ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

২০০ কোটি টাকার বাণিজ্য সম্ভাবনায় টাঙ্গাইলের আনারস

২০০ কোটি টাকার বাণিজ্য সম্ভাবনায় টাঙ্গাইলের আনারস

লাল মাটির সমতল ভূমির আনারসের রাজধানী হিসেবে খ্যাত টাঙ্গাইলের মধুপুর। এরইমধ্যে টাঙ্গাইলের বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করেছে ঐতিহ্যবাহী জিআই পণ্য মধুপুরের রসালো মিষ্টি আনারস। এ বছর অনুকূল আবহাওয়া ও যথাযথ পরিচর্যার ফলে টাঙ্গাইলে আনারসের অধিক ফলন হয়েছে। চলতি মৌসুমী প্রায় ২০০ কোটি টাকার বাণিজ্যের সম্ভাবনা দেখছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। সেই সঙ্গে বিদেশে রপ্তানিসহ আনারস থেকে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী তৈরির কারখানা করার পরিকল্পনাও আছে তাদের। টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার জলছত্র কৃষি মার্কেট, গারোবাজার, ইদিলপুর, আশ্রাবাজার ও মোটেরবাজার থেকে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০টি ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিদিন ছড়িয়ে পড়ছে প্রায় ৩ কোটি টাকার আনারস। বাংলাদেশ সরকারের ভৌগলিক নির্দেশক ইউনিট ২০২৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মধুপুরের আনারসকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি সনদ দেয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মুমিন হাসানের সই করা সনদে ৩১ শ্রেণিতে জিআই-৫২ নম্বরে মধুপুরের আনারসকে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে উল্লেখ করেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে টাঙ্গাইলে ৭ হাজার ৭৯৪ হেক্টর জমি থেকে ২ লাখ ৭২ হাজার ৭৯০ মেট্রিক টন আনারস উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। মধুপুরের গারোবাজারের পাশাপাশি জলছত্র ও মোটেরবাজারসহ বিভিন্ন বাজারে প্রতিদিন ১০ লাখ পিসের বেশি আনারস বিক্রি করে তিন কোটি টাকার বেশি বাণিজ্য হয়। এ বছর আনারস বিক্রি করে প্রায় ২০০ কোটি টাকার উপরে বাণিজ্য হবে বলে আশা করছেন টাঙ্গাইল কৃষি বিভাগ। সরেজমিনে মধুপুর জলছত্র বাজারে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন বাগান থেকে সাইকেল, ভ্যান ও পিকআপসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে চাষিরা আনারস নিয়ে আসছেন বাজারে। স্তুপে স্তুপে সাজিয়ে রাখা হয়েছে আনারস। কেউ বিক্রি করছেন, আবার কেউ কিনছেন। জলছত্র বাজারের আনারস ব্যবসায়ীরা জানান, বিগত বছরের তুলনায় এই বছরে আনারসের দাম ভালো। আম, কাঁঠালসহ অন্যান্য মৌসুমী ফল বর্তমানে বাজারে থাকায় আনারসের চাহিদা কিছুটা কম। মৌসুমী ফল শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আনারসের দাম আরও বাড়বে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। আনারস ব্যবসায়ী উজ্জ্বল মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আমি প্রতিদিন গারোবাজার ও আশ্রাবাজার থেকে দুই থেকে তিন হাজার পিস আনারস কেনা বেচা করি। প্রতি পিচ আনারস ৩০/ ৪০ টাকা করে কিনে ঢাকা, সিলেট, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে থাকি। খরচ বাদে লাভ ভালোই থাকে।

জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত মধুপুরের আনারস চাষি ছানোয়ার হোসেন বলেন, জমি প্রস্তুত, সার-কীটনাশক, পিজিআর প্রয়োগ, রোপণ ও বাজারজাত পর্যন্ত প্রতিটি আনারসে খরচ পড়ে ১৫-১৮ টাকা। বাজারে ছোট আনারস ১৫-২০, মাঝারি ২৫-৩৫ এবং বড় আনারস ৩৫-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত চলবে সংগ্রহ ও বিপণন। আনারস ব্যবসায়ী শরিফ বলেন, ‘আমাদের উৎপাদিত আনারস সঠিকভাবে বাজারজাতের বিষয়ে কেউ আমাদের সাথে যোগাযোগ এবং সহযোগিতা করেন না। মধুপুর আনারস ব্যবসায়ী আছেন প্রায় দেড়শোর মতো, আবার খুচরা ব্যবসায়ী আছেন প্রায় ২০০ শতাধিক। তাই আমরা যাতে সঠিকভাবে আনারস বাজারজাত করতে পারি সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের দৃষ্টি দেওয়ার দাবি জানাই। মধুপুর উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, মধুপুর উপজেলায় ৬ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছে। এরমধ্যে ক্যালেন্ডার জাতের আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ২২০ হেক্টরে, জলডুগি বা হানিকুইন ২ হাজার ৩৯২ হেক্টরে এবং এমডি-টু জাতের আবাদ হয়েছে ২৬ হেক্টর জমিতে। বর্তমানে মধুপুরের পাহাড়ি অঞ্চলে ৬ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে প্রায় ১৭ কোটি আনারস গাছ রয়েছে। আর এরমধ্যে ক্যালেন্ডার জাতের রয়েছে প্রায় ১১ কোটি আনারস গাছ। মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রকিব আল রানা বলেন, চলতি মৌসুমে আনারসের অধিক ফলন হয়েছে। আকারে বড় হওয়ায় দামও ভালো পাচ্ছেন কৃষকেরা। বিদেশে রপ্তানি এবং আনারস দিয়ে জেলিসহ উপকরণ তৈরি করে বিপণনের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। এ নিয়ে কৃষি বিভাগ এরইমধ্যে কাজ শুরু করছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত