প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫
মক্কা ছিল তখন অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগ। ধনী-গরিবের পার্থক্য ছিল। শ্রেণিবৈষম্য ছিল। ডাকাতি-রাহাজানি হতো যখন-তখন। জিনা-ব্যভিচার ছিল লোকদের কাছে গর্বের বিষয়। বংশীয় আধিপত্য বিস্তার আর অন্যকে অসম্মান করা ছিল স্বাভাবিক ব্যাপার। মোটকথা, মানুষের অধিকার ছিল না। সে সমাজে মুহাম্মাদ (সা.) নবী ও রাসুল হয়ে এলেন। সমাজ বদলে দিলেন এক সময়। অন্ধকার জগতের মানুষ হলেন পবিত্র আলোর ফেরিওয়ালা। হলেন জগতের সেরা মানুষ। তাদের নাম দেওয়া হলো সাহাবি। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাথী। যেসব মানুষ রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে দেখে ঈমান এনেছেন, মুসলিম অবস্থায় মারা গেছেন, তারা হলেন সাহাবি। এদের মধ্যে মুসলিমদের খলিফা ছিলেন চারজন। নবীজির মৃত্যুর পর তারা ৩০ বছর মুসলিমদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এরা হলেন- আবু বকর (রা.), উমর (রা.), উসমান (রা.) ও আলি (রা.)।
প্রথম খলিফা আবু বকর (রা.)
ইসলামের প্রথম খলিফা ছিলেন আবু বকর (রা.)। তিনি দুই বছরের বেশি সময় খেলাফতের দায়িত্ব পালন করেন। তার জন্ম মক্কার কুরাইশ বংশে, ৫৭৩ খ্রিষ্টাব্দে। তার বাবার নাম আবু কুহাফা ও মায়ের নাম সালমা বিনতে সাখার। নবীজি (সা.) ছিলেন তার জামাতা। তিনি উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.)-এর আব্বা। পুরুষদের মধ্যে মক্কায় প্রথমে তিনি মুসলমান হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। নবীজির সঙ্গে তিনি মদিনায় হিজরত করেন। নবীজিকে তিনি খুব ভালোবাসতেন। বন্ধু মনে করতেন। নবীজির অসুস্থতায় নামাজের ইমামতি করতেন। নবীজির মৃত্যুর পর তিনি সবার সম্মতিতে খলিফা নির্বাচিত হন। তার খেলাফতকাল ছিল ২৭ মাস বা দুই বছরের কিছু বেশি সময়। (বোখারি : ৬৮৩০)।
দ্বিতীয় খলিফা ওমর (রা.)
ওমর (রা.) ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা। ৫৮৩ খ্রিষ্টাব্দে মক্কার কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা খাত্তাব ছিলেন কুরাইশ বংশের বিখ্যাত লোক। মা হানতামা ছিলেন গৃহিণী। তিনি শিক্ষিত ছিলেন। কবিতা লিখতেন। কুস্তিবিদ্যাও জানতেন। তার ইসলাম গ্রহণে রাসুলুল্লাহ (সা.) বেশ খুশি হন। সাহাবিরা সাহস পান। তার উদ্যোগে প্রথম মক্কায় প্রকাশ্যে নামাজ আদায় করা হয়। আবু বকর (রা.)-এর মৃত্যুর পর তিনি খলিফা নির্বাচিত হন। আবু বকর (রা.) মৃত্যুকালে বিশিষ্ট সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে উমর (রা.)-কে খলিফা বানান। পরে সব সাহাবিরা তা মেনে নেন। (তারিখে তাবারি : ২/৩৫২, ৩৫৩; ইবনু সাদ, তাবাকাতুল কুবরা : ৩/১৯৯-২০০)। তার খেলাফতকাল ছিল ১০ বছর ৬ মাস ৩ দিন।
তৃতীয় খলিফা উসমান (রা.)
ইসলামের তৃতীয় খলিফা উসমান (রা.)। তার জন্ম মক্কায়, ৫৭৬ খ্রিষ্টাব্দে। তার বংশ পরক্রমা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে মিলেছে। নবীজি (সা.)-এর দুই মেয়ের স্বামী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন তিনি। তিনি ছিলেন অনেক দয়ালু সাহাবি। ওমর (রা.)-এর পর তিনি খলিফা নির্বাচিত হন। ওমর (রা.) শাহাদাতকালে ছয়জনের একটি মজলিসে শুরা গঠন করেন। ছয়জনই ছিলেন জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবি। তারা নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে উসমান (রা.)-কে খলিফা বানান। (বুখারি, হাদিস: ৩৭০০)। ১১ বছর ১১ মাস ৪ দিন খেলাফতের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
চতুর্থ খলিফা আলি (রা.)
আলি (রা.) ছিলেন ইসলামের চতুর্থ ও সর্বশেষ খলিফা। মক্কার কুরাইশ বংশে তার জন্ম, ৬০০ খ্রিষ্টাব্দে। তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চাচা আবু তালেবের ছেলে ও তার জামাতা ছিলেন। তিনি নবীজির আদরের ধন ফাতেমা (রা.)-কে বিয়ে করেছিলেন। নবীজির দৌহিত্র জান্নাতের সরদার হাসান ও হোসাইন (রা.)-এর বাবা ছিলেন তিনি। বালকদের মধ্যে প্রথমে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। নবীজি যখন মদিনায় হিজরত করেন, তখন তাকে নিজের বিছানায় রেখে যান। তিনি ছিলেন সেরা বীরদের একজন। তিনি বীরত্বের সঙ্গে সব যুদ্ধে লড়াই করেন। পণ্ডিতও ছিলেন তিনি। উসমান (রা.)-এর শাহাদাতবরণের পর আলি (রা.) সাহাবিদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে খলিফা নির্বাচিত হন। ৪ বছর ৮ মাস ২৩ দিন তিনি দায়িত্ব পালন শেষে মারা যান।