
দফায় দফায় নাটক, পাল্টা পাল্টি অভিযোগ এমনকি আদালত পর্যন্ত গড়ায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচন। আর কোনো নাটকীয় ঘটনা না ঘটলে আজ দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থার পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে। একটি পক্ষ সরে দাঁড়ানোয় একতরফা এই নির্বাচনে জয় প্রায় নিশ্চিত আমিনুল ইসলাম বুলবুলের। যিনি চার মাস আগে সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছিলেন ‘টি-টোয়েন্টি ইনিংস’ খেলতে। কিন্তু এখন সাবেক এই তিনি ওয়ানডে খেলতে মাঠে নেমে পড়েছেন। স্বল্প মেয়াদের গতকালই তার মেয়াদ শেষ হয়েছে। গতকাল রোববার গণমাধ্যমের সামনে হাজির হয়েছিলেন বুলবুুল। তার দাবি, দেশের ক্রিকেটের জন্যই নতুন করে আবার পরিচালক হওয়ার দৌড়ে নেমেছেন। বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘এখানে আমার কাছে (সরকারের) প্রভাব কিছু মনে হয়নি। আমার মনে হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য আমার (বিসিবিতে) চালিয়ে যাওয়া দরকার। আমাকে যারা ভোট দিচ্ছেন বা ভোট দেবেন না অথবা আপনারা (সাংবাদিক) যারা আছেন যদি মনে করেন আমি যথেষ্ট ভালো না, আমি চলে যেতে আগ্রহী আছি যে কোনো সময়। একই সঙ্গে এটাও বলতে চাই, আমার একটাই লক্ষ্য-বাংলাদেশ ক্রিকেট।’
ক্রীড়া উপদেষ্টা তাকে সভাপতি হিসেবে থাকতে বলেননি বলেও দাবি করেছেন আমিনুল। তিনি যোগ করেন, ‘গত মেয়াদে ক্রীড়া উপদেষ্টা আমাকে সহযোগিতা করেছেন। তাকে ধন্যবাদ দিতে চাই-তিনি মন্ত্রী পদমর্যাদার মানুষ। আপনি বলছিলেন বয়কটকারীদের কথা। আমি নিজে জানি, তিনি রাত-দিন কাজ করেছেন-শুধু সুষ্ঠু নির্বাচন নয়, একটি ভালো বোর্ড গঠনের জন্যও।’ সরকারি হস্তক্ষেপসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে ক্লাব ও বিভাগ থেকে প্রার্থী হওয়া এক পক্ষ। তাদের মধ্যে আছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালও। সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে-নির্বাচন পিছিয়ে না দিলে ৪৮টি ক্লাব কোনো ধরনের ক্রিকেটে অংশ নেবে না। এ নিয়ে আমিনুল বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে ক্লাবের বিকল্প নেই। ক্রিকেটে তাদের অবিশ্বাস্য অবদান আছে। তাদের ভূমিকা, প্রয়োজনীয়তা, অবদান-সবকিছুই আমরা তুলে ধরব। চেষ্টা করব তাদের ম্যানেজ করতে। ঘুরেফিরে আমরা তো একই সমাজের মানুষ, হয়তো পারব।’
বিসিবি নির্বাচন নিয়ে মূল দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল বিসিবি সভাপতি থাকাবস্থায় আমিনুল ইসলাম বুলবুলের দেওয়া এক চিঠি নিয়ে। পরে সেই চিঠি ইস্যু গড়িয়েছে হাইকোর্ট পর্যন্ত। মূলত বুলবুল প্রেরিত চিঠিতে অ্যাডহক কমিটি থেকে জেলা বিভাগের কাউন্সিলর নিয়োগের বিষয় নিয়ে নির্দেশনা ছিল। যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলেও এতদিন চুপ ছিলেন জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক। চিঠির ব্যাপারে বুলবুল বলেন, ‘আমার একটা চিঠির বিরুদ্ধে একটা রিট হয়েছিল এবং সেই রিটটার কারণ ছিল যে, আমি একজন ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি হয়ে কেন চিঠি দিয়েছি।’ এরপর স্বপক্ষে ব্যাখ্যা দিয়েছেন বুলবুল, ‘সেই চিঠিতে কিন্তু স্পষ্ট বলা ছিল যে, এই নির্বাচনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা আছে। একটা হচ্ছে, জেলা এবং বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা। এটার সভাপতি সাধারণত জেলা প্রশাসক হয়ে থাকেন। তিনি সই করবেন। জেলা ক্রীড়া সংস্থা যেহেতু নেই এখন, একটা অ্যাডহক কমিটির মধ্যে আছে। কাউন্সিলর হতে হলে অ্যাডহক কমিটির মধ্যে একজন ক্রিকেটার হতে হবে বা ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সংগঠক হতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যখন আমি এই লিস্টটা পেলাম ইনিশিয়ালি, তখন দেখলাম মাত্র তিনজন কোয়ালিফাই করেছে। এই তিনজনকে নিয়ে তো ইলেকশন করা সম্ভব না। তখন আমি বাধ্য হয়ে চিঠিটা দিয়েছিলাম।’ বিসিবির দায়িত্ব নেওয়ার শুরুতে দীর্ঘ মেয়াদে বা আসন্ন নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন বুলবুল। পরবর্তীতে সেই সিদ্ধান্ত বদলে কাউন্সিলর হওয়ার মাধ্যমে তিনি আবারও সভাপতি পদে নির্বাচনের পথে হাঁটছেন।
এদিকে গত শনিবার রাত পর্যন্ত বিসিবি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সংখ্যা ছিল ১৯ জন। নির্বাচনের আগের দিন সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০। জামালপুর জেলা থেকে কাউন্সিলর হয়ে ঢাকা বিভাগে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদোয়ান। তবে নির্বাচনের আগেরদিন তিনিও আজ সরে দাঁড়ালেন। এমন অবস্থায় ঢাকা বিভাগ থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও নাজমুল আবেদিন ফাহিম। বুলবুলের আশা দেশের খেলা সব জেলাগুলোতে ছড়িয়ে দিতে চান তিনি। এ প্রসঙ্গে বুলবুল আজ বলেন, ‘আমরা যদি সত্যিই ক্রিকেট উন্নয়ন করতে পারি এই ঢাকার ১৭টা জেলা আছে। একটা জেলা হচ্ছে কিশোরগঞ্জ এবং সেখানে ক্রিকেট বোর্ডের ভোট চাইতে গিয়ে দেখলাম যে তারা যেভাবে ক্রিকেট নিয়ে এগোচ্ছে, তাদের যে স্বপ্ন, তাদের যে পরিকল্পনা, এটা যদি আর ১৬টা জেলায় আমরা ছড়িয়ে দিতে পারি, পরবর্তীতে ৬৪টা জেলায় ছড়িয়ে দিতে পারি, আমাদের ক্রিকেটের স্ট্রেংথ আমরা এখনও জানিই না।’ বিসিবি সভাপতি জানালেন, দেশের ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচন পৃথিবীর সেরা ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচন, ‘আমার কাছে মনে হয় আমাদের দেশের ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচন পৃথিবীর সেরা ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচন এবং এই নির্বাচনটা এমন একটা জায়গায় দেখা গিয়েছে যে, যেদিন বাংলাদেশ দুটো ম্যাচ, ছেলেদের ম্যাচও জিতেছে, টি-টোয়েন্টি আফগানিস্তানের সাথে, মেয়েদের দলও বিশ্বকাপে জিতেছে। কিন্তু আসল নিউজ হয়েছে নির্বাচনকে ঘিরে।’