স্বাগত ইসলামি আরবি ১৪৪২ হিজরি। বছরের প্রথম মাস মহররম। ইসলামি পরিভাষায় মহররমের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। মহররম মাস গুরুত্বপূর্ণ। হাদিস শরিফে চান্দ্রবর্ষের ১২ মাসের মধ্যে মহররমকে ‘শাহরুল্লাহ’ বা আল্লাহর মাস বলা হয়েছে। প্রিয়নবী (সা.) এই মাসে যথাসম্ভব বেশি বেশি রোজা রাখতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘রমজানের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা হলো মহররমের রোজা।’ (মুসলিম : ১১৬৩)।
পবিত্র কোরআনে মহররম মাসসহ চারটি মাসকে বিশেষভাবে সম্মানিত ঘোষণা করা হয়েছে। সুরা তওবার ৩৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আকাশম-লী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে মাস গণনায় মাস ১২টি, তন্মধ্যে চারটি মাস নিষিদ্ধ মাস, এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান।’ এ আয়াতে ‘আরবায়াতুন হুরুম’ মানে অতি সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ চার মাস বোঝানো হয়েছে। তা হলোÑ জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব। এই চার মাসের মর্যাদা ও গুরুত্বের কারণে তখন সব যুদ্ধবিগ্রহ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। শত্রু-মিত্র সবাই এ চার মাসের মর্যাদা রক্ষা করে যুদ্ধ-কলহ থেকে দূরে থাকত।
মহররম মাসের ১০ তারিখ মুসলিম ইতিহাসে এক হৃদয়বিদারক ঘটনার অবতারণা হয়। এদিন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৬১ হিজরিতে রাসুল (সা.) এর দৌহিত্র জান্নাতের সরদার আহলে বাইত ইমাম হোসাইন (রা.) কারবালার প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে সপরিবারে শাহাদতবরণ করেন।
ইসলামের ইতিহাসে আশুরার এদিনে অনেক আম্বিয়ায়ে কেরাম মহান আল্লাহ তায়ালার সাহায্য লাভ করেন এবং কঠিন বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি লাভ করেন। এর শুকরিয়া হিসেবে নবী-রাসুল ও তাঁদের উম্মতেরা রোজা পালন করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) মদিনায় আগমন করে আশুরার দিন ইহুদিদের রোজা পালন করতে দেখলেন। তিনি জানতে পারলেন, এদিনে মুসা (আ.) তাওরাত কিতাব লাভ করেন। এদিন তিনি ও তার জাতির লোকেরা নীলনদ পার হয়ে ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্তি লাভ করেন। তাই এর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য মুসা (আ.) এর অনুসারী ইহুদিরা এদিন রোজা রাখে। তখন মহানবী (সা.) ইহুদিদের লক্ষ্য করে বলেন, ‘তোমাদের তুলনায় মুসা (আ.) এর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অধিকতর বেশি। সে হিসেবে এ ব্যাপারে আমরাই এর বেশি হকদার ও নিকটবর্তী।’ তখন থেকে মহানবী (সা.) নিজেও আশুরার রোজা পালন করতেন এবং উম্মতকেও তা পালনের নির্দেশ দিলেন।’ (মুসলিম : ১১৩০)।
তবে প্রিয়নবী (সা.) ১০ মহররমের সঙ্গে ৯ বা ১১ মহররম মিলিয়ে দুটি রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আশুরার রেজার গুরুত্ব সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আশুরার রোজার ব্যাপারে আমি আশাবাদী, আল্লাহ তায়ালা এর উসিলায় অতীতের এক বছরের গোনাহ মাফ করে দেবেন।’ (তিরমিজি)।
এবার আমাদের বাংলাদেশে পবিত্র আশুরা হচ্ছে আগামী রোববার। সুতরাং আমরা রোববারসহ তার আগে ও পরে অতিরিক্ত একটি করে মোট তিনটি বা ওইদিনসহ আগে বা পরের যে কোনো একদিন মিলিয়ে দুটি রোজা রাখতে পারি। আমরা রোজা রেখে আল্লাহর পক্ষ থেকে কল্যাণ লাভ করার সুযোগ গ্রহণ করি। করোনাসহ পৃথিবীতে উম্মাহর যত সমস্যা আছে সব থেকে মুক্তির জন্য দোয়া করি।