ঢাকা বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

সরিষা খেতে মৌচাষ করে সাফল্য

সরিষা খেতে মৌচাষ করে সাফল্য

কুষ্টিয়াসহ পার্শ্ববর্তী ৬ জেলায় সরিষা খেতে মৌমাছি চাষ করে মধু আহরণ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এতে একদিকে যেমন বিপুল পরিমাণ মানসম্মত খাঁটি মধু উৎপাদন হয়েছে, অন্যদিকে ক্ষেতে মৌমাছি বিচরণের ফলে পরাগায়নের মাধ্যমে বাড়ছে সরিষার ফলন।

কুষ্টিয়ার বিত্তিপাড়ায় কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের দু’পাশজুড়ে বিস্তীর্ণ সরিষা খেত। এর মাঝেই ১ মাস আগে বসানো হয়েছে মৌমাছি চাষের ২০০ বাক্স। মৌমাছির দল আশপাশের সরিষা খেতে উড়ে উড়ে মধু সংগ্রহ করে বাক্সবন্দি মৌচাকে জমা করছে। আর সেখান থেকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা হয়েছে মানসম্মত খাঁটি সুস্বাদু মধু।

মধু খামারি শাহজাহান আলী জানান, দেড় মাস ধরে এই মধু সংগহ চলবে। তিনি আশা করছেন এর থেকে কমপক্ষে ৪ টন মধু উৎপাদন হবে। তিনি জানান, স্থানীয়ভাবে এ মধু ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। তবে উৎপাদিত মধুর বেশির ভাগটায় ভারতে রপ্তানি করা হয়। পরে এই মধু ভারতের ডাবর কোম্পানিসহ বিভিন্ন কোম্পানির নামে বাজারজাত হয়। তখন বাংলাদেশে সেই মধু কিনতে হয় ৭০০-৮০০ টাকা কেজি দরে। শাহজাহানের এই মৌ খামার থেকে প্রতিদিনই স্থানীয় মানুষ মধু কিনে নিয়ে যায়। অনেকে শখের বসেও এই খামার দেখতে আসেন। মধুতে বর্তমানে শাহজাহানের মধুময় সুখের সংসার।

স্থানীয় কৃষক হারুন আলী জানান, মৌচাষের এই দৃশ্য তাদের উদ্বুদ্ধ করছে। মৌচাষে তাদের মধেও আগ্রহ তৈরি হয়েছে। আগামীতে তারাও এই পদ্ধতিতে মধু আহরণের উদ্যোগ নেবেন বলে জানান। এলাকার আরেক কৃষক বিরাজুল ইসলাম বলেন, সরিষা খেতে মৌমাছি চাষ করে মধু আহরণের বিষয়টি আগে তাদের জানা ছিল না। সরকারি সহযোগিতা পেলে তারাও মৌচাষে উদ্যোগী হবে বলে জানান। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, শুধু বিত্তিপাড়া নয় কুষ্টিয়ার বড়িয়াসহ পশ্চিমের ছয় জেলা তথা মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, যশোর ও কুষ্টিয়ায় ২০০০ বাক্স বসিয়ে এই মৌসুমে সরিষা ক্ষেতে মৌ চাষ করা হয়েছে। এর থেকে উৎপাদিত হবে কমপক্ষে ৫০ টন মধু। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক জানান, চলতি মৌসুমে ও কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও যশোর জেলায় মোট ৫৪ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। তবে মাত্র ১০-১২টি স্থানে মৌমাছি চাষ করে মধু আহরণ করা হয়েছে। সব সরিষা খেত মৌচাষের চাষের আওতায় আনলে বিপুল পরিমাণ মধু আহরণের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। তিনি বলেন, এটি একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে দেখছে সরকার। এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রূপালি খাতুন জানান, খেতে পাশের লাখ লাখ মৌমাছি থাকায় তারা ফুলে ফুলে বসে সুষ্ঠু পরাগায়নে সাহায্য করছে। এতে সরিষার ফলন ২৫ থেকে ৩০ ভাগ বেড়ে যাবে।

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সূফি রফিকুজ্জামান জানান, সরিষা খেতে মৌচাষের মত সম্ভাবানাময় খাতকে তারা যুগোপযোগী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা চিন্তাভাবনা করছেন। আগামীতে বাণিজ্যিকভিত্তিতে এই চাষ শুরু হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত