রাজনীতিচিন্তক ও দার্শনিক ফরহাদ মজহার বলেছেন, আমরা এমন একটা বিকেন্দ্রীকরণে শাসনব্যবস্থা চাই। যেখানে আমরা রাষ্ট্রকে, সরকারকে জবাবদিহিতা করাতে পারব এবং জবাবদিহিতার জন্য প্রত্যেকটা প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি আমাদের হাতে থাকবে। এভাবে আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করব। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রংপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ভাববৈঠকির উদ্যোগে ‘গণঅভ্যুত্থান, রাষ্ট্রগঠন ও আমাদের দায়’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সাম্য, মানবিক ন্যায় বিচারসহ তিনটা নীতি কীভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়, কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক করা যায়, তার জন্য আমরা লড়াই করি। কিন্তু আওয়ামী লীগ এসে দিল্লির প্রয়োজনে আমাদের ওপর চাপিয়ে দিল ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ। এগুলো আমাদের দাবি ছিল না। এই যে চাপিয়ে দেওয়া তিনটা তথ্যের মধ্যে সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ একত্রে হলে এইটাকে বলে ফ্যাসিবাদ। এটা হিটলারও বিশ্বাস করত। জার্মান জাতীয়তাবাদ, বাংলাদেশে বাঙালি জাতীয়তাবাদ। জেনেশুনে ফ্যাসিস্ট সংবিধান আমরা রাখছি। এই জুলাই আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থানের পরও আমরা এই সংবিধান বাতিল করতে পারি নাই। এই দায় কার। আমরাও দায়ী।
তিনি আরও বলেন, তরুণরা যখন এই সংবিধান বাতিল চাইল, তারা বললো, এই সংবিধান তো আমাদের চাপিয়ে দেওয়া সংবিধান। তখন বলতে শুরু করল, যারা ৭২ এর সংবিধান বাতিল চায়, তারা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ মানে না। এই প্রপাগান্ডা আওয়ামী লীগ শুরু করল, শেষ পর্যন্ত বিএনপিও শুরু করল। এই প্রজন্ম কখনও ৭১ অস্বীকার করে নাই। বরং তারা ৭১ কে পুনরায় দাখিল করতে চায়। যেটা হরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের জনগণের যে গৌরব ৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। যার নেতৃত্বে ছিলেন, জিয়াউর রহমানসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা। ৫ আগস্টে একটা বড় ঘটনা ঘটেছে। আমি আজ যে কথাগুলো বলতে পারছি। ৫ আগস্ট হয়েছে বলেই সেটা সম্ভব হয়েছে। আসুন আমরা সামষ্টিক একটা রাজনৈতিক ধারা, সামষ্টিক অভিপ্রায় বাস্তবায়ন কীভাবে করা যায় তার জন্য কৌশল আবিষ্কার করি। অবশ্যই সেটা আমরা করতে পারবে। আমাদেরকে ঠেকাতে পারে এমন কোনো শক্তি পৃথিবীতে আছে বলে আমি মনে করি না।
ফরহাদ মজহার বলেন, আমি মনে করি ৫ আগস্টে তরুণরা আমাদের নতুন বাংলাদেশ দান করেছেন। যতটুকু তারা করতে পেরেছে। যদি তাদের কোন ব্যর্থতা হয়ে থাকে তবে সেটা আমাদের সবার ব্যর্থতা। তিনি আরও বলেন, আমরা একটা বিকেন্দ্রীভূত বাংলাদেশ চাই। যেখানে সত্যিকারের গণতন্ত্র থাকবে। যেমন রংপুরবাসীর যা প্রয়োজন। তারা তাদের সিদ্ধান্ত নেবে। একটা কেন্দ্রীয় সরকার থাকবে। একটা শক্তিশালী স্থানীয় সরকার থাকবে। ঢাকাকেন্দ্রিক অল্প কিছু লোক শাসন করবে আর লুণ্ঠন করবে, এটা আমরা চলতে দেব না। উত্তরবঙ্গ থেকে যা যাবে সেটা এখানেই ফিরে আসতে হবে। গুলশান বনানীতে যেতে পারবে না। বাইরে গিয়ে সেকেন্ড হোম বানাবেন সেটা হবে না।