প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৫
একা নামাজ পড়ার চেয়ে জামাতে নামাজ আদায় করার গুরুত্ব অনেক বেশি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জামাতে নামাজ আদায় করা একাকী নামাজ আদায় করার চেয়ে ২৭ গুণ বেশি সওয়াবের। (মুসলিম : ৬৪০)। জামাতে নামাজ পড়া ওয়াজিবও বটে। বিনা কারণে জামাত ছেড়ে দেওয়া বড় পাপ। আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, আর তোমরা নামাজ কায়েম করো ও জাকাত দাও এবং আর যারা রুকু দেয় তাদের সঙ্গে রুকু দাও। (সুরা বাকারা : ৪৩)।
ইসলাম সুন্দরের ধর্ম। পবিত্র ধর্ম। ইসলাম মুসলমানের জীবনকে সামগ্রিকভাবে সুন্দর-সুশৃঙ্খল করে। প্রতিটি মুসলমানকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনুসরণ ও অনুকরণে ইবাদত করার তাগিদ করেছে ইসলাম। নবীজির অনুসরণ ও অনুকরণে মুসলমানদের ইবাদত হয়ে উঠবে সুগঠিত, প্রাণবন্ত ও দৃষ্টিনন্দন। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো নামাজে মুসলমানদের কাতার সোজা করা। এ কারণেই নামাজ শুরু করার আগে সারিগুলো সোজা করে নেওয়া ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অন্যতম সুন্নাহ। এ দায়িত্ব ইমাম ও মুক্তাদি উভয়ের। সবাইকে নিজ দায়িত্বে কাতার সোজা করে নিতে হবে। এ কাজে রাসুলুল্লাহ (সা.) মুসলমানদের বারবার উদ্বুদ্ধ করেছেন। কখনো উৎসাহ দিয়েছেন, আবার কখনো এর ক্ষতি ও ভয়াবহতা বর্ণনা করে সাবধান করেছেন। নুমান ইবনে বশির (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা অবশ্যই কাতার সোজা করে নেবে, তা না হলে আল্লাহতায়ালা তোমাদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি করে দেবেন।’ (বোখারি : ৬৮৫)।
আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, ‘নামাজের ইকামত হচ্ছে এমন সময় রাসুল (সা.) আমাদের দিকে মুখ করে তাকিয়ে বললেন, ‘তোমরা কাতারগুলো সোজা করে নাও আর মিলে দাঁড়াও। কেননা, আমি আমার পেছন দিক থেকেও তোমাদের দেখতে পাই।’ (বোখারি : ৬৮৭)।
নামাজের কাতারে মুসল্লিদের সমান্তরালভাবে দাঁড়াতে হবে। আগেপিছে হওয়া যাবে না। আবু মাসউদ (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) নামাজের সময় আমাদের কাঁধ স্পর্শ করে বলতেন, ‘তোমরা সমান্তরালভাবে দাঁড়াও এবং আগেপিছে হয়ো না। অন্যথায় তোমাদের অন্তরেও বিভেদ সৃষ্টি হবে।
আর তোমাদের মধ্যে যারা অধিক প্রজ্ঞাবান ও জ্ঞানী, তারা আমার কাছাকাছি দাঁড়াবে। এরপর দাঁড়াবে যারা তাদের নিকটবর্তী। এরপর দাঁড়াবে যারা তাদের নিকটবর্তী। হাদিসটি বলার পর আবু সাইদ (রা.) বলেন, তাই তো আজকাল তোমাদের মধ্যে চরম বিভেদ বিরাজ করছে।’ (মুসলিম : ৪৩২)।
জাবের ইবনে সামুরা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ফেরেশতারা তাদের প্রতিপালকের কাছে যেভাবে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ায়, তোমরা সেভাবে দাঁড়াবে না। আমরা জিজ্ঞাসা করি, ‘ফেরেশতারা তাদের প্রতিপালকের কাছে কীভাবে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ায়?’ তিনি বলেন, ‘তারা সবার আগে প্রথম কাতার পূরণ করে, এরপর পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয় কাতার ইত্যাদি পূর্ণ করবে এবং তারা কাতারে দাঁড়ানোর সময় পরস্পর মিলে দাঁড়ায়।” (আবু দাউদ : ৬৬১)।
জামাতে নামাজ আদায়কারী মহান আল্লাহর হেফাজতে থাকেন। হযরত উমামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিন ব্যক্তি মহান আল্লাহর জিম্মায়, তার মধ্যে মসজিদে গমনকারী ব্যক্তি। সে আল্লাহর জিম্মায় থাকে ; এমনকি তার মৃত্যু হলে তাকে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। অথবা তাকে সওয়াব বা গনিমত প্রদান করে (বাড়িতে) ফিরিয়ে দিবেন। (আবু দাউদ : ২১৩৩)।
মসজিদে জামাতে নামাজ আদায়ে অধিক সওয়াব। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় ঘরে বা বাজারের নামাজের চেয়ে ২৫ গুণ বেশি সওয়াবের অধিকারী বানায়। আর এটা এভাবে যে, যখন সে অজু করে খুব সুন্দর করে । এবং (নামাজের জন্য) মসজিদের উদ্দেশে বের হয়।
এ অবস্থায় সে যতবার পা ফেলে, প্রতিবারের পরিবর্তে একটি করে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি করে গুনাহ ক্ষমা করা হয়। তারপর যখন সে নামাজ আদায় করতে থাকে, ফেরেশতাগণ তার জন্য রহমতের দোয়া করতে থাকেন। যতক্ষণ সে নামাজের জায়গায় বসে থাকে ফেরেশতারা তার জন্য এই বলে দোয়া করেন, হে আল্লাহ! এই ব্যক্তির ওপর রহমত নাজিল করুন। হে আল্লাহ! এর ওপর দয়া করুন। আর যতক্ষণ সে নামাজের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, ততক্ষণ সে নামাজের অর্ন্তভুক্ত থাকে।’ (বোখারি ও মুসলিম : ৬১১)।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন, সাত ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ ছায়া দান করবেন ওই দিন, যেদিন মহান আল্লাহর ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না। তাদের মধ্যে একজন হল ঐ ব্যক্তি যার হৃদয় মসজিদের সাথে লাগানো। (মুসলিম : ৬২০)।
ইবনু উম্মে মাকতুম (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন রাসুল (সা.) মসজিদে মুসল্লি কম দেখে বললেন, আমার ইচ্ছা হয় যে, আমি লোকদের জন্য কাউকে ইমাম নিযুক্ত করে বেরিয়ে যাই। অতঃপর যে জামাতে নামাজ আদায় না করে বাড়িতে অবস্থান করছে তাকে জ্বালিয়ে দেই। তখন ইবনু উম্মে মাকতুম (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার বাড়ি ও মসজিদের মধ্যে খেজুর ও বিভিন্ন গাছের বাগান আছে। সবসময় আমি এমন কাউকেও পাই না যে আমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে আসবে। আমাকে কি বাড়িতে নামাজ আদায়ের সুযোগ দেয়া যায়? তিনি বললেন, তুমি কি ইকামত শুনতে পাও? সে বলল, হ্যাঁ। রাসুল (সা.) বললেন, তাহলে নামাজে এসো।’ (আহমাদ : ১৫৫৩০)।