
চলতি বছরেই মাঠে গড়াচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দ্বাদশ আসর। ২৪ ডিসেম্বর মিরপুরে হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। ২৬ ডিসেম্বর সিলেট স্টেডিয়ামে হবে বিপিএলের প্রথম ম্যাচ। তার আগে দল গোছাতে আনুষ্ঠানিক মাঠে নামছে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। আজ রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে এবারের আসরের নিলাম অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরইমধ্যে নিলামের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সেই তালিকায় রাখা হয়নি ফিক্সিংয়ে অভিযুক্ত সাতজন ক্রিকেটারকে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকে জানানো হয়েছিল, ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকা অভিযুক্তদের বাদ দিয়ে করা হবে এবারের বিপিএল নিলামের চূড়ান্ত তালিকা। অবশ্য অভিযুক্ত ক্রিকেটারদের নাম জানানো হয়নি। বিসিবি আনুষ্ঠানিকভাবে সেই নামগুলো সামনে না আনলেও চূড়ান্ত তালিকায় পরিষ্কার হয়ে গেছে, কোন ক্রিকেটারদের গায়ে লেগেছে ফিক্সিংয়ের কালি। স্থানীয় ৭ ক্রিকেটারকে ছেঁটে ফেলে এবারের বিপিএল নিলামের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রাথমিক তালিকা থেকে বাদ পড়া এই তালিকায় সবচেয়ে বড় নাম এনামুল হক বিজয় ও মোসাদ্দেক হোসেন। বাকি পাঁচজন হলেন- আলাউদ্দিন বাবু, আল আমিন হোসেন, শফিউল ইসলাম, নিহাদুজ্জামান ও আরিফুল হক। অবশ্য এদের ফিক্সিংয়ের অভিযোগের কারণেই বাদ দেয়া হয়েছে কি না, বিসিবি নিশ্চিত করেনি।
বিপিএল ফিক্সিংয়ে অভিযুক্ত ক্রিকেটারদের ওপর বড় শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে। আইসিসির অভিযোগ আমলে নিয়ে ঘটনার তদন্তে নামে বিসিবি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে বড় শাস্তি পেতে পারেন দেশের ৭ ক্রিকেটার। বিপিএলের ফিক্সিং ইস্যু নিয়ে লম্বা সময় তদন্ত শেয়ে ৯০০ পাতার রিপোর্ট বিসিবিতে জমা দেন আইসিসির পরামর্শক অ্যালেক্স মার্শাল। তার পরামর্শেই অভিযুক্তদের শাস্তি দেওয়া হবে। এরই ধারাবাহিকতায় এবারের বিপিএলে অভিযুক্তদের ছেঁটে ফেলা হয়েছে। নিলাম থেকে বাদ পড়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় দলের খেলোয়াড় এনামুল হক বিজয়। একটি গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, আমি শুধু ড্রাফটটা দেখেছি। বিসিবি থেকে কোনো ফোন আসেনি, আমি ফোন দিয়েছি ৫-ছয়জনকে।
কেউ আমাকে কোনো কিছু জানায়নি, ফোনও রিসিভ করেননি। শুধু আমি ড্রাফটটা থেকে নিজের নামটা দেখলাম, (সেখানে) নাই।’
ফিক্সিং ইস্যু নিয়ে বিজয় বলেন, তার মানে তো আমি দোষী, ব্যাপারটা তাই আসলো। কোনো এভিডেন্স ছাড়া আপনি আমার নাম প্রত্যাহার করে দিচ্ছেন। কোনো প্রকার নোটিশ ছাড়া, এটা আসলে অবাক করার বিষয় এবং অসম্মানের।’ সন্দেহের ভিত্তিতে ক্রিকেটারদের বাদ দেয়ার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিজয় বলেন,‘ তাদের কেন বাদ দেয়া হলো, শুধু একটা অভিযোগের ভিত্তিতে? সন্দেহের ভিত্তিতে কীভাবে তাদের বাদ দেওয়া হয় সেটাই প্রশ্ন। এ নিয়ে তাদের (বিসিবি) উত্তরটা জানার পর আমি পদক্ষেপ নিতে পারব।’ তিনি আরও বলেন, আসলে ঘটনাটা কী ঘটছে! আমি খুলনা থেকে ঢাকায় আসতেছি। আসার পর বিস্তারিত শুনতে পারব। আমার নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য সর্বোচ্চ যতটুকু পর্যন্ত যাওয়া যায় আমি যাব।
এদিকে ৭ ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়ার ব্যাখ্যা দিয়েছে বিপিএলের গভর্নিং কাউন্সিল। গতকাল সন্ধ্যায় পাঠানো এক বিবৃতিতে বিসিবি জানিয়েছে, ‘স্থানীয় খেলোয়াড়দের তালিকা থেকে কয়েকজনের নাম অনুপস্থিত থাকা নিয়ে ওঠা বিভিন্ন প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিতে চায় বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল। চলতি মাসের শুরুতে বিসিবি সভাপতি স্বাধীন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন গ্রহণ করেন। এর পর সম্ভাব্য দুর্নীতিসংক্রান্ত সব বিষয় বোর্ডের নবগঠিত ইন্টেগ্রিটি ইউনিটের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ইউনিটটির তত্ত্বাবধান করছেন স্বাধীন চেয়ারম্যান অ্যালেক্স মার্শাল। ইন্টেগ্রিটি ইউনিট সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করে এবং কোনো বিষয়ে যেন হস্তক্ষেপ না থাকে, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব তাদের।’
এর আগে বিপিএল স্বচ্ছ ও বিতর্কমুক্ত আয়োজনের লক্ষ্যে ফিক্সিংয়ে জড়িত ক্রিকেটারদের বাইরে রাখার ঘোষণা দিয়েছিল বিসিবি। নিলামের আগের দিন তারই কিছুটা বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে। বিসিবি বলছে, ‘নিলামের আগে বিসিবি দুর্নীতির সব অভিযোগ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছে। ১২তম মৌসুমের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে লিগের সুরক্ষা আরও জোরদার করতে কী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, সে বিষয়ে গভর্নিং কাউন্সিল ইন্টেগ্রিটি ইউনিটের স্বাধীন চেয়ারম্যানের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করে। সেই পরামর্শের ভিত্তিতে কয়েকজন ব্যক্তি, যার মধ্যে খেলোয়াড়ও রয়েছেন, তারা এবারের আসরে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ পাননি।’
এসব ক্রিকেটারের বিপিএল ছাড়া অন্য টুর্নামেন্টে খেলতে অসুবিধা নেই বলেও জানিয়েছে বিসিবি, ‘এটি শুধুমাত্র বিপিএলের জন্য গৃহীত একটি বিশেষ ব্যবস্থা, যার লক্ষ্য তদন্ত প্রক্রিয়ার ন্যায্যতা বজায় এবং লিগের সততা রক্ষা করা। এই সিদ্ধান্ত বিসিবির অধীনে পরিচালিত অন্য কোনো ঘরোয়া প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। ব্যক্তিগত কিছু বিষয় নিয়ে জনমনে আগ্রহ আছে জানি। তবে ইন্টেগ্রিটি ইউনিটের অধীনে কোনো পর্যালোচনা বা তদন্ত চলমান থাকাবস্থায় সংশ্লিষ্ট কাউকে নিয়ে মন্তব্য করা উচিত নয়।’ প্রসঙ্গত, নিলামের জন্য দেশীয় ক্রিকেটারদের চূড়ান্ত তালিকায় সবমিলিয়ে ১৫৮ জনের জায়গা হয়েছে। সেখান থেকে এনামুল হক বিজয়, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতসহ আলাউদ্দিন বাবু, মিজানুর রহমান, নিহাদণ্ডউজ্জামান, সানজামুল ইসলাম, মনির হোসেন খান ও শফিউল ইসলাম-মোট আটজন ক্রিকেটারের নাম বাদ পড়েছে।