বেঙ্গল ফ্লোরিকান : বাসটার্ড নামের একটি বিশেষ শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত ২৬ প্রজাতির পাখি। আকারে বেশ বড়সড় হওয়া সত্ত্বেও উড়তে পারে বাসটার্ড শ্রেণির পাখিরা। এ শ্রেণিতে থাকা সব পাখির মধ্যে সবচেয়ে বিরল হলো বেঙ্গল ফ্লোরিকান। এসব পাখি ভারত ও নেপালের তৃণভূমিতে দেখা যায়। এরা অত্যন্ত লাজুক প্রকৃতির হয়। ঘাসের মধ্যে লুকিয়ে লুকিয়ে চলতেও বেশ পারদর্শী। দুঃখজনক হলো, পাখি শিকারিদের উৎপাত আর বাসস্থান হারানোর চাপে বিপন্নপ্রায় হয়ে পড়েছে এরা।
ফরেস্ট আউলেট : ‘টুটুটু’ শব্দ করে ডাকে ফরেস্ট আউলেট নামের ছোট্ট প্যাঁচারা। ভারতের মধ্যপ্রদেশের শুষ্ক বনজঙ্গলে থাকা এসব পাখি অন্যান্য প্যাঁচার মতোই নিশাচর। এরা রাতের অন্ধকারে পোকামাকড় কিংবা ছোটখাটো প্রাণী শিকার করে খায়। দিন দিন বন উজাড় হওয়ার কারণে বাসস্থান হারিয়ে বিলুপ্তির পথে পা দিয়েছে ফরেস্ট আউলেটরা।
গ্রেট ইন্ডিয়ান বাসটার্ড : একসময় ভারতীয় উপমহাদেশজুড়ে পদচারণ ছিল গ্রেট ইন্ডিয়ান বাসটার্ডদের। সাদা-কালো পালক আর লম্বা বাদামি রঙের পা-সমেত গ্রেট ইন্ডিয়ান বাসটার্ডদের রাজকীয় লাগে। পাখি শিকারিদের কবলে পড়ে এ পাখি এখন বিপন্নপ্রায়। তবু জীবিত গ্রেট ইন্ডিয়ান বাসটার্ডদের নিরাপদ রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রাণী অধিকারকর্মীরা।
রেড হেডেড ভালচার : ভারতীয় উপমহাদেশে বিচরণ করে লাল মাথার এক প্রজাতির শকুন। এদের ইংরেজি নাম রেড হেডেড ভালচার। এরা ভারতীয় কালো শকুন হিসেবেও পরিচিত। মৃত প্রাণী খেয়ে নিমেষেই যে কোনো পরিবেশ পরিষ্কার করে ফেলতে পারে এরা। কিন্তু এখন এই অসাধারণ পাখি বিপন্নপ্রায়। রেড হেডেড ভালচারসহ সব শকুনের খারাপ অবস্থার পেছনে দায়ী প্রাণিচিকিৎসায় ব্যবহৃত এক ওষুধ। এখন ব্যথানাশক ডাইক্লোফেনাক- জাতীয় সেই ওষুধের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু রেড হেডেড ভালচারদের মতো বিলুপ্তপ্রায় শকুন প্রজাতিগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াই চলছেই।
কাকাপো : নিউজিল্যান্ডের বনজঙ্গলে একধরনের তোতাপাখি বাস করে। সবুজ রঙে রঙিন এ পাখির নাম কাকাপো। নিশাচর এই পাখিরা উড়তে পারে না; কিন্তু স্ত্রী কাকাপোদের আকৃষ্ট করতে পুরুষ কাকাপোরা লড়াই করে। জঙ্গলের ভারসাম্য রক্ষা করার মধ্যে বিলুপ্তপ্রায় কাকাপোদের বিশেষ অবদান রয়েছে। তাই এ প্রজাতির পাখি বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ কর ছেন পরিবেশকর্মীরা।
কিউই : নিউজিল্যান্ডের জাতীয় পাখির নাম কিউই। পৃথিবীতে পাঁচ প্রজাতির কিউই পাখি আছে। এর মধ্যে সব প্রজাতির পাখিই নিশাচর। এরা উড়তে পারে না। কুকুর আর বেজির মতো শিকারিদের সংখ্যা বাড়ায় কিউই পাখিরা বিলুপ্তপ্রায় হয়ে পড়েছে। আশার কথা হলো, বিশেষ এসব পাখির সুদিন ফিরিয়ে আনার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন প্রাণী অধিকারকর্মীরা।
সাইবেরিয়ান ক্রেন : শীতকালে রাশিয়ার বিভিন্ন জায়গায় তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। এত তীব্র ঠান্ডা আবহাওয়ায় সেখানকার পাখিরা খাদ্য এবং বাসস্থানের সংকটে পড়ে। তখন পাখিগুলো অপেক্ষাকৃত কম শীত ও অনুকূল প্রকৃতির দেশে অতিথি হয়ে আসে। রাশিয়া থেকে অনেকটা পথ উড়ে ভারত কিংবা ইরানে পৌঁছে সাইবেরিয়ান ক্রেন নামের পরিযায়ী পাখিরা। এদের লম্বা শুভ্র গলা আছে, আছে মিষ্টি ডাক। অতিথি হয়ে আসার সময় একটি লম্বা পথ পাড়ি দেয় সাইবেরিয়ান ক্রেনরা। সেই পথে ওৎ পেতে থাকে পাখি শিকারিরা। পাখি শিকারিদের কারবারের জন্য আজ সাইবেরিয়ান ক্রেনরা বিলুপ্তপ্রায়।
সোশ্যাবল ল্যাপউইং : কাজাখস্তানের খোলা তৃণভূমি থেকে সোশ্যাবল ল্যাপউইং পাখিরা অতিথি হিসেবে যায় আফ্রিকা, ইউরোপ এবং মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। ভারতের উত্তর-পশ্চিমেও পাওয়া যায় এসব পাখি। এরা প্রধানত কীটপতঙ্গ খায়। এদের বিশেষত্ব সামাজিকতায়। হাজার হাজার সোশ্যাবল ল্যাপউইং জোড়া একসঙ্গে বাসা বেঁধে থাকে। সেই বাসার এলাকায় শোরগোল লেগে থাকে সব সময়। কিন্তু অতিথি হিসেবে ভ্রমণ করার সময় অসংখ্য ব্যস্ত ল্যাপউইং মারা যায় পাখি শিকারিদের হাতে। ফলে ১৯৩০ সালের পর থেকে সোশ্যাবল ল্যাপউইংদের সংখ্যা নব্বই শতাংশ কমে গেছে।
স্পুনবিলড স্যান্ডপাইপার : রাশিয়ায় জন্মগ্রহণ করা স্পুনবিলড স্যান্ডপাইপার পাখিরা শীতকালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আসে। এসব পাখির ঠোঁট লম্বা ও নিচের দিকে বাঁকানো থাকে। সেই ঠোঁট ব্যবহার করে এরা কাদামাটি থেকে পোকামাকড় খুঁজে খেতে পারে; কিন্তু বাসস্থান হারিয়ে আর পাখি শিকারিদের কবলে পড়ে এ প্রজাতির পাখিরাও বিলুপ্তির পথে।
হোয়াইট বেলিড হেরন : একধরনের মাঝারি আকারের বকপাখি থাকে এশিয়া এবং আফ্রিকার জলাভূমিতে। সেই বকপাখিদের ইংরেজি নাম হোয়াইট বেলিড হেরন। সাদা পেটওয়ালা এসব বক অগভীর জলে ঘুরে বেড়ায়। এরা নিজেদের লম্বা ধারালো ঠোঁট দিয়ে মাছ কিংবা ব্যাঙ শিকার করে খায়। দেখতে অসম্ভব সুন্দর পাখিগুলোর সংখ্যা দিন দিন কমে চলেছে পরিবেশ দূষণের ফলে।