনের আশা পূরণ হয়। আমিও আমার মনের আশা পূরণের জন্য এসে দান করে গেলাম। নরসিংদী থেকে আসা কমলা বেগম বলেন, আমি মানত করেছিলাম একটা খাসি দিব মনের আশা পূরণ হলে। আমার আশা পূরণ হয়েছে, তাই খাসি দিয়ে গেলাম এসে। পাশাপাশি পাগলা মসজিদে নামাজও পড়ে গেলাম।
এরইমধ্যে দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এই পাগলা মসজিদ। বর্তমানে মসজিদের ব্যাংক একাউন্টে শতকোটি টাকারও উপরে জমা হয়েছে। যা দিয়ে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান মসজিদের সভাপতি কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা। জনশ্রুতি রয়েছে, প্রায় আড়াইশ বছর আগে পাগলবেশী এক আধ্যাত্মিক পুরুষ খরস্রোতা নরসুন্দা নদীর মধ্যস্থলে মাদুর পেতে ভেসে এসে বর্তমান মসজিদ এলাকা জেলা শহরের হারুয়ায় থামেন। তাকে ঘিরে সেখানে অনেক ভক্তকুল সমবেত হন। ওই পাগলের মৃত্যুর পর সমাধির পাশে এই মসজিদটি গড়ে ওঠে। পরে কালক্রমে এটি পরিচিতি পায় পাগলা মসজিদ নামে।