ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ঈদকে কেন্দ্র করে চাহিদা বাড়ছে হোসিয়ারি পণ্যের

টার্গেট ২০০ কোটি টাকা
ঈদকে কেন্দ্র করে চাহিদা বাড়ছে হোসিয়ারি পণ্যের

চলতি বছরে রোজার ঈদকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের হোসিয়ারি পণ্যের বেশ চাহিদা বেড়েছে। রমজানের শুরু থেকেই বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন মোকাম থেকে পাইকারদের আগমনে সরগরম হোসিয়ারি পল্লী। নয়ামাটির ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছর হোসিয়ারি ব্যবসায় মন্দাভাব থাকলেও এ বছর বেচাকেনা ভালো।

বাংলাদেশ হোসিয়ারি এসোসিয়েশন এর সভাপতি আলহাজ্ব বদিউজ্জামান বদু এ বছর ২০০ কোটি টাকার হোসিয়ারি পণ্য বিক্রি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বদিউজ্জামান বদুর ভাষ্যমতে, গত সরকারের সময় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ছিল অস্থিতিশীল। অনেক ব্যবসায়ীদের গুনতে হয়েছে লোকসান। এরপরও গত বছর হোসিয়ারি সেক্টরে ১৫০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছিল। এবার ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এই হোসিয়ারি সেক্টর থেকেই নারায়ণগঞ্জের গার্মেন্টস শিল্পের উৎপত্তি। হোসিয়ারি ব্যবসায়ীরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। সরকারের তরফ থেকে তাদের ক্ষুদ্র ঋণ প্রয়োজ্বন। এই শিল্পে অনেক সমস্যা রয়েছে। দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে হোসিয়ারি শিল্পের আছে অপার সম্ভাবনা। তবে সম্ভাবনা যেমন অনেক বেশি, তেমনি সংকটও প্রকট। জেলা শহরের তিনটি এলাকায় ঘিঞ্জি পরিবেশে চলছে হোসিয়ারি শিল্প। একটুতেই বড় দুর্ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। বেশির ভাগ উদ্যোক্তা হোসিয়ারি ব্যবসা শুরু করেন অনেকটা শূন্য হাতে। জামানত দিতে না পারায় পান না ব্যাংকঋণ। ফলে অনেকে চড়া সুদে অন্যত্র থেকে ঋণ নেন। ওই সুদ টানতে গিয়ে ব্যবসায় সুবিধা করতে পারেন না। লোকসান গুনতে গুনতে একটা সময় ব্যবসা গুটিয়ে নেন তারা।

এ খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অল্পস্বল্প পৃষ্ঠপোষকতা পেলেই হোসিয়ারি শিল্প হয়ে উঠতে পারে দেশের অর্থনীতির বড় এক শক্তি। সামান্য ঋণ আর ভালো পরিবেশের ব্যবস্থা করা এবং খুচরা যন্ত্রপাতি আমদানির ওপরে শুল্ক কমালেই এ খাতে রপ্তানিমুখী কারখানার সংখ্যা হুড়হুড় করে বাড়বে। আসবে হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা।

প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জে হোসিয়ারি শিল্পের যাত্রা শুরু প্রায় ১০০ বছর আগে। অল্প যন্ত্রপাতি আর সামান্য পুঁজি নিয়েই ব্যবসা শুরু করা যায়। চাইলে শ্রমিক না নিয়ে একাই চালানো যায় ব্যবসা। এমন কিছু অনন্য সুবিধার কারণে হোসিয়ারি শিল্পের প্রসার ঘটেছে দ্রুতই। কর্মসংস্থান হয়েছে চার লাখের বেশি শ্রমিকের। বর্তমানে বছরে চার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা এটি। হোসিয়ারি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিভিন্ন দেশে।

শহরের নয়ামাটি এলাকা আর হোসিয়ারি শিল্পের যাত্রা শুরুর কাহিনি এক সূত্রে গাঁথা। এলাকাটি শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষারযুক্ত পানির নদীর মধ্যে শীতলক্ষ্যা অন্যতম। এ পানিতে আয়রন ও খনিজ্ব পদার্থের পরিমাণ কম। শীতলক্ষ্যা নদীর পানি ছিল খুবই স্বচ্ছ। এমন পানিতে ডাইং করা কাপড় ধবধবে সাদা হয়ে যায়।

সেই কাপড়ের তৈরি স্যান্ডো গেঞ্জি ও হাফহাতা গেঞ্জির খ্যাতি শুধু দেশজোড়া নয়, বিদেশেও এর কদর চোখে পড়ার মতো। নারায়ণগঞ্জে হোসিয়ারি শিল্পের প্রসারের অন্যতম কারণ ছিল এটি। তা ছাড়া সুতা তৈরির কারখানাও ছিল হাতের নাগালে। নদীপথে যাতায়াতের সুবিধা নিতে শীতলক্ষ্যার তীরে গড়ে ওঠে বহু সুতার কারখানা। ফলে হোসিয়ারি শিল্পের দ্রুত বিকাশ ঘটে এ এলাকায়।

বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় হোসিয়ারি শিল্পটি রফতানিমুখী গার্মেন্টস শিল্পে রূপান্তরিত হয়। সেখানে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত