ঢাকা রোববার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ম্যাটস শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ, আহত ১৮

‘আবেগে সচিবালয় অভিমুখে লংমার্চ’
ম্যাটস শিক্ষার্থীদের ওপর  লাঠিচার্জ, আহত ১৮

উচ্চশিক্ষার সুযোগ, কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের শূন্য পদে নিয়োগসহ চার দফা দাবিতে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের (ম্যাটস) শিক্ষার্থীরা জনপ্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে যান। গতকাল রোববার বিকাল ৫টায় সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচির কারণে নিরাপত্তার স্বার্থে সচিবালয়ের এক গেট খোলা রেখে তিনটি গেট বন্ধ করা হয়। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সচিবালয় থেকে বের হওয়ার পথে ভোগান্তিতে পড়েন। পরে সচিবালয়ের চারপাশের গেটে অবস্থানরত ম্যাটসের শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। গতকাল রোববার বিকালে শিক্ষা ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এতে সাংবাদিকসহ ১৮ জন আহত হয়েছেন। বিকাল সোয়া ৫টার দিকে আহত অবস্থায় তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। আহত শিক্ষার্থীরা হলেন- নওগাঁ ম্যাটসের মেহরাব, প্রাইম ম্যাটসের এরশাদুল হক, শ্যামলী ম্যাটসের জাহিদুল হাসান, সোহাগ, আমানুল্লাহ, ট্রমা ম্যাটসের সায়মা, সুমাইয়া খাতুন, তাহমিনা আক্তার তমা, বরিশাল জমজম ম্যাটসের মোহাম্মদ রাসেল, গাজীপুর ম্যাটসের শিহাব, কুষ্টিয়া ম্যাটসের আরাফাত, জাহিদ হাসান, টাঙ্গাইল সোহরাব উদ্দিন ম্যাটসের নাঈম, বাগেরহাট ম্যাটসের সায়েম ও ব্রেকিং নিউজের স্টাফ রিপোর্টার আনোয়ারুল ইসলাম শিমুল।

ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, সচিবালয়ের সামনে থেকে আহত অবস্থায় ১৮ জনকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে আনা হয়। ম্যাটস শিক্ষার্থীরা এর আগে গতকাল বিকাল ৪টা ১৫ মিনিটের দিকে শাহবাগ মোড় থেকে সচিবালয় অভিমুখে লং মার্চ শুরু করেন। এসময় বাধা দিতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে লং মার্চ শুরু করেন তারা। শিক্ষার্থীদের দাবি, আশ্বাসের নামে আবারো মুলা ঝোলানোর চেষ্টা করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আমরা আজই ম্যাটস বৈষম্যের সুরাহা চাই, আর রাজপথে এসে আন্দোলন করতে চাই না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের পরও কেন সচিবালয়ের দিকে যাচ্ছেন জানতে চাইলে শরিফুল ইসলাম নামক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের শাহবাগে বসিয়ে রেখে মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করলে হবে না। আমাদের নিয়ে বৈঠক করতে হবে। সবার সামনে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা দাবি মানার ঘোষণা দিলেই আমরা ঘরে ফিরে যাব।

পুলিশের তাড়া খেয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কদম ফোয়ারা ও মৎস্য ভবন হয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের দিকে চলে যান। সিরাজগঞ্জ সরকারি ম্যাটসের শিক্ষার্থী এবং ম্যাটস শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদের সিনিয়র সমন্বয়ক আহসান হাবিব বলেন, পুলিশ আমাদের ওপর লাঠিপেটা করেছে।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে শাহবাগের সড়ক অবস্থান নেন ম্যাটস শিক্ষার্থীরা। সাড়ে ১১টার দিকে তারা অবস্থান নেন শাহবাগ মোড়েই অবস্থিত জাতীয় জাদুঘরের সামনের সড়কে। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার সড়কটি বন্ধ হয়ে যায়। সেখান থেকে বিকালে লংমার্চ শুরু করেন ম্যাটস শিক্ষার্থীরা। তবে লংমার্চ শুরুর আগে দুপুর ২টার দিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে শাহবাগে আসেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা তুহিন ফারাবি। তিনি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলার পর সাধারণ ম্যাটস শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদের আজহারুল হক রামিম, মুজাহিদুল ইসলাম, হাসিবুল ইসলাম শান্ত, আহমদ উল্লাহ মানসুর ও শামীম মিঞাকে নিয়ে সচিবালয়ে যান। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে হাসিবুল ইসলাম শান্ত বলেন, আমরা সচিবালয়ে আছি। কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলছি। তারা আশ্বাস দিয়েছেন কাল-পরশুর মধ্যে প্রজ্ঞাপন হবে।

দেখা যাক কী হয়, এখনও আলোচনা চলছে। কিন্তু আলোচনা চলার মধ্যেই লংমার্চ নিয়ে সচিবালয় অভিমুখে রওনা হন শিক্ষার্থীরা। এর কারণ জানতে চাইলে হাসিবুল ইসলাম শান্ত বলেন, আমাদের কিছু ছোট ভাই আবেগে এটা করে ফেলেছে। আমরা এখানে আসার সময় তারা মিটিংয়ের ফল আধা ঘণ্টার মধ্যে জানাতে বলেছিল। কিন্তু প্রায় এক ঘণ্টা হয়ে গিয়েছিল; আর আমাদের তারা বারবার কল দিচ্ছিল। কিন্তু মিটিংয়ে থাকায় আমরা তা ধরতে পারিনি। এ কারণে তারা লংমার্চ নিয়ে চলে আসে। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের সরিয়ে দেয়।মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি বলেন, সেখানে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তারা কবে প্রজ্ঞাপন জারি করবেন, সে বিষয়ে কিছু বলেননি; সময় চেয়েছেন। প্রসঙ্গত, দেশে ১৬টি সরকারি এবং ৫১টি বেসরকারি অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল আছে। এসব ট্রেনিং স্কুল থেকে তিন বছরের কোর্স সম্পন্ন করলে শিক্ষার্থীরা ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি ডিগ্রি পান। এরা বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত