
হামজা চৌধুরী, সামিত সোমদের আগমন এবং আফঈদা খন্দকার ও ঋতুপর্ণাদের এশিয়ান কাপের মূলপর্বে উত্তরণ ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে। এবার বালাদেশের ফুটবলের সঙ্গী হতে এবং ফুটবল উন্নয়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। তবে তার আগে সব ধরনের সুযোগ, সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ খতিয়ে দেখবে তারা। গতকাল রোববার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনে এক্সিকিউটিভ কমিটি, নারী উইং এবং নারী রেফারিদের সঙ্গে একটি মতবিনিময় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূত মাইকেল মিলার। সেখানে মূলত দুই পক্ষ একে অন্যের সঙ্গে ধারণা শেয়ার করে। সামনের দিনে ইইউকে স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তাব দেবে বাফুফে। মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে আমাদের নির্বাহী কমিটির সঙ্গে, বিশেষ করে আমাদের নারী টিম ম্যানেজার এবং নারী রেফারিদের সঙ্গে মতবিনিময় হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি মিলারের সঙ্গে। আজ মূলত আমরা একটা মতবিনিময় সভা করলামণ্ডআইডিয়াস এক্সচেঞ্জ। (উভয় পক্ষের) লক্ষ্য একই জায়গায় বাংলাদেশের ফুটবল উন্নয়নে সহযোগিতা করা। বাংলাদেশের ফুটবলকে এগিয়ে নেওয়া।’ সামনের দিকে ইউকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবও দেবে বাফুফে।
তাবিথ আউয়াল জানালেন, ‘আমরা সামনের দিকে একটা প্রস্তাব দেব। এই প্রস্তাবের ওপরে আমাদের ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্তৃপক্ষর বিবেচনা করবে কীভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করা যায়। কিন্তু একটা পর্যায়ে আমরা চাই যে অতি দ্রুত একটা পার্টনারশিপে চলে আসতে। আমরা সবাই জানি, ইউরোপ হলো দ্য হোম অ্যান্ড অরিজিন অফ ফুটবল। আর আমাদের বর্তমান হেড অফ ডেলিগেশন যিনি এসেছেন, তার বাড়ি কিন্তু বেলজিয়াম। তো আমাদের হয়তো পরবর্তী বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের পক্ষ নিতে হতে পারে (সমর্থন দিতে হতে পারে)।’
সামনেই বিশ্বকাপ ফুটবল। এটাকে সামনে রেখে তাবিথ আউয়াল বলেছেন, ‘আগামীতে বিশ্বকাপ আসছে-সবকিছু এগিয়ে নেওয়ার সঙ্গে আমরা মনে করছি এটাই সঠিক সময় ভবিষ্যতের জন্য পার্টনারশিপের। তবে এটা মত বিনিময় ছিল। একটু সময় লাগবে আমাদের একটা কনক্রিট জায়গায় আসতে।’ ইউরোপিয় ইউনিয়ন দেশে অনেক কাজে সম্পৃক্ত। তাবিথ আউয়াল তা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘প্রথমত তারা শেয়ার করেছেন যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যে পুরা বাংলাদেশকেই তাদের ভালো লাগছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিন্তু অনেক সামাজিক জায়গায় উন্নয়নমূলক কাজ করছে, সোশ্যাল অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম, সেফটি প্রোগ্রাম, ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম। এখন তারা মনে করছেন, স্পোর্টসে আসার নতুন একটা অ্যাঙ্গেলে বাংলাদেশকে উন্নয়নমূলক জায়গায় নিয়ে যেতে পারেন।’
বাফুফের ভিশনও ইউর ভালো লেগেছে বলে জানালেন বাফুফে সভাপতি, ‘তাদের ভালো লেগেছে যে আমাদের বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের একটা গঠনমূলক ভিশন আছে, একটা এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে এবং কিছু কিছু সাফল্যের গল্প আছে। এই সবগুলা কিন্তু সাহায্য করে ইউরোপীয় ইউনিয়নে আল্টিমেটলি যারা ডিসিশন মেকার তাদের কনভিন্স করার জন্য এবং তাদের সহজ করে বুঝানোর জন্য। তারা বিশ্বাস করে যে খেলাতে একটা অবদান রাখলে খেলার মাধ্যমেই পুরো বাংলাদেশের একটা গুডউইল তারাও তৈরি করতে পারবে দুই সংস্হার মধ্যে।’ বাংলাদেশে ছেলে ও মেয়ে ফুটবলে কোনও ভেদাভেদ নেই। বাফুফে সভাপতি বললেন, ‘আমরা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিন্তু ডিসক্রিমিনেট করি না জেন্ডারের মাধ্যমে। আমরা ছেলে ও মেয়েদের প্রোগ্রামগুলোকে সমান সুবিধা দিচ্ছি, সমান সুবিধা দেব ছেলে এবং মেয়েদের জাতীয় দলকে। সমানভাবে আমরা রিসোর্স প্ল্যানিং ও ইনভেস্টমেন্টগুলোকে বিবেচনা করব সামনের দিকে।’ এরপর নিজেদের প্রস্তাব নিয়ে বাফুফে সভাপতি জানালেন, ‘আজ যারা নির্বাহী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত আছেন, সবার সঙ্গে বসে মিলে আমরা একটা প্রস্তাব রেডি করব। আমরা তখন বিবেচনা করব কোনটা আমাদের শর্ট টার্ম এবং লং টার্ম প্রগ্রেসের জন্য সহজ হবে এবং সেভাবে আমরা প্রোগ্রামটা ডেভেলপ করব। যখন করব আমরা আপনাদেরকে জানিয়ে দেব। তবে এর মধ্যে কৌশলগত দিক নিয়েই বেশি থাকবে।’
পরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা এখানে এসেছি, বাংলাদেশের ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোকে স্পন্সর করার সুযোগগুলো খতিয়ে দেখতে-এটাই বড় খবর।’ আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু ছাড়াও দেশের হালচাল নিয়েও কথা বলেন মিলার, ‘আজকের আলোচনা ছিল প্রাথমিক। তবে আমরা যখন আপনাদের দেশকে দেখি, তখন দেখি এটি একটি অত্যন্ত জটিল সময় পার করছে, নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে, নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা আপনি-আমি গত সপ্তাহে, সপ্তাহান্তে দেখেছি এবং আগামী দিনগুলোতেও দেখব।’
বাংলাদেশের ইতিবাচক দিক নিয়েও কথা বলেন রাষ্ট্রদূত, ‘একই সঙ্গে আমাদের এই দেশের ইতিবাচক দিকগুলোর কথাও বলতে হবে- কীভাবে তরুণরা নিজেদের জন্য ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারে, দেশ কীভাবে উন্নত ও এগিয়ে যেতে পারে এবং কীভাবে বিশ্বমানের প্রতিযোগিতায় নিজেদের ক্রীড়া দলগুলোর পেছনে এক জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ সমর্থন গড়ে তুলতে পারে।’
ফুটবলের অবকাঠামো নিয়েও দুপক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। মিলার তা তুলে ধরে বলেছেন, ‘আজ সকালেই আমরা এ বিষয়ে (অবকাঠামোগত) আলোচনা করেছি। ফেডারেশনের কাছ থেকে একটি প্রস্তাবের অপেক্ষায় থাকব, এরপর আমরা সে অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানাব। বাফুফের জন্য আমাদের কাছে রেডিমেড কোনো সমাধান নেই। তবে আমরা আলোচনা ও সম্পৃক্ততায় আনন্দিত এবং কীভাবে বাস্তব পরিবর্তন আনা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করার জন্য নিজ নিজ ফেডারেশনগুলোর সঙ্গে বাফুফেকে যুক্ত করে দিতে প্রস্তুত।’