ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

খুলে যাচ্ছে হারামাইন শরিফাইন

হারামাইন শরিফাইনের মর্যাদা

নূর মুহাম্মদ রাহমানী
হারামাইন শরিফাইনের মর্যাদা

হারামাইন শরিফাইন তথা মক্কা-মদিনা বললেই যেন হৃদয়ে শিহরণ জেগে ওঠে। মনে এক স্পন্দন দোলা দেয়। কী যেন মধুর আমেজ সৃষ্টি হয়। এক অদৃশ্য আকর্ষণ যেন মক্কা-মদিনার দিকে নিয়ে যায়। পৃথিবীতে যত স্থান আছে তন্মধ্যে সবচেয়ে উত্তম স্থান হলো মক্কা-মদিনা। এ শহরে অবস্থিত পবিত্র মসজিদে হারাম। এটি পৃথিবীর সর্বপ্রথম নির্মিত মসজিদ। আবু জর গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কোন মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে? তিনি বললেন, ‘মসজিদে হারাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরপর কোনটি? তিনি বললেন, মসজিদে আকসা।’ (বোখারি : ৬/৪৫৮)।

এই মসজিদে এক রাকাত নামাজের সওয়াব এক লাখ রাকাতের সমপরিমাণ। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমার এই মসজিদে (মসজিদে নববি) এক রাকাত নামাজ আদায় করা মসজিদে হারাম ব্যতীত অন্য যে কোনো মসজিদে এক হাজার রাকাত নামাজ আদায় করার চেয়ে উত্তম, আর মসজিদে হারামে এক রাকাত নামাজ আদায় করা মসজিদে নববি ব্যতীত অন্য যে কোনো মসজিদে এক লাখ রাকাত নামাজ আদায় করার চেয়ে উত্তম।’ (মুসনাদে আহমদ : ৩/৩৪৩)।

আজ কত আফসোস! আমার ধনী মুসলমান ভাইদের জন্য শত আফসোস! তাদের হাতে যখন ভ্রমণের জন্য কিছু সময় বের হয়, তখন তারা আমেরিকা, লন্ডন, চীন, জাপান ঘুরতে বের হয়ে পড়েন। অথচ তার দরকার ছিল মক্কা-মদিনায় ভ্রমণ করা।

এই শহর অন্যান্য শহরের মতো নয় যে, সেখানে যা ইচ্ছা তা করা যাবে। এর রয়েছে স্বতন্ত্র মর্যাদা। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) মক্কা বিজয়ের দিন এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা এ শহরের জন্য হারাম করে দিয়েছেন (সম্মানিত করেছেন) না এ হারামের পাতা কাটা যাবে, না শিকারি দেখানো যাবে, না পড়ে যাওয়া বস্তু কুড়ানো যাবে, তবে যে হারানো বস্তুর ঘোষণা দেবে সে ব্যতীত।’ (বোখারি : ১/২১৬)।

ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণিত অপর হাদিসে এসেছে, নবী করিম (সা.) মক্কা বিজয়ের দিন এরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তায়ালা এ শহরকে হারাম করে দিয়েছেন যখন থেকে তিনি আসমান-জমিন সৃষ্টি করেছেন। এ নগরী হারাম থাকবে আল্লাহ হারাম করার দ্বারা কেয়ামত পর্যন্ত। আমার আগে কারও জন্য এখানে যুদ্ধ করা বৈধ ছিল না। আমার জন্যও বৈধ নয়, তবে দিনের কিছু সময় বৈধতা দেওয়া হয়েছিল। এখন থেকে কেয়ামত পর্যন্ত তা হারাম হিসেবে থাকবে।’ (মুসলিম : ১/৪৩৭)। উল্লেখিত হাদিসে হারাম অর্থ সম্মান, অর্থাৎ মক্কা শরিফ হারামের সীমানা সৃষ্টির প্রথম থেকে সম্মানিত। তাতে কোনো ধরনের পাপের কাজ করা যাবে না।

হারামাইন শরিফাইন তথা পবিত্র মক্কা-মদিনা জ্ঞানের শহর। এটি এমন এক বরকতময় শহরের নাম, যেখান থেকে ইসলামের আলো প্রজ্বলিত হয়েছিল এবং সেখানেই এসে শেষ হবে। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘স্বল্প সংখ্যক ও অপরিচিত অবস্থায় ইসলামের সূচনা হয়েছিল, অচিরেই তা আবার সূচনালগ্নের মতো গরিবি অবস্থায় ফিরে আসবে এবং তা উভয় মসজিদের (মক্কা ও মদিনার) মধ্যবর্তী এলাকায় গুটিয়ে আসবে যেমন সাপ তার গর্তের দিকে গুটিয়ে আসে।’ (মুসলিম : ১/১৩৩)। আরেক হাদিসে তো ঈমান মদিনার দিকে ফিরে আসবে বলা হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই (কেয়ামতের পূর্বক্ষণে) ঈমান মদিনার দিকে এমনভাবে প্রত্যাবর্তন করবে, যেমন সাপ তার গর্তের দিকে ফিরে আসে।’ (বোখারি : ১৮৭৬)।

পবিত্র এ দুই শহরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী দাজ্জাল ঢুকতে পারবে না। তার নৈরাজ্য ও অরাজকতা থেকে মক্কা নগরী নিরাপদ থাকবে। আনাস ইবনে মালেক (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘এমন কোনো শহর নেই, যেখানে দাজ্জাল প্রবেশ করবে না, তবে মক্কা মুকাররমা ও মদিনা মুনাওয়ারা ছাড়া। কেননা মক্কা ও মদিনার প্রতিটি প্রবেশপথে ফেরেশতারা সারিবদ্ধভাবে পাহারারত থাকবেন। তারপর মদিনা শরিফ তিনবার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠবে। এতে সেখান থেকে সব কাফের ও মোনাফেক বের হয়ে যাবে।’ (বোখারি : ১৮৮১)।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে সঠিক পদ্ধতিতে সপরিবারে হারামাইন শরিফাইন তথা মক্কা-মদিনা জিয়ারত করার তৌফিক দান করুন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত