ক্রমেই নিজেকে শাণিত করছেন নুরুল হাসান সোহান। কিপিংয়ের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও ধারাবাহিক তিনি। এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও (ডিপিএলে) হাসছে তার ব্যাট। সবশেষ ম্যাচেও স্বরুপে দেখা গেছে এই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানকে। দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ে শক্ত হাতে দাঁড়িয়ে গেলেন সোহান। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও জয়ের মাঝে তিনিই হয়ে রইলেন একমাত্র বাধা। বীরোচিত ব্যাটিংয়ে ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাবের আশা বাঁচিয়ে অনেকটা পথ এগোলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারলেন না। খুব কাছে গিয়েও পরাজিত দলে থাকলেন উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান।
গতকাল শুক্রবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দারুণ এখন সেঞ্চুরি করেও দলকে জেতাতে পারেননি সোহান। তবে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে এবার একাধিক ম্যাচে ধানমন্ডির জয়ের নায়ক তিনি। বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাওয়া সবশেষ তিন ম্যাচেও দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। আবার জাতীয় দলে সুযোগ পেলে সেখান থেকেই শুরু করতে চান ৩১ বছর বয়সী কিপার-ব্যাটসম্যান।
মুশফিকুর রহিমের অবসরে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানের জায়গাটি এখন ফাঁকা। শূন্যস্থান পূরণে জাতীয় দল ও আশপাশেই আছেন লিটন কুমার দাস ও জাকের আলি। এর বাইরে অন্য কাউকে বিবেচনা করা হলে, নিশ্চিতভাবেই দাবিদার সোহান। উইকেটের পেছনে নির্ভরতায় তর্কযোগ্যভাবে দেশের সেরা সোহান। প্রচলিত ঘরানার বাইরে গিয়ে ব্যাটিংয়েও এখন ধারাবাহিকভাবে রান করছেন অভিজ্ঞ কিপার-ব্যাটসম্যান। চলতি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে এখন পর্যন্ত সাত ম্যাচে দুই সেঞ্চুরি ও এক ফিফটিতে আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৮৬ রান করেছেন তিনি। মোহামেডানের বিপক্ষে ম্যাচে একাই লড়েছেন সোহান। ২১৭ রানের লক্ষ্যে মাত্র ৭৯ রানে ৬ উইকেট হারানো দলকে টেনে নিয়েছেন ১৯৩ রান পর্যন্ত। ৪৪তম ওভারে টানা দুই ছক্কায় নিজের সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন তিনি। তবে ম্যাচ জেতানোর কাজ তখনও বাকি থাকায় তিন অঙ্ক ছোঁয়ার কোনো বাড়তি উদযাপন বা তৃপ্তি দেখা যায়নি। পরের বলেই অবশ্য ভুল করে বসেন ধানমন্ডি অধিনায়ক। সাইফ উদ্দিনের বলে আবারও বড় শটের খোঁজে লং অনে ধরা পড়ে যান তিনি। সোহানের বিদায়ের মাধ্যমে শেষ হয়ে যায় ম্যাচ। তবে দারুণ ইনিংসে ম্যাচ সেরার পুরস্কার ওঠে তারই হাতে। ওই পুরস্কার গ্রহণের সময়ও হাসি ফোটেনি সোহানের মুখে। পরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন, শেষের শটটি খেলেই বুঝতে পেরেছিলেন সর্বনাশ ঘটে গেছে তার। ‘(তৃতীয় শটে) টাইমিং ঠিকভাবে হয়নি। আমার মনে হয়েছিল যদি গ্যাপে যায়, তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু না হলে... সত্যি বলতে বুঝতে পেরেছিলাম যে হয়তো ওই টাইমিংটা হয়নি।’
এদিন না পারলেও এক ম্যাচ আগেই সোহানের ব্যাট থেকে আসে ১৩২ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। যা ধানমন্ডিকে পাইয়ে দেয় ২৭৭ রানের পুঁজি। এর আগে লিগের প্রথম ম্যাচেও ৫৮ রানের অপরাজিত ইনিংসে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক। সব মিলিয়ে চলতি লিগে দারুণ ছন্দে সোহান। জাতীয় দলে ফেরার আলোচনাও তাই উঠছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে নিউ জিল্যান্ড সিরিজে সবশেষ ওয়ানডে খেলেছেন সোহান। তবে ওই ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাননি তিনি। ২০২২ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের দুই ম্যাচে ব্যাটিংয়ে নেমে ম্যাচ শেষ করে মাঠ ছাড়েন সোহান।
এর আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও চাপের সময় ৪৫ রানের ইনিংসে দলের জয় নিশ্চিত করেন কিপার-ব্যাটসম্যান। সাত ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ার পাঁচবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে সোহানের সংগ্রহ ৯৪.৮২ স্ট্রাইক রেটে ১৬৫ রান। তিনবার অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়ায় গড় অবিশ্বাস্য, ৮২.৫০। এই সাতটি ম্যাচ খেলতে তার লেগেছে সাত বছর!