ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সংকটে জর্জরিত জবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার

সংকটে জর্জরিত জবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার

পড়ার জন্য লাইব্রেরিতে গিয়ে মিলছে না আসন, বুকশেলফেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না চাহিদা অনুযায়ী বই। এমনকি নেই পর্যাপ্ত ইন্টারনেট ব্রাউজিং সুবিধাও। এমনই চিত্র জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শহিদ সাজিদ ভবনের ষষ্ঠতলায় কয়েকটি কক্ষ সমন্বয় করে একটি ফ্লোরের অর্ধেক জায়গা জুড়ে সিএসসি (কম্পিউটার সাইন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং) ডিপার্টমেন্টের সাথে সমন্বয় করে চলছে লাইব্রেরির কার্যক্রম। ফলে শিক্ষার্থীদের ভুগতে হচ্ছে আসন সংকটে।

লাইব্রেরি সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় আঠারো হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে লাইব্রেরিতে আসন সংখ্যা মাত্র ৩৫০টি। জায়গার অভাবে অল্প জায়গায় অনেক শিক্ষার্থীকে গাদাগাদি করে বসছেন। আবার জায়গা না পেয়ে অনেক শিক্ষার্থী ফিরেও যাচ্ছেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে সাধারণ সুযোগ-সুবিধার অপ্রতুলতা রয়েছে। এখানে কোনো নতুন বই নেই, যা আছে সব মন্ধান্তার আমলের যা সাধারণ শিক্ষার্থীর কোনো কাজে লাগে না। এ সব রেখে গ্রন্থাগার ভর্তি করার কোনো যৌক্তিকতা দেখি না? এছাড়াও লাইব্রেরিতে কোনো জেনারেটরের সুবিধা নেই। বিদ্যুত চলে গেলে ক্যাম্পাসের সকল জায়গার মতো লাইব্রেরিও অচল হয়ে পড়ে। এসব কিছুর দ্রুত সমাধান জরুরি।

এ সম্পর্কে ইসলামিক ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী ইয়ামিন সাদাত বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি নেই। যাকে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি বলা হয় সেখানে জাস্ট একটা রুমকে কেন্দ্র করে কয়েকটা টেবিল চেয়ার বসিয়ে রাখা হয়েছে। নেই পর্যাপ্ত পরিমাণে পড়ার টেবিল, যুগোপযোগী বই, গবেষণা পেপার, পড়াশোনার পূর্ণাঙ্গ পরিবেশ। তাপদাহ ও প্রচুর গরমের মধ্যেও নেই এসির ব্যবস্থা। শব্দ যুক্ত ফ্যানের কারণে পড়াশোনার বিঘ্ন ঘটা স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে।’

এ সম্পর্কে ২০২২-২৩ সেশনের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জুহার আলমাস লাবিব বলেন, ‘এটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে, একটা পরিপূর্ণ লাইব্রেরির যা যা প্রয়োজন তার কিছুই নাই। বিশেষ করে, একাডেমিক বইয়ের সংকট, অপর্যাপ্ত সিট। আমরা অনেকবার প্রশাসনকে জানিয়েছি কিন্তু তারপরও তারা কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছে না। তাহলে কিভাবে একটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশ সেরা শিক্ষার্থী বের হবে? যেহেতু শিক্ষার্থীদের একমাত্র কাজ পড়াশোনা করা, যেখানে লাইব্রেরিতেই পড়াশোনার পরিবেশ নেই, এটা দুঃখজনক!’

এ সম্পর্কে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম জিহাদ বলেন, ‘কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে এমনিতেই ফ্যানের সংখ্যা অল্প। যে ফ্যানগুলো আছে সেখান থেকেও ঠিকমতো বাতাস আসে না। একটাই লাইব্রেরি সেখানে অনেক মানুষজন পড়াশোনা করে অথচ এসি নেই। এসি লাগানো উচিত। এসি লাগাতে না পারলেও অন্তত ফ্যানের সমস্যাটা সমাধান করা উচিত।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘জার্নালে অন্যান্য পত্রিকা থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকা যেমন: প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকার সংখ্যা বাড়ানো উচিত। আর ফ্যানগুলোকে নিয়মিত সার্ভিসিং করা হয় না সেগুলো নিয়মিত সার্ভিসিং করা উচিত।’

সরোজমিনে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা তীব্র আসন সংকটের কারণে ৫/৬ জনের সিটে গাদাগাদি করে ৮/১০ জন বসছেন। তীব্র গরমে অনেকে অতিষ্ঠ। একজন ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমি প্রতিদিন লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করতে আসি। আজ একটু দেরী হওয়াতে প্রথমে সিট পাইনি, পরবর্তীতে একটি সিট পাই তাও সেখানকার ফ্যানে সমস্যা, ঠিকমতো বাতাস দেয় না। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের করার জন্য ইন্টারনেট এক্সেসের দরকার হয় কিন্তু লাইব্রেরিতে তা পাওয়া যায় না।’

এ সম্পর্কে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বি বলেন, ‘হলবিহীন বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় সবাই সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে ভিড় করেন। সকাল ৭টা থেকেই ফ্যানের নিচে সিটের জন্য লাইন দিতে হয়। ভেতরে প্রচণ্ড গরম ও কর্মচারীদের পদচারণায় পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটে। প্রশাসনের উচিত এ বিষয়ে সুদৃষ্টি দেওয়া।’

এ সকল সমস্যা সম্পর্কে ছাত্র কল্যাণ পরিচালক ড. কেএএম রিফাত হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের গরমের মধ্যে লাইব্রেরিতে পড়তে হয়, এই সমস্যা আমরা বুঝি। আমরা জানি শুধু কয়েকজন স্টাফদের কক্ষবাদে সকল রুমে একটা গুমোট পরিস্থিতি বিদ্যমান, আলো বাতাস আসে না বললেই চলে। সেখানে পড়াশোনা করার পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়নি, এটি আমি স্বীকার করছি। তবে সমস্যা সমাধানে এখন যদি কোনো বরাদ্দ পেতে হয় তো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ ফান্ড থেকে করতে হবে কারণ ইউজিসি যে খাতে বরাদ্দ দিয়েছি তা নতুন ক্যাম্পাসের কাজে খরচ হচ্ছে তা অন্য কোথাও ব্যবহার করা সমীচীন নয়। যদিও আমি অন্য খাত হিসেবে ব্যাংক বা সংস্থার (অগ্রনী ব্যাংক) কাছে চিঠি পাঠিয়ে স্পন্সরসিপ চাওয়ার ব্যাপারে উচ্চপদস্থ দুইজন কর্মকর্তা ভিসি ও ট্রেজারারকে অবগত করেছিলাম, তারা এ কথা আমলেও নেয়নি।’

গ্রন্থাগারিক মো. এনামুল হক বলেন, ‘কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে কোনো প্রকার সমস্যা হলে তা জানা মাত্রই সমাধান করার চেষ্টা করা হয়। আসলে শুধু ফ্যান লাগিয়ে এ পরিস্থিতি মেটানো সম্ভব নয়। এসির ব্যাপারে আমরা ইউজিসিকে চিঠি পাঠিয়েছি, পরবর্তীতে এ সংক্রান্ত কোনো নোটিশ আমরা এখনো পাইনি।’

বইয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমাদের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ বই আছে। আমাদের মোট বরাদ্দের বই কেনার অর্থ প্রত্যেক ডিপার্টমেন্টকে আনুপাতিকহারে ভাগ করে দিই এবং তারা তা দিয়ে দুই সেট বই কিনে এক সেট নিজেদের জন্য রেখে দেয় এবং অন্য সেট কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির জন্য পাঠায়।

উল্লেখ্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে প্রতিদিন পাঁচশত থেকে ছয়শত ছাত্রছাত্রী যাতায়াত করে। আসন সংকটের কারণে অনেকে উনুক্ত লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করেন। লাইব্রেরিতে বর্তমানে ৫৮টি টেবিলের বিপরীতে চেয়ার আছে ৩৫০টি এবং ৪৮টি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত