বাংলাদেশ দলের নতুন টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হিসেবে লিটন দাস কেমন করবে তা এখনই বলা কঠিন। তবে নেতৃত্বে সফলতা পেয়েছেন তিনি। পাকাপাকি ভাবে দায়িত্ব পাওয়ার আগে উইন্ডিজে সিরিজ জিতেছেন। ওই সময় লিটন স্থায়ী অধিনায়ক ছিলেন না। তবে এবার নেতৃত্ব পেয়েছেন অন্তত ২০২৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত। তাই এখন নেতৃত্বের চাপ লিটন কি নিতে পারবেন? এমন প্রশ্ন উঠেই যায়। এর উত্তরও দিয়ে দিয়েছেন জাতীয় দলের সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। তার চোখে লিটন অনেক বদলেছেন। এখন আগের মতো চুপটি থাকেন না। অনেক খোলামেলা ভাবেই মিশছেন সবার সঙ্গে। ক্রিকেট নিয়ে তার জ্ঞানও আগের চেয়ে সমৃদ্ধ।
সালাউদ্দিন জানিয়েছেন, ‘লিটনকে আগে যেমন দেখেছি আর এখন যেমন দেখছি, দুই ব্যক্তির মধ্যে আকাশ পাতাল তফাত।
আপনারাও দেখছেন সে আগের চেয়ে অনেক সাবলীল ভাবে সবার সঙ্গে মিশছে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তার সাক্ষাৎকারে তাকে অনেক স্বতস্ফুর্ত ভাবে কথা বলতে দেখেছেন। লিটন নিজেকে বদলেছে আশাকরি নেতৃত্বেও সে নতুন করে নিজেকে ফিরে পাবে।’ নিজেকে বদলে ফেলার পর লিটন এখনও ব্যাট হাতে নামার সুযোগ পাননি। পিএসএল খেলতে গিয়ে ফিরে আসতে হয়। না হলে ওই আসরে কেমন করেন তা দেখার সুযোগ ছিল। এর আগে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে কিছু ভালো ইনিংস খেলেছিলেন। তবে জাতীয় দলের হয়ে পারফরম করা ভিন্ন বিষয়। যে অবস্থায় গত দুই বছরে লিটন ব্যর্থ ছিলেন। বিশেষ করে ২০২২ সালটি দুর্দান্ত কাটানোর পর লিটনের ব্যাটে রান খরা চলছে। এই রান খরা লিটনের নেতৃত্বে প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।
এই চাপে পড়ার প্রশ্নটি আসছে নেতৃত্ব পাওয়ার কারণেই। বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব মানেই ‘হট সিট’। এখানে প্রশংসার চেয়ে সমালোচনায় বেশি পড়তে হয়। তাছাগা সংবাদ মাধ্যমে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে মাথাও ঠান্ডা রাখতে হয়। এর আগে সংবাদ মাধ্যমে জোড়ালো উত্তর দিয়ে সমালোচিত হয়েছিলেন লিটন। জাতীয় দলের সফলতার চেয়ে ব্যর্থতার হারই যখন বেশি, লিটন সেই ব্যর্থতার চাপ কীভাবে সামলাবেন এমন প্রশ্নের উত্তরে সালাউদ্দিন জানিয়েছেন, ‘আমি একটা জিনিস শেখানোর চেষ্টা করছি। জাতীয় দলের নেতৃত্ব যখন তুমি এসেছ, তখন তোমাকে সব কিছু নিয়েই আসতে হবে। সফল হলে যেমন ভালো কথা শুনতে হবে, প্রশংসা হবে; তেমনি বিফল হলে সমালোচনা বা তিরস্কারটাও তোমার উপর আসবে। এছাড়া দলকে সামলানো, অফিসিয়ালদের সামলানো, ম্যাচের পরিস্থিতি সামলানো, সংবাদ মাধ্যম সামলানো; সব কিছুর চাপ মাথায় নিয়েই খেলতে হবে।’ কিন্তু বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব পেলেই এত চাপ আসবে কেন? ভারত, অস্ট্রেলিয়া এমনকি র্যাংকিংয়ে নিচের দিকে থাকা জিম্বাবুয়ে বা আফগানিস্তানেও তো নেতৃত্ব পরিবর্তন হয়। কিন্তু সেখানে অধিনায়ক নিয়ে এত আলোচনা হয় না।
এর কারণ হিসেবে পারফরমকেই দায়ি করলেন সালাউদ্দিন, ‘আসলে আমরা তো দল হিসেবে পারফরম করতে পারি না। এটা হলে সাফল্য বেশি আসতো, সমালোচনা কম হতো। পাশাপাশি আমরা একটু আবেগী জাতি, সাফল্য-ব্যর্থতায় প্রতিক্রিয়া একটু বেশি দেখাই। এজন্য বাংলাদেশ দলের নেতৃত্বের জায়গাটা একটু বেশি চাপের।’ লিটন হয়তো সেই চাপ সামলে নেয়ার পস্তুতি নিচ্ছেন। তাই নিজেকে বদলেছেন অনেকটা। এখন আত্মকেন্দ্রিক না হয়ে দলকেন্দ্রিক হওয়ার চেষ্টায় এই ব্যাটার। তাতে যদি বাংলাদেশের ভালো হয়, সেরা লিটন বের হয়ে আসেন তাহলে সেটাই ভালো।
সালাউদ্দিন বলেন, ‘মিরাজ বিশ্বের ওয়ান অব দ্য বেস্ট অলরাউন্ডার। সে যদি খেলতে পারত আমাদের জন্য ভালো হতো। সে বিপিএলে ভালো পারফর্ম করেছে। কিছু কিছু কম্বিনেশনের কারণে কিন্তু সেরা খেলোয়াড়কে আপনার বাইরে রাখতে হচ্ছে।’ এই কোচের মন্তব্য করেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়কত্ব করা মোটেও সহজ কাজ না, ‘এটা আমাদের মানতে হবে বাংলাদেশ টিমের অধিনায়কত্ব করা বাইরে থেকে অনেকে মনে করতে পারে অনেক সহজ। এটা কিন্তু অনেক সহজ কাজ না, এটা অনেক কঠিন কাজ।’