অপবাদ দেওয়া ইসলামে যেমন নিষিদ্ধ, তেমনিভাবে সামাজিক দৃষ্টিতেও ঘৃণিত। এই অপবাদ ব্যক্তি মানুষের মান-মর্যাদাকে বিনষ্ট করে। সমাজে ব্যক্তি হেয় প্রতিপন্ন হয়, ব্যক্তির সামাজিক পদমর্যাদা ক্ষুণœ হয়। আমাদের সমাজে ব্যক্তি বা দলের হীনস্বার্থের জন্য স্রেফ অনুমানের ভিত্তিতে এরকম হাজারো ঘটনা হরদম ঘটছে। এই পরিস্থিতি রীতিমতো মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। গল্প, গুজব, আড্ডা যত যাই হোকÑ সর্বত্রই অন্যের দোষচর্চা, অন্যের দুর্নাম, মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার মহড়া চলছে। জানাশোনা-পরিচয় নেই তবুও একজনকে যাচ্ছেতাই বলা হচ্ছে। যারা শুনছেন তারাও কিছু বলেন না। বক্তার সঙ্গে তাল মেলান। একজনের কাছ থেকে শোনেন, অমনিতেই ছড়িয়ে দেন আরেকজনের কাছে। একটুও যাচাই করার চেষ্টা করেন না যে, কথাটা কী আসলেই সঠিক। যাচাই না করে বলে বেড়ানো এটা মিথ্যার শামিল। অথচ মিথ্যার ভয়াবহতা সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের প্রশ্ন করেছিলেন, ‘সবচেয়ে বড় গোনাহ কী, আমি কি তোমাদের জানাব না?’ সাহাবিরা বললেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)। তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা ও মাতা-পিতাকে কষ্ট দেওয়া। তিনি হেলান দিয়ে এ কথাগুলো বলছিলেন। এরপর সোজা হয়ে বসে বললেন, সাবধান এবং মিথ্যা কথা।’ (বোখারি ও মুসলিম শরিফ)।
কারও সম্মানহানি করা বা কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা দোষারোপের সুযোগ ইসলামে নেই। এটা ঘৃণিত অপরাধ। শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘কোন পূতঃচরিত্রা নারীর বিরুদ্ধে কেউ (ব্যভিচারের) অপবাদ দিয়ে যদি চারজন সাক্ষী উপস্থিত করতে ব্যর্থ হয়, তবে অপবাদ রটনাকারীকে শাস্তি হিসেবে ৮০ বেত মারবে। আর কোনোদিন তার সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না। এরা সত্যত্যাগী।’ (সুরা নুর : ৪)।
অন্য আয়াতে এরশাদ হয়েছে, ‘যারা চরিত্রহীনতার মিথ্যা অপবাদ রটনা করেছে, তারা তো তোমাদেরই একটি দল। (কিন্তু এই অপবাদে যাদের ওপর অন্যায় করা হয়েছে) তারা যেন নিজেদের জন্য বিষয়টিকে ক্ষতিকর মনে না করে। বরং এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। (অপবাদ রটনাকারী) প্রত্যেককেই এ পাপের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। এদের মধ্যে যে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে, তার জন্য অপেক্ষা করছে কঠিন আজাব।’ (সুরা নুর : ১১)।
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘যারা বিনা অপরাধে বিশ্বাসী পুরুষ ও নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।’ (সুরা আহজাব : ৫৮)।
রাসুলুলল্গাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান অপর কোনো মুসলমানকে যদি এমন স্থানে লাঞ্ছিত করে, যেখানে তার মানহানি ঘটে এবং সর্বদা খাটো করা হয়, আল্লাহ তাকে এমন স্থানে লাঞ্ছিত করবেন, যেখানে তার সাহায্যপ্রাপ্তির আশা ছিল।’ (আবু দাউদ)।
আজকাল নির্দোষ মানুষকে অপবাদ দেওয়া সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। প্রচলিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেন এর প্রথম বাহন, মানুষ একটা কথা শুনে এর সত্যায়ন না করে ছড়িয়ে দেয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। এভাবে একটা ভিত্তিহীন কথা ছড়িয়ে পড়ে পুরো বিশ্বজুড়ে। অনুমান করে কিছু বলা বা কারও সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করা ইসলামে নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেন, হে মুমিনরা, তোমরা অধিকাংশ অনুমান থেকে দূরে থাক। কারণ অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ। (সুরা আল হুজরাত : ১২)।
তাই আসুন আমরা অন্যের দোষচর্চা ছেড়ে দিই, অন্যকে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া থেকে বিরত থাকি। একটা কথা শুনেই তাহকিক বা সত্যায়ন না করে এটাকে না ছড়াই। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সঠিক বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : মোহাদ্দিস, দারুল উলুম মোহাম্মদপুর কওমি মাদ্রাসা, চাটমোহর, পাবনা