
জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ৬ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়েছে। এ মামলায় তৃতীয় দিনের মতো দেওয়া জবানবন্দিতে ৩০ আসামির ব্যক্তিগত দায় উপস্থাপন সম্পন্ন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা রুহুল আমিন। গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর সদস্য অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ সাক্ষ্য পেশ করেন তিনি। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্য জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
এদিন বেলা সোয়া ১১টা থেকে তদন্ত কর্মকর্তা রুহুল আমিনের জবানবন্দি শুরু হয়। প্রথমেই তিনি অবশিষ্ট ১৪ আসামির ব্যক্তিগত দায় তুলে ধরেন আদালতের সামনে। এরপর এ সংক্রান্ত জব্দ করা ভিডিওর তথ্য দেন। আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড ঘিরে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন নিয়ে ইউটিউব বা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত বিবিসি বাংলা, আল জাজিরাসহ দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী খবর-প্রামাণ্যচিত্র কোথায় থেকে কীভাবে সংগ্রহ করেছেন, তা জানান তিনি। তবে তার সাক্ষ্য সম্পন্ন না হওয়ায় প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৬ জানুয়ারি ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল। ওই দিন এ মামলা সংশ্লিষ্ট পাওয়া সব অডিও-ভিডিও প্রদর্শনের কথা রয়েছে।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর সহিদুল ইসলাম সরদার। সঙ্গে ছিলেন ছিলেন প্রসিকিউটর আবদুস সোবহান তরফদার।
এদিকে, গতকাল সোমবার সকালে কারাগার থেকে ছয় আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তারা হলেন- এএসআই আমির হোসেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী, রাফিউল হাসান রাসেল ও আনোয়ার পারভেজ।
ভিসি হাসিবুর রশীদসহ ২৪ জন এখনও পলাতক রয়েছেন। তাদের হয়ে আইনি লড়াই করছেন সরকারি খরচে নিয়োগ পাওয়া চার আইনজীবী। সাক্ষ্যগ্রহণের সময় তারাও উপস্থিত থাকেন।
এর আগে, গত রোববার পলাতক হাসিবুর রশীদসহ ১৬ আসামির দায় উপস্থাপন করেন তদন্ত কর্মকর্তা রুহুল আমিন। তার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ১৮ ডিসেম্বর। তিনি এ মামলার সর্বশেষ বা ২৫ নম্বর সাক্ষী। যদিও ৬২ জনকে সাক্ষী করেছে প্রসিকিউশন।
১০ ডিসেম্বর জবানবন্দি দেন বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা। একই দিন তদন্ত সংস্থার রেকর্ড সংরক্ষণকারী এসআই মো. কামরুল হোসেনের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
তারকা সাক্ষী হিসেবে ৯ ডিসেম্বর সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। জবানবন্দিতে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পুরো ঘটনা বর্ণনা দেন তিনি। সমন্বয়কদের তুলে নিয়ে কোথায় রাখা হয়েছিল তা বলতে গিয়ে নতুন এক সেইফ হাউজের কথাও জানান। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সময় টিভি, ডিবিসি, ৭১ টিভিসহ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলের ‘নোংরা ভূমিকা’ পালন করেছে বলে উল্লেখ করেন। তাদের সামনে বসেই স্ক্রল বলতেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। আর সেই কথাই টিভি চ্যানেলে প্রচার করা হতো বলেও ট্রাইব্যুনালের কাছে অভিযোগ করেন এই জুলাইযোদ্ধা। ২২ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন তিনি।
চলতি বছরের ২৭ আগস্ট সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। ওই দিন সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
৬ আগস্ট ৩০ আসামির বিরুদ্ধে ফর্মাল চার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২। পলাতক আসামিদের পক্ষে ২২ জুলাই স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী হিসেবে চারজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। অভিযোগ আমলে নেওয়া হয় ৩০ জুন। এর ছয়দিন আগে তথা ২৪ জুন চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত সংস্থা।