সব প্রশংসা মহান আল্লাহর, যিনি অনস্তিত্ব থেকে আমাকে অস্তিত্ব দান করেছেন। দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ওপর, যিনি তাঁর বিশেষ দোয়াটি কেয়ামতের দিন তাঁর উম্মতের জন্য জমা রেখেছেন। আহ! কি আনন্দ! সামনে জন্মদিন আসছে! কেক কাটব, গানবাজনা করব, নাচব, বন্ধুবান্ধবী ‘Wish’ করবে, ‘Gift’ দেবে! কতই না মজা হবে! কিন্তু বন্ধুরা আমার, আপনাদের হয়তোবা এইটা মনে হয় না যে, আপনার জীবন থেকে একটি বছর চলে গেল, মৃত্যু কাছে চলে আসছে, আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর মতো আমল আছে আপনার কাছে নাকি শুধু ফুর্তি করেই জীবন কাটিয়ে দেবেন?
বার্থডে সেলিব্রেশনের ব্যাপারটা একটি ধর্মীয় কালচার থেকে ঘুরে ঘুরে আজকের এ পর্যায়ে এসেছে। আমরা অনেকেই মনে করি, জন্মদিন পালনের রীতি খ্রিষ্টানদের থেকে এসেছে। কিন্তু এটা ক্রিশ্চিয়ান ওর জিউয়িশ থেকে আসেনি। আবার অনেকেই মনে করি বার্থডে সেলিব্রেশনটা হলো ইহুদি-খ্রিষ্টানদের কালচার। মজার ব্যাপার হলো, আগেকার খ্রিষ্টানরা বার্থডে সেলিব্রেশন করত না। বার্থডে সেলিব্রেট করাকে তারা প্যাগানদের সংস্কৃতি মনে করত। The World book
Encyclopedia’ Abyhvqx, “The early Christian did
not celebrate this (Christ) birth because, they
considered the celebration of anyone’s birth to
be a ‘pagan’ custom.” [Volum 3, page : 416]এমনকি বর্তমান সময়েও অনেক খ্রিষ্টান গ্রুপ বার্থডে সেলিব্রেট করে না। যেমন- জেহোভাস উইটনেস, ওয়েস্টবরা বেপটিস্ট চার্চ, ইউনাইটেড চার্চ অব গড খ্রিষ্টান গ্রুপগুলো ক্রিসমাস উদযাপন করে না। বার্থডে সেলিব্রেশনের ইতিহাস খুঁজলে দেখা যায়, সর্বপ্রথম বার্থডে সেলিব্রেশন করেছিল মিশরের (রাজা) ফারাও। বাইবেলে এই কাহিনীটির উল্লেখ আছে। “And it
come to pass the third day, which wad
‘Pharaoh’s Birthday’, that he made a feast
(Birthday Party) unto all his servants.”
[Genesis, 40 : 20] অর্থাৎ বোঝা গেল জন্মদিন পালনের রীতি খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের থেকে আসেনি।The celebration
of birthday is unknown in traditional Jewish
Ritual.” [Vol.4, page : 1054]| খ্রিস্টানরা ফারাওকে একজন পাপী মনে করত। এজন্য বার্থডে সেলিব্রেশন করাকে তারা ফারাও এর মতো পাপীদের সংস্কৃতি মনে করত। It is
only sinners (like Pharaoh and Herod) who
make great rejoicing over the day on which
they were born into this world
below”.[Origen. in Levitt Home. vii. in migne
P. G. xii, Page : 495]’. বার্থডের ইতিহাসের ওপর এটা একটা প্রামাণ্য বই। ওই বইতে বলা আছে “Ralph and Adelin
Linton Gi ‘The Lore of Birthday’.ev_ “Originally the idea (of birthday greetings
and wishes for happiness) was roted in majic.”” এর মর্মার্থ দাঁড়ায় জাদুবিদ্যা থেকেই জন্মদিনের সংস্কৃতির উৎপত্তি।শুধু তাই নয়, বার্থডে অনুষ্ঠানের দিন যে ‘শুভ জন্মদিন’ বলে কেক কাটা শুরু হয়, এই ‘শুভ জন্মদিন’ বলার পেছনেও রয়েছে বিস্ময়কর ইতিহাস। অথচ আমরা না জেনে তা পালন অথবা বিশ্বাস করি। ‘মনে করা হয়, বার্থডে অনুষ্ঠানের দিন যার বার্থডে তার আত্মা তার কাছে চলে আসে এবং জন্মদিনের শুভেচ্ছাগুলো (শুভ জন্মদিন, এই দিনে অনেক অনেক খুশি ফিরে আসুক) আত্মা শুনতে পায় এবং এর দ্বারা তাকে ‘শুভ’ বা ‘অশুভ’ পরিণতি দেওয়া হয়। সবাই যদি শুভেচ্ছা জানায় তা হলে তাকে ‘শুভ’ পরিণতি আর সবাই যদি কুমন্ত্রণা দেয় তা হলে ‘অশুভ’ পরিণতি দেওয়া হয়। এজন্য জন্মদিনে শত্রুদের কাছ থেকে দূরে থাকতে বলা হয়, কারণ শত্রুরা কুমন্ত্রণা দিলে হিতে বিপরীত হবে। The Lore of Birthday (New York, 1952), Ralph and Adelin Linton]]
জন্মদিনে মোমবাতি জ্বালানোর পেছনেও কারণ আছে। প্রাগুক্ত বইতে বলা হয়েছে “The birthday candles are thus
an honor and tribute to the birthday child and
bring good fortune.” এখন আপনারাই বলেন ভালো ভাগ্যের ক্ষমতা কি মোমবাতির হাতে?জন্মদিনের গিফট দেওয়ার পেছনেও আলাদা কারণ আছে। ওই বইতেই বলা আছে “The giving birthday gifts is a
custom associated with the offering of
sacrifice to pagan gods on their birthday.”এন্টন জান্দর লেভেই, শয়তানের উপাসক এবং শয়তানের চার্চের প্রতিষ্ঠাতা। তার লেখা একটা বইতে (‘(‘The Satanic Bibel’’) সে লিখেছে, শয়তানের ধর্মে সবচেয়ে বরো উৎসব হলো নিজের জন্মদিন পালোন করা-“The highest of all
holidays in the satanic religion is the date of
one’s own birthday.”[The Satanic Baible,
Anton Szander Lavey, Chapter Xi, Religious
holiday, page.96]
এত কিছু বলার পরও দুর্বলমনা মুসলমানরা বলবে ‘আচ্ছা সবই তো বুঝলাম। কিন্তু আমরা তো প্যাগানদের অনুসরণ করার ইচ্ছা নিয়ে বা তাদের বিশ্বাসকে অনুসরণ করে বার্থডে করছি না, তাই নয় কি? এক্ষেত্রে ইসলাম বাধা দিচ্ছে কেন?’ আমি তাদের বলতে চাই, এর কারণ হচ্ছে বিশ্বাসে সাদৃশ্য না হলেও বা না থাকলেও কর্মে সাদৃশ্য হচ্ছে। জন্মদিন উদযাপন হচ্ছে মুশরিকদের সংস্কৃতি, মুসলিমদের নয়। বিজাতীয় সংস্কৃতি অনুসরণ করতে ইসলামের নিষেধাজ্ঞা আছে।
ইবনুল উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত গণ্য হবে।’ [সুনানে আবু দাউদ : ৪০৩১]। খ্রিষ্টান ধর্মেও এমন নিষেধাজ্ঞা আছে। “LEARN
NOT THE WAY OF THE HEATHEN.”
[Jermiah 10:2]জন্মদিনে সবাই ‘শুভ জন্মদিন’ বলছে কথাটা সাধারণভাবে নিচ্ছেন সবাই। কিন্তু হাদিসে কী বলে জানেন! রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘অশুভ-শুভ ফল গ্রহণ করা শিরকি কাজ। কথাটি তিনি তিনবার বললেন (আবু দাউদ, মিশকাত হা/৪৫৮৪)।
আরেকটা ব্যাপার লক্ষ্যণীয়, ইসলামের উৎসবগুলো আর কাফেরদের উৎসবগুলোর মধ্যে একটা চমৎকার বৈশাদৃশ্য আছে। ইসলামের সব উৎসবে আল্লাহকে স্মরন করাটাকেই মুখ্য করা হয়, আর সমাজের অসহায় মানুষদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগির শিক্ষা থাকে। ঈদের কথাই ধরুন। ঈদের শুরুটাই হয় আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে, ঈদের নামাজ দিয়ে। এর পর অসহায় মানুষের সঙ্গে, আত্মীয়-প্রতিবেশীদের সঙ্গে আমরা আনন্দ ভাগ করে নিই। অথচ কাফের বা সেক্যুলারদের উৎসব দেখুন, সেখানে শুধু ভোগের শিক্ষা দেওয়া হয়। কোরবানির গোশতে গরিবের ভাগ থাকে, পয়লা বৈশাখের ইলিশ মাছে গরিবের ভাগ থাকে কি? কিংবা জন্মদিনের পার্টিতে? এসব উৎসবের মধ্যে শুধু আত্মকেন্দ্রিকতা, আল্লাহকে ভুলে থাকা, আর অপচয়ের মচ্ছব চলে। এ থেকেই তো বুঝতে পারি, কোন উৎসবগুলো মুসলিমদের সঙ্গে যায় আর কোনগুলো যায় না।
রাসুলুল্লাহ (সা.) সোমবারে রোজা রাখতেন। কারণ সোমবার তাঁর জন্ম ও নবুয়ত প্রাপ্তির দিন। [মুসলিম : ১১৬২]। তাঁর শিক্ষাটি লক্ষ্য করুন। তিনি মুশরিক বা সেক্যুলারদের মতো উৎসবে না মেতে আল্লাহ তায়ালার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রোজা রেখেছেন। সেখানে একজন মুসলমান হয়ে জন্মদিনে পার্টি দেওয়ার আমাদের সুযোগ কোথায়? জন্ম সম্পূর্ণ আল্লাহ তায়ালার দান। বছর ঘুরে জন্মের দিনটা চলে আসা মানে যানেন? আমি-আপনি মৃত্যুর আরও কাছাকাছি পৌঁছে গেলাম। সুতরাং জন্মদিন আসলে মৃত্যু, তথা আখেরাতের কথা বেশি বেশি স্মরণ করার উপলক্ষ হওয়ার কথা ছিল। অথচ আমরা একে বানিয়ে ফেলেছি আল্লাহ তায়ালাকে ভুলে থাকার মাধ্যম বা অনুষ্ঠানে। কী বোকা আমরা তাই নয় কি?
লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়