আল্লাহ মহান কোরআনকে চিরন্তন নিদর্শন ও উচ্চস্তরের বিশুদ্ধতম উপদেশ বানিয়েছেন। তাতে তিনি দিকনির্দেশনার নানা বৈচিত্র্যময় শৈলী নিয়ে এসেছেন ও বৈশিষ্ট্যময় করছেন। শপথ বা কসম হলো ঈমান ও হেদায়েতের একটি অন্যতম বড় দ্বার। আল্লাহ ১৫টি সুরা শপথ করে শুরু করেছেন। তার সবগুলোই মক্কায় অবতীর্ণ। আল্লাহ তাঁর কিতাবের বহু জায়গায় শপথ করেছেন, শপথকারী যার নামে শপথ করা হয় ও যে বিষয়ের জন্য শপথ করা হয় সেগুলোর গুরুত্ব ও মহত্ত্বের প্রতি বান্দাকে সজাগ ও সতর্ক করার জন্য। আল্লাহ তাঁর কিতাবে সবচেয়ে বড় শপথ করেছেন মহান সত্তার নামে। আর তা হলো তাঁর নিজের পবিত্র সত্তা, যিনি পরিপূর্ণতা ও শ্রেষ্ঠত্বের যাবতীয় গুণে ভূষিত। তাঁর নামের শপথই হলো সবচেয়ে বড় ও মহান শপথ। তা ঈমানের গোড়ার বিষয়। দ্বীনের মূল ভিত্তি। তিনি বলেন, ‘আসমান ও জমিনের শপথ, নিশ্চয় তা মহাসত্য, ঠিক সেরকম যেরকম তোমরা কথা বলার শক্তি রাখ।’ (সুরা যারিয়াত : ২৩)। তিনি কেয়ামতের বিচার দিবসে বান্দাদের সমবেত করার কথা বলতে গিয়ে তাঁর নিজের প্রভুত্বের শপথ করেছেন। ‘তোমার রবের কসম, আমি অবশ্যই তাদের সমবেত করব।’ (সুরা মারইয়াম : ৬৮)। বান্দা পরকালে তার আমলের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। আল্লাহর কাছেই তাকে ফিরতে হবে, এছাড়া কোনো উপায় নেই। আল্লাহ বলেন, ‘তোমার রবের কসম, আমি অবশ্যই তাদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করব, তারা যা করত সে বিষয়ে।’ (সুরা হিজর : ৯২-৯৩)। তিনি তাঁর উলুহিয়্যত তথা মাবুদ হওয়ার শপথ করে মুশরেকদের জবাবদিহি করা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আল্লাহর শপথ! তোমরা যেসব মিথ্যাচরণ করতে তা নিয়ে তোমাদের অবশ্যই জিজ্ঞেসাবাদ করা হবে।’ (সুরা নাহল : ৫৬)। তিনি কোরআন নাজিল করা প্রসঙ্গে শপথ করে বলেন, ‘সুস্পষ্ট কিতাবের কসম! নিশ্চয় আমি বরকতময় রাতে তা নাজিল করেছি।’ (সুরা দুখান : ২-৩)।
আল্লাহ রাসুলুল্লাহ (সা.) এর জীবনের শপথ করেছেন, কারণ আদম সন্তানের মাঝে তাঁর জীবনের মূল্য সবচেয়ে বেশি। তিনি বলেন, ‘আপনার জীবনের শপথ! নিশ্চয় তারা তাদের ভ্রষ্টাচারে দ্বিধাগ্রস্ত।’ (সুরা হিজর : ৭২)।
আল্লাহ ফেরেশতাদের নামে শপথ করে বলেন, ‘শপথ সুন্দর করে সারিবদ্ধভাবে বিরাজমান ফেরেশতাদের! শপথ আল্লাহর কালাম পাঠকারী ফেরেশতাদের!’ (সুরা সাফফাত : ১ ও ৩)।
মহাবিশ্ব এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। তাতে যেসব নিখুঁত কীর্তি রয়েছে তা সৃষ্টিকে তার স্রষ্টার মহিমা ও তার সৃষ্টিকর্তার শক্তিমত্তার কথা পরিচয় করিয়ে দেয়। মহাকাশ তার পরিধি, উচ্চতা, বিস্তৃতি, রং ও উজ্জ্বলতায় আল্লাহর অন্যতম বৃহৎ নিদর্শন। আল্লাহ আসমানের ঊর্ধ্বে বিরাজমান। আসমান ফেরেশতাদের মহল। সেখান থেকেই রিজিক নাজিল হয়। রুহ ও আমল আসমানের দিকেই ওঠে যায়। তাই আল্লাহ আসমান, আসমানের স্রষ্টা ও তাতে তিনি যা বানিয়েছেন সেসবের নামে শপথ করেছেন। ‘শপথ আকাশের এবং যিনি তা নির্মাণ করেছেন।’ (সুরা শামস : ৫)। আকাশের উচ্চতার বিববরণ দিয়ে তিনি শপথ করেছেন। ‘শপথ সমুন্নত আকাশের।’ (সুরা তুর : ৫)। আকাশে যে সৌন্দর্য, শোভা, নিপুণতা রয়েছে সেটার শপথ করে আল্লাহ বলেন, ‘শপথ বহু পথবিশিষ্ট আকাশের।‘ (সুরা যারিয়াত : ৭)।
আল্লাহ নক্ষত্রের অস্তাচলের শপথ করেছেন, যেগুলোর দ্বারা দিনরাত, বর্ষ, মাস ও দিনের ভিত্তি স্থাপিত হয়। ‘আমি শপথ করছি নক্ষত্ররাজির অস্তাচলের।’ (সুরা ওয়াকিআ : ৭৫)। নক্ষত্ররাজির রয়েছে বিভিন্ন পরিস্থিতি, আল্লাহ সেগুলো গঠন করেছেন। তার আছে উদয়স্থল, সেখান থেকে উদিত হয়ে তা চলতে থাকে অনুগত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে তার অস্তমিত হওয়া পর্যন্ত। তিনি এর কসম করে বলেন, ‘শপথ স্বচ্ছন্দগতির নক্ষত্ররাজির।’ (সুরা যারিয়াত : ৩)।
সূর্য ও চন্দ্র নিকটতম আকাশে দৃশ্যমান অন্যতম বিশাল সৃষ্টি। এদের পথপরিক্রমায় মানুষের উপকারিতা ও প্রয়োজন সম্পন্ন হয়। সৃষ্টজীবের জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে এ দুটোর অস্তিত্বের বিকল্প নেই। আল্লাহ চন্দ্র-সূর্যের বিষয়টির গুরুত্ব প্রকাশ করতে এ দুটির নামে শপথ করেছেন। তিনি বলেন, ‘সূর্য ও তার কিরণের শপথ! চন্দ্রের শপথ! যখন তা সূর্যের পরে আবির্ভূত হয়।’ (সুরা শামস : ১-২)।
পৃথিবী সমতলভূমি ও বিস্তীর্ণ বিছানার মতো। আল্লাহ সৃষ্টির জন্য তা সুগম করেছেন, সমতল বানিয়েছেন, বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে সমৃদ্ধি দান করেছেন। সেখানে চতুষ্পদ জন্তু ও প্রাণী সৃষ্টি করেছেন। তাতে বিভিন্ন ঝরনা ও নদনদী প্রবাহিত করেছেন। তিনি পৃথিবী ও তার প্রশস্ততার ও যিনি তা সম্প্রসারিত ও প্রলম্বিত করেছেন তার নামে কসম খেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘শপথ পৃথিবীর এবং যিনি তাকে বিস্তৃত করেছেন তাঁর।’ (সুরা শামস : ৬)। পৃথিবী থেকে যেসব উদ্ভিদ উদ্গত হয়, যার দ্বারা তার প্রাণ সঞ্চার হয় ও পৃথিবীতে যারা আছে তার কসম করেছেন। ‘শপথ জমিনের, যা বিদীর্ণ হয়।’ (সুরা তারিক : ১২)। বাতাস অবাক করা এক সৃষ্টি, যা দেখা যায় না। আল্লাহ সাহায্য কিংবা শাস্তি অথবা জীবন-জীবিকার জন্য বাতাসের গতিপথ ও কর্মকা- নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি বাতাসের পরিক্রমার শপথ করেছেন, আল্লাহ যা নির্দেশ করেছেন বাতাস তা মেনে চলার কারণে। ‘শপথ কল্যাণস্বরূপ প্রেরিত বাতাসের!’ (সুরা মুরসালাত : ১)। ঝড় ও দমকা হাওয়ার শপথ করেছেন, তার দ্বারা আল্লাহ যাকে ইচ্ছা উড়িয়ে নেন, সেই বাতাস যা কিছু তছনছ করে দেয়, তা পানি ও মাটি দিয়ে যা ডুবিয়ে দেয় তার নামে কসম করেছেন, যখন তা চূর্ণ করে। তিনি বলেন, ‘শপথ ধূলি-ঝঞ্ঝার।’ (সুরা যারিয়াত : ১)। সেই বাতাসের নামে কসম করেছেন, যা পানির ভারী মেঘমালা বহন করে। ‘শপথ বোঝা বহনকারী মেঘপুঞ্জের।’ (সুরা যারিয়াত : ২)।
সমুদ্র আল্লাহর অন্যতম বড় নিদর্শনের একটি। জলে পরিপূর্ণ। আল্লাহর আদেশের অধীন। তা আধিপত্য করে মাটির ওপর। তাতে যার আছে তাদের নিমজ্জিত করে দিতে পারে। সমুদ্রে চলাচল করে আল্লাহর রিজিক বোঝাই জাহাজ। সমুদ্রে আছে স্থলভাগের চেয়ে বহুগুণ বেশি বিভিন্ন সৃষ্টজীব। সমুদ্র ও তার বিস্ময়কর নানা বিষয়ের কসম খেয়েছেন আল্লাহ। তিনি বলেন, ‘শপথ উদ্বেলিত সমুদ্রের!’ (সুরা তুর : ৬)। আল্লাহ মানুষকে তাঁর অনেক সৃষ্টজীবের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। তিনি মানুষের আদিনিবাস ও আদিজনপদের কেন্দ্রস্থলের শপথ করেছেন, আর তা হলো আদিজনপদ মক্কা। তিনি বলেন, ‘আমি এ নগরের শপথ করছি। আপনি তো এ নগরেরই বাসিন্দা।’ (সুরা বালাদ : ১-২)। তিনি মানুষের মূল উৎস তার আদিপিতা আদম (আ.) এর শপথ করেছেন। তিনি বলেন, ‘শপথ জন্মদাতার।’ (সুরা বালাদ : ৩)। তার যে বংশধরের উদ্ভব হয়েছে তার শপথ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আর যা সে জন্ম দিয়েছে তার কসম।’ (সুরা বালাদ : ৩)।
লিখন ও লেখার কলম মানুষের কাছে বিশাল বড় নেয়ামত ও দান। তা দ্বীন সংরক্ষণ ও ইসলাম বুঝার মাধ্যম। এর দ্বারা মানুষের নানা উপকার সাধিত হয়। আল্লাহ এ দুটির নামে কসম করে বলেন, তাঁর নবী শত্রুদের আঘাত ও অভিযোগ থেকে পবিত্র। তিনি সম্মানিত নবী, তাঁকে তাঁর রব মহান চরিত্রে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কেউ তাঁর সমতুল্য হতে পারবে না। ‘শপথ কলমের এবং তারা যা লিপিবদ্ধ করে তার। আপনার রবের অনুগ্রহে আপনি উন্মাদ নন। আপনার জন্য আছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার। আপনি মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।’ (সুরা কলম : ১-৪)। ঘোড়া বাহন ও শোভা। তার উপকারিতা অবধারিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কেয়ামত পর্যন্ত ঘোড়ার মাথায় কল্যাণ যুক্ত থাকবে।’ (বোখারি ও মুসলিম)।
আল্লাহ ঘোড়ার নামে এমন অবস্থার শপথ করেছেন, সেখানে অন্য প্রাণীকে বিশেষভাবে উল্লেখ করেননি। ঘোড়ার তীব্র শক্তিশালী গতির শপথ করেছেন, যার থেকে তার বক্ষে নিজের নিঃশ্বাসের শব্দ বের হতে থাকে। তিনি বলেন, ‘শপথ ঊর্ধ্বশ্বাসে ধাবমান অশ্বরাজির।’ (সুরা আদিয়াত : ১)। সবচেয়ে সেরা ও শ্রেষ্ঠতম গৃহ হলো আসমানের বায়তুল মামুর আর সবচেয়ে সেরা পর্বত হলো তুর পর্বত, যেখানে আল্লাহ নিজের নবী মুসা (আ.) এর সঙ্গে কথা বলেছেন। আর সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব হচ্ছে পবিত্র কোরআন। আল্লাহ এ সবগুলোকে শপথে যুক্ত করে বলেন, ‘শপথ তুর পর্বতের, শপথ কিতাবের, যা লিখিত আছে উন্মুক্ত পত্রে। শপথ বায়তুল মামুরের।’ (সুরা তুর : ১-৪)। আল্লাহ মক্কা নগরীকে অন্যান্য সব জায়গা থেকে উচ্চ মর্যাদায় বিশেষিত করেছেন। তিনি তার নামে শপথ করে তাকে নিরাপদ নগর বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, ‘শপথ ত্বিন ও জয়তুন ফলের। শপথ সিনাই পর্বতের। শপথ এই নিরাপদ নগরীর।’ (সুরা ত্বিন : ১-৩)।
রাত্রি হলো প্রশান্তি ও ইবাদতের সময়। আমাদের রব রাতের তৃতীয় প্রহরে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করের। নিজ অনুগ্রহে ও দয়ায় তাঁর রহমতের ফল্গুধারা বান্দার ওপর দান করেন। মহাবিশ্বের নিদর্শনগুলোর মধ্যে আল্লাহ সবচেয়ে বেশি রাতেরই শপথ করেছেন। রাতের সব ধরনের পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন পন্থায় শপথ করেছেন। তিনি কসম করে বলেন, ‘শপথ নিশার যখন তার অবসান হয়।’ (সুরা তাকভির : ১৭)। রাতের চলমানতার কসম করেন, ‘শপথ রাত্রির যখন তা চলমান থাকে।’ (সুরা ফজর : ৪)। রাত যখন তার অন্ধকার দিয়ে সব ঢেকে ফেলে তখন তিনি কসম করে বলেন, ‘শপথ রাতের যখন তা আঁধারে গভীর হয়।’ (সুরা দোহা : ২)।
দিবস হচ্ছে ইবাদত ও জীবিকা উপার্জনের সময়। দিনের সবগুলো স্তর ভোর, প্রভাত, বিকাল নিয়ে তিনি শপথ করেছেন। রাত ও দিন জীবনের সময়। এ দুই সময়ের আমল দ্বারাই চিরস্থায়ী সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য অর্জন হয়। রাতদিনের সর্বত্রই বড় বড় নিদর্শন বিদ্যমান। রাতদিনের পরিক্রমায় রয়েছে এ দুটির পরিচালনাকারীর বড়ত্ব ও মহিমার প্রমাণ। আল্লাহ কসম করে তাই বলেন, ‘শপথ রাতের যখন তা অপসৃত হয়। শপথ সকালের যখন তা পরিস্ফুটিত হয়।’ (সুরা মুদ্দাসসির : ৩৩-৩৪)। তিনি অস্তরাগের শপথ করেন, যা রাতের আগমন ও দিবসের অবসানের চিহ্ন। ‘আমি শপথ করি অস্তরাগের।’ (সুরা ইনশিকাক : ১৬)। জিলহজ মাসের রাতগুলো শ্রেষ্ঠ রাত। তাই তিনি শপথ করে বলেন, ‘শপথ ১০ রজনীর।’ (সুরা ফজর : ২)। সর্বশেষ দিবস কেয়ামতের শপথ করে আল্লাহ বলেন, ‘শপথ প্রতিশ্রুত দিবসের।’ (সুরা বুরুজ : ২)।
আল্লাহ যেমনিভাবে নির্দিষ্ট বড় বড় জিনিসের শপথ করেছেন, তেমনিভাবে আমরা তাঁর সৃষ্টির যা দেখি আর যা দেখি না, তার সবকিছুর নামেই কসম করেছেন, তাতে কোনো কিছুর কথা কসম করে আলাদা করেননি। তিনি বলেন, ‘আমি শপথ করি সেসব জিনিসের যা তোমরা দেখ এবং যা তোমরা দেখতে পাও না।’ (সুরা হাক্কাহ : ৩৮-৩৯)। আর এটা আল্লাহর কিতাবের সবচেয়ে ব্যাপকতম শপথ।
আল্লাহ সব মাখলুক সৃষ্টি করেছেন। তাকে সুন্দর করে গড়েছেন। তিনি সৃষ্টিকে চ্যালেঞ্জ করেছেন, তারা যেন একটি অণু কিংবা দানা বা একটি যব সৃষ্টি করে দেখায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ বলেন, ‘তার চেয়ে বড় জালেম কে আছে যে আমার সৃষ্টির মতো কিছু সৃষ্টি করতে যায়, তাহলে তারা একটি অণু বানিয়ে দেখাক অথবা একটি দানা সৃষ্টি করুক কিংবা একটি যব।’ (বোখারি ও মুসলিম)। আল্লাহ তাঁর যাবতীয় নিপুণ সৃষ্টির নামে কসম করেন। তার মধ্য থেকে বড় বড় কিছু সৃষ্টিকে বিশেষভাবে আলাদা করেছেন সেগুলোর নামে বিশেষভাবে কসম খেয়ে। সেগুলোকে নিজের একত্ব, শক্তি ও ক্ষমতার নিদর্শনরূপে বর্ণনা করেছেন, যাতে মানুষ তাঁর ইবাদত করে, তাঁর মহিমা গায়, তাঁর আদেশ পালন করে এবং তাঁর নিষেধ করা বিষয় থেকে বিরত থাকে।
আল্লাহ সব সৃষ্টির স্রষ্টা। তিনি তাঁর সৃষ্টির যা ইচ্ছা তার নামে শপথ করেন। বান্দাকে তিনি একমাত্র তাঁর নামেই শপথ করার আদেশ দিয়েছেন, তাঁর বড়ত্ব ও মহিমা প্রকাশ করতে। বান্দাকে অন্য কিছুর নামে শপথ করতে নিষেধ করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে শপথ করবে সে যেন আল্লাহর নামে শপথ করে, অন্যথায় যেন চুপ থাকে।’ (বোখারি ও মুসলিম)। আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর নামে কসম খাওয়া এক ধরনের শিরক। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যকিছুর নামে কসম খেয়েছে সে কুফরি করেছে অথবা শিরক করেছে।’ (তিরমিজি)। যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর নামে শপথ করেছে নবী করিম (সা.) তাকে আল্লাহর একত্ব ঘোষণা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যে লোক লাত বা উজ্জার নামে কসম খেয়েছে সে যেন বলে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু।’ (বোখারি ও মুসলিম)। প্রয়োজনের সময় একমাত্র আল্লাহর নামে নিষ্ঠাবান ও সত্যনিষ্ঠ হয়ে, আল্লাহর বড়ত্ব প্রকাশ করে কসম করবে, অতিরঞ্জন করবে না। যে বিষয়ের কসম খাবে তা সব সময় রক্ষা করবে। কেননা আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন, ‘তোমরা তোমাদের শপথ রক্ষা করো।’ (সুরা মায়েদা : ৮৯)। আল্লাহই একমাত্র বড়ত্ব ও মহিমান্বিত হওয়ার যোগ্য।
১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪২ হিজরি মসজিদে
নববির জুমার খুতবার সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর
করেছেন মাহমুদুল হাসান জুনাইদ