
হাড় কাঁপানো শীতে কাঁপছে দেশ। বর্তমানে দেশের ২১ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশের অন্তত ১৩টি স্টেশনে আজ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রেকর্ড করা হয়েছে, যার মধ্যে গোপালগঞ্জে দেশের সর্বনিম্ন ৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী পাঁচ দিনের শুরুর দিকে শীতের এই তীব্রতা আরও বাড়তে পারে। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবির-এর দেওয়া পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়া অফিস জানায়, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার মধ্যে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সেই সঙ্গে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশের অনেক জায়গায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে।
সংস্থাটি জানায়, দেশের মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলাসহ খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধানের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং কোথাও কোথাও তা অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। সারাদেশে কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে শীতের অনুভূতি বিরাজমান থাকতে পারে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সেই সঙ্গে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশের অনেক জায়গায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা দুপুর পর্যন্ত কোথাও কোথাও অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে। এছাড়া সারাদেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। সারাদেশে কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে শীতের অনুভূতি বিরাজমান থাকতে পারে।
আগামীকাল শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সেই সঙ্গে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এছাড়া সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সেই সঙ্গে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এছাড়া সারাদেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গোপালগঞ্জে : গোপালগঞ্জে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এই মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বুধবার সকাল ৬টায় এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ এবং কুয়াশায় দৃষ্টিসীমা ২০০ মিটার। বিষয়টি নিশ্চিত করেন গোপালগঞ্জ আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবু সুফিয়ান।
বুধবার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জেলাজুড়ে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে জনপদ। বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বালিয়ে আগুন পোহাচ্ছে অনেকেই। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নদী তীরবর্তী মানুষেরাসহ নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। তারপরেও জীবিকার তাগিদে হাড়কাঁপানো শীতকে উপেক্ষা করে খুব সকালে কাজের সন্ধানে রাস্তায় বের হচ্ছেন খেটে খাওয়া অনেকেই। হাসপাতালে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। গোপালগঞ্জ শহরের রিকশাচালক আব্দুল মজিদ বলেন, হিমেল হাওয়ায় রিকশা চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। তীব্র শিতের কারণে অনেকেই বাসা থেকে বের হচ্ছে না। এজন্য আমাদের আয় অনেকটা কমে গেছে। সদরের রঘুনাথপুর ইউনিয়নের কৃষক অবনি মন্ডল বলেন, তীব্র শিতের কারণে আমরা জমিতে যেতে পারছি না। বর্তমানে ইরি ধানের সময়, কাজেরও অনেকচাপ। তারপরেও আমরা শিতের কারণে জমিতে যেতে চাচ্ছি না। এদিকে শিতের কানে শ্রমিক ও পাচ্ছি না। গোপালগঞ্জ আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবু সুফিয়ান জানিয়েছেন, গোপালগঞ্জে বুধবার সকাল ৬টায় মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতা ৯৭%! কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ, দৃষ্টিসীমা ২০০ মিটার। আরও দুই থেকে তিন দিনের মতো জেলায় এমন আবহাওয়া থাকতে পারে।
চুয়াডাঙ্গায় হাড় কাঁপানো শীত, বিপর্যস্ত জনজীবন : হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গা। এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা হঠাৎ করে ৪ ডিগ্রিরও বেশি কমে যাওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে মানুষের স্বাভাবিক জনজীবন। মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন ছিন্নমূল, অসহায় ও দিন আনা দিন খাওয়া মানুষজন।
গতকাল সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। চলতি মৌসুমে এটিই জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ। জেলার ওপর দিয়ে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা আগামী দু-এক দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এর আগে, মঙ্গলবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমেছে ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা মানুষের জীবনযাত্রায় হঠাৎ করেই চরম দুর্ভোগ ডেকে এনেছে।
ভোর থেকেই ঘন কুয়াশা ও হিমশীতল বাতাসে রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা হয়ে পড়েছে। প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বের হতে চাইছেন না। তবে জীবিকার তাগিদে ঠান্ডা উপেক্ষা করে কাজে বের হতে হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষদের। জেলার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ও চায়ের দোকানের সামনে খড়কুটো, কাঠ ও পুরনো টায়ার জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা গেছে নিম্নআয়ের মানুষদের।
গ্রাম থেকে শহরে আসা ভ্রাম্যমাণ মুরগি বিক্রেতা ইয়ারুল আলি বলেন, ভোরে বাইসাইকেল নিয়ে শহরে ঘুরে ঘুরে হাঁস-মুরগি বিক্রি করি। সাধারণত বেলা ১১টার মধ্যেই বাড়ি ফিরে যাই। কিন্তু গত দুইদিন তীব্র শীতের কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। বিক্রি কম, ফিরতে দুপুর হয়ে যাচ্ছে। দিনমজুররা বলেন, এক দিন কাজ না করলে সংসার চলবে না। তাই প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যেও কাজে বের হয়েছি। আজ ঠান্ডা বেশি, হাত-পা অবশ হয়ে আসছে। তারপরও পরিবারের জন্য কাজ করতে হচ্ছে।
৭০ বছর বয়সী ভ্যানচালক মিনারুল হক বলেন, খুব সকালে বাড়ি থেকে বের হয়েছি। মনে হচ্ছে হাত-পা বরফ হয়ে যাচ্ছে। যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। হালকা বাতাসেই শরীর কাঁপছে। এভাবে আরও কয়েকদিন চললে সকালে বের হওয়া মুশকিল।