দেশে এক বছরের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে বাণিজ্য ঘাটতি। তবে বাণিজ্য ঘাটতি কমলেও ক্রমেই বাড়ছে দেশের আমদানি-রপ্তানির মধ্যকার ব্যবধান। তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) দেশের সার্বিক বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে ১৫.৪৩ বিলিয়ন বা এক হাজার ৫৪৩ কোটি ডলারে পৌঁছেছে, গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ১৫.৭৫ বিলিয়ন বা এক হাজার ৫৭৫ কোটি ডলার। বছরের ব্যবধানে ঘাটতি ২ শতাংশ কমলেও এক মাসের ব্যবধানে ১২.৬২ শতাংশ বেড়েছে। তবে আশাব্যঞ্জক দিক হচ্ছে, গত বছরের তুলনায় দেশের আর্থিক হিসাবের উদ্বৃত্ত বেড়েছে ৪৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যালান্স অব পেমেন্ট বা বিওপির হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ শেষে দেশের আর্থিক হিসাবের উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ১৩০ কোটি ৭০ লাখ ডলার, আগের মাস ফেব্রুয়ারি শেষে যা ছিল ১৩৬ কোটি ১০ লাখ ডলার। তবে আগের বছরের মার্চ শেষে আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল ৯০ কোটি ১০ লাখ ডলার। অর্থাৎ মাসের ব্যবধানে উদ্বৃত্ত কমলেও বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৪৫ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকার থাকাকালে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের মাধ্যমে ব্যাপক অর্থ পাচার হয়েছে। এজন্য দেশের আমদানি অধিক হারে বাড়লেও রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ কমছিল। একই সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগে ধস নামার কারণে দেশের আর্থিক হিসাবে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দেয়। তবে সরকার দেশের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় কড়াকড়ি আরোপ করলে আর্থিক হিসাব উদ্বৃত্ত হয়। কিন্তু এখন দেশে বিদেশি বিনিয়োগ না বাড়লেও অর্থপাচার বন্ধ হওয়া, রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় বেড়ে যাওয়ায় দেশের আর্থিক হিসাবের উদ্বৃত্ত বেড়েছে। তা ছাড়া বর্তমানে নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমে যাওয়ায় আমদানিও অনেকাংশে কমেছে, যার প্রভাব পড়েছে আর্থিক হিসাবে। তথ্য বলছে, আর্থিক হিসাবের অন্যতম উপাদান হলো বিদেশি বিনিয়োগ। জুলাই-মার্চ সময়ে মোট সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে মাত্র ৮৬ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৩৫.১৯ শতাংশ কম। এ সময়ে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ২০৬ কোটি ডলারের বেশি, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৭ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে দেশে পণ্য আমদানি হয়েছে চার হাজার ৯৩০ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলারের। একই সময়ে রপ্তানি হয়েছে তিন হাজার ৩৮৭ কোটি ১০ লাখ ডলারের পণ্য। এতে এক হাজার ৫৪৩ কোটি ১০ লাখ ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে দেশ। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে) এর পরিমাণ এক লাখ ৮৮ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে বাণিজ্যে ঘাটতি ছিল এক হাজার ৫৭৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে বাণিজ্যে ঘাটতি কমেছে ২.০৫ শতাংশ। তবে একই সময়ে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে দুই হাজার ১৭৮ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে দেশে ডলার আদান-প্রদানের পর দেশের চলতি হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ ৬৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার। চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। কিন্তু বাংলাদেশ ঘাটতিতে রয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকে নিট এফডিআই বলা হয়। আলোচিত সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগও কমেছে। সূচকটি আগের বছরের চেয়ে ২৬ শতাংশ কমে ৮৬ কোটি ডলার হয়েছে। যদিও আগের মাসের চেয়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ১২.৫৪ শতাংশ। আগের মাসে একই সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৭৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এ ছাড়া একই সময়ে দেশের শেয়ারবাজারের অবস্থা নাজুক থাকলেও বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে। অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (নিট) এসেছে ছয় কোটি ৫০ লাখ ডলার। তার আগের অর্থবছরে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল (ঋণাত্মক) ১০ কোটি ৮০ লাখ ডলার।