ঢাকা রোববার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সিগারেটে অতিরিক্ত করারোপে রাজস্ব বেড়েছে ৩০ শতাংশ

কমেছে গ্রহণ হার
সিগারেটে অতিরিক্ত করারোপে রাজস্ব বেড়েছে ৩০ শতাংশ

চলতি অর্থবছরে প্রথমবারের মতো দুই দফায় সিগারেট ও তামাক পণ্যের উপর করারোপ করেছে সরকার। এতে গত বছরের ফেব্রুয়ারির তুলনায় চলতি বছরে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ রাজস্ব বেড়েছে। একইসঙ্গে সিগারেট গ্রহণের হার এক-তৃতীয়াংশ কমেছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি) মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী। গতকাল শনিবার রাজধানীর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের উন্নয়ন সমন্বয়ের আয়োজিত ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সিগারেটে কার্যকর করারোপে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব তথ্য জানান। বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের সিগারেটের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে জেটিআই ও বিএটি। দেশে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বিএটির নিম্নমানের সিগারেট আহরণ ছিল ৫৯০ কোটি ৮২ লাখ ২৭ হাজার ২০০ শলাকা। এই বছরের গত ১৫ দিনে তা কমে এসেছে ৮৪ কোটি ১৬ লাখ ৯৮ হাজার ২০০ শলাকা। এর মানে আমরা নিম্নমানের সিগারেটে অর্ধেকেরও কম কমিয়ে ফেলেছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল নিম্নমানের সিগারেটের উৎপাদন কামিয়ে আনা। আর তা তখনই সম্ভব হবে যখন চাহিদা কমে যাবে। মধ্য, উচ্চ ও প্রিমিয়াম এই তিন ধরনের সিগারেট গ্রহণ বেড়েছে, সাথে কর আহরণও বেড়েছে।

এই কদিনের এই বিএটি ও জেটিআই কোম্পানি থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ হাজার ১২৪ কোটি। গত বছর পুরো ফেব্রুয়ারি মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৩ হাজার ১৩১ কোটি। অর্থাৎ আমাদের হাতে এখনও ১৫ দিন বাকি। আশা করছি আমরা, ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব পাবো। সেই অনুযায়ী আমাদের রাজস্ব বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। আর গ্রহণ কমিয়ে আনতে পেরেছি এক-তৃতীয়াংশে। করারোপের পাশাপাশি সচেতনতা বাড়ানো তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, করারোপ একটি পদ্ধতি তবে এর পাশাপাশি অন্য বিষয়গুলোতেও গুরুত্বারোপ করতে হবে। জীবন যার, তার নিজের প্রতিও যত্নশীল হতে হবে। তা না হলে যতই করারোপ করা হোক না কেন, এটি কোনো কাজে আসবে না। আমরা সিগারেটের বিশ চেনাতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করিনি। এটা নিয়ে কাজ চলছে। অনেকেই শলাকা হিসেবে সিগারেট বিক্রি বন্ধের কথা বলেছেন। কিন্তু আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থায় শলাকা হিসেবে বিক্রি বন্ধ করা কঠিন। এ সময় তিনি সকল ক্ষেত্রে নিকোটিন টেস্টের ব্যবস্থা করার বিষয়ে বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি থেকে শুরু করে চাকরির সকল ক্ষেত্রে এটি করা গেলে ধূমপানের হার বহুলাংশেই কমে আসবে বলেও মত দেন তিনি। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ট্যাক্স পলিসির প্রথম সচিব মির্জা মোহাম্মদ মামুন সাদাত বলেন, এনবিআরের নীতি হলো যেকোনো ইন্ডাস্ট্রিকে অনুপ্রেরণা যোগানো তবে তামাকের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। সবাই এখানে ট্যাক্স বাড়াতে চায়। যেন, স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় কমে। আমরা তামাকের উপর সর্বোচ্চ করহার নির্ধারণ করা আছে। তারা ৪৫ শতাংশ নিট ট্যাক্স দেয়, সেলের উপর ৩ শতাংশ ট্যাক্সসহ আরো বেশ কিছু ট্যাক্স করেছে। কর ও দামবৃদ্ধি একটি পদ্ধতি এছাড়াও আরো অনেক পদ্ধতি রয়েছে। ওই বিষয়গুলোতেও পলিসি এডভোকেসিতে কাজ করা ব্যক্তি ও সংগঠনকে ভূমিকা পালন করতে হবে। সিটিএফকের লিড পলিসি অ্যাডভাইজার ও বিসিআইসির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হওয়া শুরু করেছে। এনবিআর কর্তাদের সাথে আমাদের ইন্টারেকশন হচ্ছে যা অত্যন্ত ইতিবাচক একটি বিষয়। আমরা কর বৃদ্ধিকে একমাত্র উপায় মনে করি না।

সচেতনতা তৈরি ও স্বাস্থ্যের গুরুত্ব বিবেচনা করাও জরুরি। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে যেন নতুন করে কেউ সিগারেট খাওয়া শুরু না করে। এটা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আর এটি করার অন্যতম উপায় তামাককে ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাওয়া। উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. নিজাম উদ্দিন বলেন, এক সময় তরুণরা তাদের সত্তরোর্ধ্ব বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে আসতো। আর এখন বাবারা তাদের তরুণ সন্তানদের হৃদরোগের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে আসছে। বর্তমানে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে আসা রোগীদের ৪০ শতাংশই তরুণ। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে তামাক গ্রহণ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। এ সময় আলোচনায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শলাকা হিসেবে সিগারেট বিক্রি বন্ধ এবং তামাক উৎপাদন বন্ধ করার বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

কর্মশালায় সভাপতির বক্তব্যে বিআইডিএসের রিসার্স ডিরেক্টর ড. এস এম জুলফিকার আলী বলেন, আমাদের পর্যায়ক্রমে দাম এমন পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে যেন, শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি প্রাপ্ত বয়স্করাও ভাববে এটা তারা কতটা এফোর্ট করতে পারবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সিগারেটের যে দাম বাড়ে তা তারা অন্যান্য খরচের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে নেন। এই সুযোগটা যেন না পায় সেভাবে দাম নির্ধারণ করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত