শাহনাজ আক্তার পারভীন ওরফে শানু সন্তানের অপেক্ষায় ভারসাম্যহীন। ১২ বছর ধরে পায়ে শিকল বাধা অবস্থায় জীবন কাটাচ্ছেন। তারও ছিল একটি সুখের সংসার ও সোনালি অতীত। তার জীবনের গল্প একটি গভীর মানবিক সংকটের প্রতীক বলে মনে করেন স্থানীয়রা ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা পৌর শহরের নন্দীবাড়ীর মৃত আব্দুস সালাম ও আসমা বেগম দম্পতির মেয়ে শানু। ছোটবেলা থেকেই তার মেধা এবং আচরণ প্রতিবেশিদের মাঝে প্রশংসা কুড়িয়েছিল।
২০০৬ সালে জেলার তারাকান্দায় বিয়ে দেয়া হলে একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয় তাদের কোলে। কিন্তু এ সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি বিয়ের দেড় বছর পরে তাদের বিচ্ছেদ হয়। স্বামীর কাছে রেখে দেয়া একমাত্র প্রিয় সন্তানের শূন্যতা তাকে ধীরে ধীরে মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত করে ফেলে। একটা সময় সন্তানের শোকে পাগল হয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে থাকেন। আর পরিবারের অর্থিক অসচ্ছলতা কারণে ভালো চিকিৎসা না পেয়ে শানুর মানসিক পরিস্থিতি দিন দিন আরো খারাপ হতে থাকে। বাধ্য হয়ে পরিবারের লোকজন ঘরবন্দি করে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখে শানুকে। এ অসহায় মেয়েটির ভাগ্যে কখন জোটেনি সরকারী অনুদান বা সহায়তা।
প্রতিবেশীরা জানান, শানুর একটা ভাই দর্জিও কাজ করে। পরিবারের আয়ের কোন উৎস নেই। ভাইয়ের সংসারে ৪ জন সদস্য। মানসিক ভারসাম্যহীন বোন ও মাকে সে লালন-পালন করে। শানুকে শিকলে বেঁধে না রাখলে বিভিন্ন জায়গায় ছুটে যায়। তার মা মরে গেলে সেবা করার আর কেউ থাকবে না। তাদের ধারণা ভালো চিকিৎসাসেবা পেলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে শানু।
শানুর মা ষাটোর্ধ আসমা বেগম ক্ষোভ নিয়ে বলেন, টাকার অভাবে মেয়েকে ভালো চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না। সারাদিন মেয়ের পেছনে লেগে থাকতে হয়। আমি মরে গেলে কে দেখাশোনা করবে তাকে।
মুক্তাগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে তিনি আগে অবগত ছিলেন না। খোঁজখবর নিয়ে তাকে সরকারীভাবে সহায়তার ব্যবস্থার কথা জানান তিনি।