রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজে বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় রাষ্ট্রীয় শোক ছিল গত মঙ্গলবার। এ শোকের মাঝে বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি খেলেছেন পাকিস্তানের বিপক্ষে। ম্যাচ জিতে ইতিহাস গড়েছে স্বাগতিকরা। ৪৮ বলে ৫৫ করে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতা জাকের আলি জানালেন বুকে চাপা কষ্ট নিয়ে ম্যাচটা খেলতে নেমেছিলেন সবাই। তিনি বললেন, ‘জিনিসটা কঠিন ছিল। আসলে এরকম মর্মান্তিক দুর্ঘটনা কারোই কাম্য নয়। সবার জন্যই দোয়া। ওই সময়েই দোয়া করেছি। যারা নিহত হয়েছেন, তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।’ শোককে শক্তিতে পরিণত করে নিজেদের সেরাটা খেলার কথাও বললেন জাকের, ‘আসলে দল হিসেবে কঠিন ছিল। সবারই মন খারাপ ছিল। কিন্তু যেটা আপনি বললেন, আমরা পেশাদার, তাই মাঠে নামতে হবে। তাই সব কিছু ভুলে মাঠে নেমে আমাদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’
অধিনায়ক লিটন দাস জয়টা উৎসর্গ করেছেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে নিহতদের প্রতি, ‘আমরা সবাই জানি, গতকাল যে ঘটনা ঘটেছে সেটা সব বাংলাদেশির জন্যই হৃদয়বিদারক মুহূর্ত। এই সিরিজ জয় সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ করছি নিহতদের এবং তাদের পরিবারকে। আমরা জানি, হারানো জীবনগুলো আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়, কিন্তু অন্তত আমাদের পক্ষ থেকে এই জয় তাদের জন্য উৎসর্গিত।’ এখনকার টি-টোয়েন্টিতে ২০০ রান হয়ে যায় হেসেখেলে। সেখানে মিরপুরে প্রথম দুই টি-টোয়েন্টিতে রান পেতে সংগ্রাম করতে হয়েছে ব্যাটারদের। এ নিয়ে জাকের আলী বললেন, ‘দলের চাওয়া ম্যাচ জেতা। এখানে উইকেট, পরিস্থিতি ডিমান্ড করছে, ১৪০-১৫০; আমরা ও রকমই খেলছি। এখন যদি সিলেটে খেলি, অবশ্যই হাই স্কোরিং হবে। যে রকম পরিস্থিতি, এ রকম রিঅ্যাক্ট করতে হবে। দিনের শেষে ম্যাচ জিততে হবে।’ এমন উইকেটে কম রান হবে ধরে নিয়েই পরিকল্পনা সাজানোর কথাও বলেছেন জাকের, ‘আমরা তো ও রকম মানসিকতা নিয়ে এসেছি (লো স্কোরিং)। উইকেটের যে রকম কন্ডিশন, আমরা তো জানিই এখানে যে হাই স্কোরিং ম্যাচ হয় না। আমরা ও রকম পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছিলাম।’ নিজের ফিফটি নিয়ে জাকের বললেন, ‘ম্যাচ জেতানো ইনিংস খুব জরুরি। আমি শুধু ম্যাচ জেতানো ইনিংসগুলোই কাউন্ট করি। এছাড়া আর কোনো কিছু কাউন্ট করি না। যদি ভালো খেলি আর দল না জেতে, আমি কাউন্ট করি না। আজকে অবদান রাখতে পেরেছি, আজকে কাউন্ট হবে।’ শেষ দিকের ব্যাটারদের নিয়ে খেলে ফিফটি করা নিয়ে বললেন, ‘লেজের ব্যাটারদের সঙ্গে আমি বয়সভিত্তিক পর্যায় থেকেই ব্যাটিং করি। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে ৭ নম্বরে খেলতাম। অনূর্ধ্ব-১৭তে আমার একটা একশ আছে। লেজের সঙ্গে ৭১ রানের জুটি গড়ে একশটা করেছিলাম।’
দলের জয়ে জাকের আলীর ?দুর্দান্ত ব্যাটিং নিয়ে জাতীয় দলের সাবেক তারকা ক্রিকেটার হান্নান সরকার বলেন, জাকের যখন ভালো খেলে, চাপের মুখে রান করে আমি তখন অবাক হই না। ও আসলে এমন পরিস্থিতিগুলো সামলে সামলেই জাতীয় দলে এসেছে। তিনি আরও বলেন, অন্য অনেকের মতো অনূর্ধ্ব-১৯ ভালো খেলার কিছুদিন পরেই কিংবা যেকোনো একটা দুইটা টুর্নামেন্টে ভালো খেলেই জাতীয় দলে সুযোগ হয়নি ওর। জাকেরকে আসতে হয়েছে সব ফরম্যাটের ভিন্ন ভিন্ন টুর্নামেন্টে নিয়মিত পারফর্ম করেই।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে একটা টেস্ট ম্যাচের কথা মনে পড়ছে। রান করতে কষ্ট হচ্ছিলো কমবেশি সবার। জাকের দুই ইনিংসেই নট আউট ছিল। টেস্টের উদাহরণটা দেওয়ার একটাই কারণ। ছেলেটা কখন কোন মানসিকতা নিয়ে খেলতে হয় তা জানে। আর জানে বলেই বিশ্বাস করি, ও একদিন খুব ভালো কিছু করবে। ওর হাত ধরেই আসবে অনেক জয়।